স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বাদই পড়লেন ‘দাগি’ বা চিহ্নিত অযোগ্যেরা! রাজ্য পাশে দাঁড়ালেও শেষরক্ষা হল না। কলকাতা হাই কোর্টে বৃহস্পতিবারের শুনানিতে এসএসসির নতুন বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করল না ডিভিশন বেঞ্চ।
বৃহস্পতিবার আদালতে বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘দাগি’ অযোগ্যেরা নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। ইতিমধ্যে ‘দাগি’ যাঁরা আবেদন জমা দিয়েছেন, তা-ও বাতিল করতে হবে। এ বিষয়ে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে হস্তক্ষেপ করা হবে না। অর্থাৎ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। এ বিষয়ে গত ৩০ মে এসএসসি যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল, তাকে সামনে রেখেই নিয়োগপ্রক্রিয়া চলবে।
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, এসএসসির বিজ্ঞপ্তি নিয়ে গত সোমবার উচ্চ আদালতে বিচারপতি ভট্টাচার্য নির্দেশ দিয়েছিলেন, নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ‘চিহ্নিত’ অযোগ্যদের সুযোগ দেওয়া হবে না। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য এবং এসএসসি। ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে, এসএসসি কেন ‘দাগি’দের পাশে দাঁড়াচ্ছে? উত্তরে এসএসসি-র আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যুক্তি দেন, ‘দাগি’দের চাকরি বাতিল হয়েছে, বেতনও ফেরত দিতে হচ্ছে। তা হলে তাঁদের কেন পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না? একই দোষের জন্য কেন দু’বার ‘শাস্তি’ পেতে হবে তাঁদের?
রাজ্য ও এসএসসির তরফে আরও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় কারা যোগ দিতে পারবেন আর কারা পারবেন না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। প্যানেল-বহির্ভূত, মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেলে এবং সাদা খাতা জমা দিয়ে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের ‘দাগি’ বলে চিহ্নিত করেছিল হাই কোর্ট। পরে সুপ্রিম কোর্টও হাই কোর্টের সেই নির্দেশকে মান্যতা দেয়। তার বাইরে নতুন করে আর কেউ ‘দাগি’ বলে চিহ্নিত হননি। কিন্তু নতুন নিয়োগে দাগিরা যোগ দিতে পারবেন কি না, তা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কোথাও বলা নেই। তাই এ বিষয়ে বিশদে বুঝতেই ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে এসএসসি। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তও সওয়াল করেন, সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সরকারি চাকরি ‘দাগি’ অযোগ্যদেরও মৌলিক অধিকার। নিয়োগে যোগ দিতে না দিলে তাঁদের ভবিষ্যতের ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ হয়ে যাবে। যদিও সেই যুক্তি ধোপে টেকেনি। বুধবারের শুনানিতেও ডিভিশন বেঞ্চের বিস্তর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজ্য এবং এসএসসিকে। শেষমেশ সেই মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশই বহাল রাখল ডিভিশন বেঞ্চ।