Advertisement
E-Paper

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিমানে জ্বালানি কি কম ছিল, তদন্তে ডিজিসিএ

পটনা থেকে ফেরার পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিমানে জ্বালানি কম ছিল কি না এবং তা থেকে বিপদ হতে পারত কি না, খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামল ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)। ঘটনাটি নিয়ে বৃহস্পতিবার দিনভর উত্তাল ছিল সংসদের দুই কক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৯

পটনা থেকে ফেরার পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিমানে জ্বালানি কম ছিল কি না এবং তা থেকে বিপদ হতে পারত কি না, খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামল ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)। ঘটনাটি নিয়ে বৃহস্পতিবার দিনভর উত্তাল ছিল সংসদের দুই কক্ষ।

তৃণমূলের অভিযোগ, কলকাতার আকাশে এসে জ্বালানি ফুরিয়ে এসেছিল ইন্ডিগোর বিমানের। যা থেকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারত। বিমানটি ভেঙে যেতে পারত। এর পিছনে চক্রান্ত রয়েছে বলে দাবি করেছে তৃণমূল। দলের সাংসদ এবং সংসদের পরিবহণ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মুকুল রায় এ নিয়ে বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজুকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করার আবেদনও জানিয়েছেন তিনি। মুকুলবাবু লিখেছেন, ‘‘আশা করি মাসখানেকের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট স্থায়ী কমিটির কাছে পৌঁছবে।’’ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে চিঠিও দিয়েছেন মুকুল।

এই তোলপাড়ের মধ্যে কলকাতা বিমানবন্দরে বুধবার সন্ধেয় কর্তব্যরত এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) অফিসারকে শুক্রবার সকালে দিল্লি ডেকে পাঠানো হয়েছে। ঠিক হয়েছে, এই ঘটনার তদন্ত পুরোটাই খোদ দিল্লির ডিজিসিএ-এর উচ্চপদস্থ কর্তারা করবেন।

সূত্রের খবর, শুক্রবার দিল্লিতে হাজির থাকার কথা ইন্ডিগো-র পাইলটেরও। এ ছাড়া কলকাতায় নামার লাইনে ইন্ডিগো-র আগেই যে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ছিল, সেই পাইলটকেও ডেকে পাঠানো হতে পারে। বুধবার সন্ধ্যায় এটিসি-র সঙ্গে ইন্ডিগোর পাইলটের কথাবার্তার টেপ, ইন্ডিগোর বিমানের ককপিট ডেটা রেকর্ডার চেয়ে পাঠানো হয়েছে দিল্লি থেকে। এটিসি-র টেপ বৃহস্পতিবারেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে দিল্লিতে।

এ দিন লোকসভায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যসভায় ডেরেক ও ’ব্রায়েন বিমান বিভ্রাটের প্রসঙ্গ তুললে বিরোধী দলের প্রায় সকলেই তাঁদের সমর্থন করেন। কংগ্রেসের লোকসভার নেতা মল্লিকার্জুন খড়গের দাবি, মমতা নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। এখন তাঁর জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে বিমান অবতরণের প্রয়োজন ছিল। বসপা নেত্রী মায়াবতী বলেন, দলমতনির্বিশেষে সবার উচিত এই ঘটনার তদন্ত দাবি করা। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যসভায় সরব ছিল সিপিএমও।

বুধবার মমতার বিমান কলকাতার আকাশে কিছুটা চক্কর কাটার পরে জ্বালানি কমে আসার বার্তা পাঠান পাইলট। তখন এটিসি ইন্ডিগো-র আগে থাকা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানকে জিজ্ঞেস করে, ইন্ডিগোকে আগে নামতে দেবে কি না। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান জানায়, তার জ্বালানি আরও কমের দিকে। ফলে তাকেই আগে নামার সুযোগ দেওয়া হয়। মমতার বিমান নামার পরে দেখা যায়, রানওয়ের অল্প দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে দমকল ও অ্যাম্বুল্যান্স। বিপদের আশঙ্কা থাকাতেই তাদের মজুত রাখা হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্ন ওঠে তখনই।

কলকাতা বিমানবন্দরের অফিসারদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, বিষয়টির পিছনে রয়েছে পরিভাষাগত ভুল বোঝাবুঝি। কী রকম? এ দিন রাজ্যসভায় ডেরেক ও ব্রায়ান বলেছেন, মমতার বিমানটি ‘শর্ট অব ফুয়েল’ ছিল। কিন্তু বিমানবন্দর সূত্রের বক্তব্য— ‘শর্ট অব ফুয়েল’ নয়, ইন্ডিগো-র পাইলট তাঁদের ‘লো-অন ফুয়েল’ বার্তা পাঠিয়েছিলেন। যার মানে হল, কলকাতার আকাশে চক্কর কাটার জন্য নির্দিষ্ট জ্বালানি কম রয়েছে। নামতে দেরি হলে উড়ে যেতে হবে রাঁচী বিমানবন্দরের দিকে। বৃহস্পতিবার ইন্ডিগোও জানিয়েছে, বিমানে রাঁচী বিমানবন্দরে পৌঁছনোর মতো জ্বালানি ছিল। বিপদের আশঙ্কা ছিল না। পাইলট শুধু এটিসি-কে জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে চক্কর কাটার জন্য ৮ মিনিটের জ্বালানি অবশিষ্ট রয়েছে।

বিমানবন্দর সূত্রে এও খবর, ইন্ডিগো-র সামনে থাকা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটিও ‘লো-অন ফুয়েল’ ছিল। বলেছিল, ৪ মিনিট চক্কর কাটার জ্বালানি রয়েছে। তাই তাকে নামার লাইনে পিছিয়ে দেওয়া যায়নি। ওই অফিসাররা আরও বলছেন, জ্বালানি পুরোপুরি ফুরিয়ে এলে এবং বিপদের আশঙ্কা তৈরি হলে পাইলটরা ‘লো-অন ফুয়েল’ নয়, বরং ‘শর্টেজ অব ফুয়েল’ বার্তা পাঠান। ‘ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং’ চান। তখন তাকে সবার আগে তড়িঘড়ি নামানো হয়। বুধবার ইন্ডিগোর বিমান তেমন পরিস্থিতিতে পড়েনি বা তেমন বার্তা পাঠায়নি বলেই বিমানবন্দর সূত্রের বক্তব্য।

তা হলে রানওয়ের কাছে দমকল-অ্যাম্বুল্যান্স ছিল কেন? বিমান সংস্থা ইন্ডিগোর দাবি, ‘‘পাইলট ‘লো অন ফুয়েল’ বললেও এটিসি অফিসার সেটাকে ‘শর্টেজ অব ফুয়েল’ ভেবে নিয়েছিলেন। তাই জরুরি অবতরণের জন্য রানওয়ের কাছে দমকল ও অ্যাম্বুল্যান্স তৈরি রাখা হয়েছিল।’’

কিন্তু কলকাতা এটিসি-র দায়িত্বে থাকা রিজিওনাল এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জয় জৈন বলেন, ‘‘এই অভিযোগ মিথ্যা। ওই সময়ে দৃশ্যমানতা কমে গিয়েছিল। নামার সময়ে যদি কোনও বিপদ হয়, তাই দমকল ও অ্যাম্বুল্যান্স মজুত রাখা হয়েছিল। কোনও জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’’

এ দিন সংসদে বিমানমন্ত্রী গজপতি রাজু-ও দাবি করেন, মমতার ওই বিমানে জ্বালানি কম ছিল (লো-অন ফুয়েল) ঠিকই। কিন্তু জরুরি অবতরণের জন্য অনুরোধ করেননি পাইলট। মমতার বিমান ওই অবস্থায় ৪০ মিনিট চক্কর কেটেছে বলে যে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল, তা-ও ঠিক নয়। বিমানটি ১৩ মিনিট চক্কর কেটেছে। বিমান প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্‌হা রাজ্যসভায় জানান, ইন্ডিগোর মতোই এয়ার ইন্ডিয়া ও স্পাইসজেটের বিমানও এটিসি-কে জানায়, জ্বালানি কম রয়েছে (লো-অন ফুয়েল)।

বিমানে কী কারণে জ্বালানি কম ছিল, দুই কক্ষেই বিরোধীরা সেই প্রশ্ন তোলেন। মন্ত্রীরা জানান, ডিজিসিএ-র মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনও বিমানে সেই পরিমাণ জ্বালানি মজুত রাখতে হবে, যাতে সেটি গন্তব্য বিমানবন্দরে পৌঁছে আকাশে অন্তত ৩০ মিনিট ধরে চক্কর কাটতে পারে এবং প্রয়োজনে নিকটবর্তী পরিবর্ত বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেই জ্বালানি বিমানে ছিল কি না, তা নিয়েই এখন ডিজিসিএ তদন্ত শুরু করেছে। বিমানবন্দর সূত্রে খবর, তিনটি বিমানের জ্বালানি একসঙ্গে কম হল কী ভাবে, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে আজ এমন মন্তব্যও করেন, তিনটি বিমানের জ্বালানি কম থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিমানে ছিলেন, সেটিকে জরুরি অবতরণ করানো দরকার ছিল। কারণ ভিভিআইপি থাকলে সেটিকে অগ্রাধিকার দেওয়াই নিয়ম। তবে এই মন্তব্য নিয়ে সরকার তো আপত্তি তোলেই, কংগ্রেসের মধ্যেও অসন্তোষ তৈরি হয়। অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হোন বা সাধারণ যাত্রী সকলের জীবনের মূল্যই সমান। খড়গের বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত নই।’’

DGCA CM Plane problem
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy