E-Paper

কমিশনের বার্তার পরেও ভোগান্তি সেই চলছেই

ফতেমা বিবির মেয়ে সুফিয়া নস্কর জানান, বিএলও তাঁদের শুনানি কেন্দ্রেই আসতে বলেছিলেন। বিএলও মন্তব্য করেননি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:১০
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বয়সের ভার এবং পায়ের সমস্যায় ঠিক মতো হাঁটতে পারেন না। মঙ্গলবার এসআইআরের শুনানিতে অটো থেকে নেমে হাঁটতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে গেলেন হাওড়ার উলুবেড়িয়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নবতিপর বৃদ্ধা ফতেমা বিবি। আশপাশের লোকজন তাঁকে তুলে চেয়ারে বসান। সেখানেই তাঁর নথিপত্র যাচাই হলেও প্রশ্ন ওঠে, কেন বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে শুনানি করা হল না! শুধু একটি ঘটনা নয়, গোটা রাজ্যের নানা দৃশ্য বুঝিয়ে দিয়েছে সোমবার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ৮৫ বছরের ঊর্ধ্বে, অসুস্থ বা বিশেষ ভাবে সক্ষমদের বাড়িতে গিয়ে শুনানির আদেশনামা প্রকাশ করলেও, তেমন ব্যবস্থাপনা কার্যকর হয়েছে হাতেগোনা জায়গায়।

ফতেমা বিবির মেয়ে সুফিয়া নস্কর জানান, বিএলও তাঁদের শুনানি কেন্দ্রেই আসতে বলেছিলেন। বিএলও মন্তব্য করেননি। তবে উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক (ইআরও) মানসকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘কমিশনের নির্দেশিকা সোমবার সব বিএলও-র কাছে পৌঁছে দিয়েছি। কেন তবু বৃদ্ধাকে আনা হল, খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ একই অভিযোগ মিলেছে নদিয়ার তেহট্ট-১ ব্লক অফিসে। শুনানির লাইনে ছিলেন ৮৫ বছরের পদ্মরানি বিশ্বাস। তাঁর ছেলে গৌতমের দাবি, “বিএলও-র কথাতেই মাকে নিয়ে ব্লক অফিসেআসতে হয়েছে।”

বর্ধমানের মেহেদিবাগানে ঋতু রজক পা ভেঙে দশ মাস ধরে শয্যাশায়ী। এ দিন পড়শি-পরিজনেরা তাঁকে টোটোয় করে শুনানি কেন্দ্রে আনেন। ঋতু বলেন, “শুনানিতে না এলে, না কি আর ভোট দিতে পারব না! ভোট দিতে না পারলে সরকারি সুবিধা পাব কি না, সে আতঙ্কেই কষ্ট করে এসেছি।” হুইল চেয়ারে মালদহ মডেল মাদ্রাসায় শুনানিতে এ দিন এসেছিলেন রবি রায়। বছর দশেক আগে কোমর ভেঙে যাওয়ার পর থেকে শয্যাশায়ী। ক্যাথিটার ঝুলিয়ে হুইল চেয়ার ঠেলে তাঁকে শুনানিতে আনা হয়। পোলিয়োতে দু’টি পা নিষ্ক্রিয়। ট্রাইসাইকেল চালিয়ে মঙ্গলবার সাত কিলোমিটার দূরে বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর ব্লকে শুনানিতে এসেছিলেন লাউবাগানের কাসিম শেখ। ওই ব্লক অফিসের দোতলায় শুনানি হচ্ছে শুনে হাঁটু ঘষে সিঁড়ি বেয়ে ওঠেন। শুনানির দেরি রয়েছে শুনে ফের ওই ভাবে নীচে নামেন। পরে একতলায় শুনানির ব্যবস্থা হয়। পুরুলিয়া শহর থেকে ছ’কিলোমিটার দূরের ডাবর বলরামপুরের একটি নিবাসের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পুরুলিয়া ২ ব্লক অফিসে শুনানির জন্য নিয়ে আসেন স্থানীয় এক যুবক। তাঁদের নানা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। এক জনের কৃত্রিম পা নিয়ে চলাফেরায় সমস্যা হয়। কষ্ট করেই শুনানিতে পৌঁছন তাঁরা।

কেন্দ্রীয় কমিশনের নির্দেশের পরেও এমন পরিস্থিতি হল কেন? ভুক্তভোগীরা এ দিন নির্বাচন কমিশন এবং জেলা প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে প্রশাসন সূত্রের দাবি, বিএলও-দের এ ধরনের ভোটারদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে, যাঁদের বাড়িতেই শুনানির ব্যবস্থা হবে। সে তালিকা জমা পড়ার আগেই, এ দিন শুনানি কেন্দ্রে চলে আসেন ইতিমধ্যে নোটিস পাওয়া ভোটারেরা। তবে তালিকা কবে হবে, তত দিন শুনানিকেন্দ্রে না আসার কথা কে জানাবে, তার সদুত্তর নেই।

তবে কোচবিহারের দিনহাটায়, পূর্ব বর্ধমানের কালনা ১ ব্লকে, মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে, হুগলির আরামবাগ মহকুমার চারটি বিধানসভায়, জলপাইগুড়ি সদরে বাড়িতে গিয়ে শুনানি হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের হোমে শুনানি হয় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ১৫ ভোটারের।

পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের খাসবাড় গ্রামের ১০২ বছরের বৃদ্ধা গান্ধারী জয়ন্তীর নামে শুনানির নোটিস গিয়েছে। বিডিও অভীক বিশ্বাসের আশ্বাস, “ওই বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে শুনানি হবে।” যদিও ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকা গান্ধারীর ক্ষোভ, “কবে থেকে ভোট দিচ্ছি। এখন আবার নাম কেটে দিয়েছে, বলছে! আমার নাম তোলার দরকার নেই।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Voter List West Bengal SIR

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy