এক বার রেলগেট পড়লে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।
দীর্ঘদিনের যানজট সমস্যা মেটানোর জন্য উলুবেড়িয়ায় লেভেল ক্রসিংয়ের উপরে উড়ালপুল তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল বছর তিনেক আগে। অথচ, এত দিনে শুধুমাত্র হিসাব-নিকাশ আর নকশা তৈরি করা ছাড়া কাজ আর কিছুই হয়নি। জমি-জরিপের কাজটুকুও এগোয়নি। নির্মাণকাজ পুরোটাই করবে রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতর। রেল তার অংশের নির্মাণকাজের টাকা রাজ্য সরকারকে দিয়ে দেবে। কিন্তু কাজটি শুরু করতে গেলে প্রাথমিক ভাবে যে টাকার প্রয়োজন, তা-ই মিলছে না বলে মেনে নিয়েছেন পূর্ত (সড়ক) দফতরের এক পদস্থ কর্তা।
ওই কর্তার কথায়, “রাজ্যে আর্থিক সমস্যা চলতে থাকায় উলুবেড়িয়ার উড়ালপুলের জন্য টাকার সংস্থান করা যাচ্ছে না। টাকা চেয়ে ফাইল অর্থ দফতরে পাঠানো হয়েছে। টাকা এলেই কাজ শুরু হবে।” উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তথা পরিষদীয় সচিব পুলক রায় বলেন, ‘‘পূর্তমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি এ নিয়ে দ্রুত উদ্যোগী হতে।”
সাবেক পদ্ধতিতে যে ভাবে উড়ালপুল তৈরি হত, তাতে রেল তার নিজেদের অংশের নির্মাণ করত। রাজ্য সরকারের অংশের কাজ করত পূর্ত (সড়ক) দফতর। কিন্তু বছর তিনেক আগে রেল ও রাজ্য সরকার যৌথ ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় কোনও রেলওয়ে উড়ালপুল তৈরি করতে হলে সেই কাজের পুরোটা করবে রেল অথবা রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতর। অর্থাৎ, কোনও উড়ালপুল যদি রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতর করে তা হলে তার নির্মাণকাজে আর রেল হাত দেবে না। তবে, উড়ালপুলটি তৈরির যে খরচ হবে, তাতে রেলের অংশে যে কাজটি হবে তার খরচ রাজ্য সরকারকে দিয়ে দেবে রেল। বাকি টাকা বহন করবে রাজ্য। আবার রেল কোনও উড়ালপুল তৈরি করলে নির্মাণকাজে রাজ্য সরকার আর হাত দেবে না। কিন্তু রাজ্য সরকারের অংশে যেটুকু কাজ হবে সেই টাকা তারা রেলের হাতে তুলে দেবে।
নতুন পদ্ধতিতে নির্মাণকাজ হলে তার মান উন্নত হবে এবং কাজের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এ কথা চিন্তা করেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতর ও রেল সূত্রে জানানো হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হয় তখন ঝাড়গ্রাম এবং উলুবেড়িয়া এই দু’টি লেভেল ক্রসিংয়ের উপরে উড়ালপুল তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথাটি রেল ও রাজ্য সরকারের ভাবনায় ছিল। ফলে, নতুন পদ্ধতিতে উড়ালপুল তৈরির জন্য এই দু’টি লেভেল ক্রসিংকেই মডেল হিসাবে বেছে নেওয়া হয়। ঠিক হয়, ঝাড়গ্রামের উড়ালপুলটি তৈরি করবে রেল। উলুবেড়িয়ারটি তৈরি করবে রাজ্য সরকার।
এত দিনে ঝাড়গ্রামের কাজ অনেকটা এগিয়ে গেলেও উলুবেড়িয়ায় উড়ালপুল তৈরির কাজ পড়ে রয়েছে বিশ বাঁও জলে। অথচ, ওই উড়ালপুলের জন্য বহু বছর ধরে স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ওই উড়ালপুলের জন্য বাজেটে টাকাও বরাদ্দ করেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রামের উড়ালপুল তৈরির কাজ এগোচ্ছে। উলুবেড়িয়ার উড়ালপুলটি করার কথা রাজ্য সরকারের। তারা যখনই কাজ শুরু করুক না কেন রেলের তরফ থেকে কোনও অসুবিধা নেই।’’
এ দিকে, উড়ালপুলের অভাবে উলুবেড়িয়ায় লেভেল ক্রসিংয়ে যানজট দিনের পর দিন বাড়ছে। উলুবেড়িয়া দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগের অধীন। এই বিভাগে ঘন ঘন ট্রেন চলে। কলকাতার দিক থেকে উলুবেড়িয়া শহরের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ করতে হলে লেভেল ক্রসিং পেরোতেই হবে। মহকুমা সদর প্রশাসন, মহকুমা পুলিশ অফিসারের দফতর, থানা, আদালত সবই উলুবেড়িয়া শহরে। উলুবেড়িয়ার দিক থেকে গড়চুমুক বা গাদিয়াড়ার মতো পর্যটনকেন্দ্রে যাতায়াত করতে হলেও লেভেল ক্রসিং পার হতে হয়। যানজটে সব থেকে বিপাকে পড়েন রোগীরা। লেভেল ক্রসিং-এ দীর্ঘ ক্ষণ ধরে অ্যাম্বুল্যান্সগুলিকে আটকে থাকতে হয়। বিপত্তি হয় রেলযাত্রীদেরও। গাড়ি চলাচলের জন্য যখন লেভেল ক্রসিংয়ের গেট খুলে দেওয়া হয়, তখন ট্রেনগুলিকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
কিন্তু এখনও উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু না হওয়ায় লেভেল ক্রসিংয়ের যানজট থেকে মুক্তির কোনও আশাই দেখতে পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।
Chart...
পূর্তমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি, উড়ালপুল তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করতে উদ্যোগী হতে। বহু মানুষ এর ফলে উপকৃত হবেন।
পুলক রায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy