Advertisement
E-Paper

আঁধার ঘনালেই নাচ, টাকা ওড়াচ্ছে মাফিয়া

মুখগুলো পাল্টে-পাল্টে যায়। ছবিটা পাল্টায় না। ছবি ১) মাস কয়েক আগে দিল্লি রোডের একটি পানশালা থেকে সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে বেরিয়েছিলেন শাসকদলের এক ছাত্রনেতা। সঙ্গে থাকা বান্ধবী কার মোটরবাইকে উঠবেন, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া বাধে। পুলিশ যায়। পুলিশ দেখেই ছাত্রনেতা রেগে লাল। শুরু হয়ে যায় ধমক-চমক। হুগলির একাধিক মন্ত্রী-বিধায়কের নাম করে দেখে নেওয়ার হুমকিও বাদ যায়নি। পুলিশ অবশ্য শেষমেশ ছাত্রনেতাটিকে গ্রেফতার করে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০০:৫৯
অঙ্কন: সৌমিত্র বসাক।

অঙ্কন: সৌমিত্র বসাক।

মুখগুলো পাল্টে-পাল্টে যায়। ছবিটা পাল্টায় না।

ছবি ১) মাস কয়েক আগে দিল্লি রোডের একটি পানশালা থেকে সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে বেরিয়েছিলেন শাসকদলের এক ছাত্রনেতা। সঙ্গে থাকা বান্ধবী কার মোটরবাইকে উঠবেন, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া বাধে। পুলিশ যায়। পুলিশ দেখেই ছাত্রনেতা রেগে লাল। শুরু হয়ে যায় ধমক-চমক। হুগলির একাধিক মন্ত্রী-বিধায়কের নাম করে দেখে নেওয়ার হুমকিও বাদ যায়নি। পুলিশ অবশ্য শেষমেশ ছাত্রনেতাটিকে গ্রেফতার করে।

ছবি ২) দেহব্যবসার অভিযোগ ওঠায় বৈদ্যবাটির একটি পানশালায় হানা দিয়েছিল শ্রীরামপুর থানার পুলিশ। পানশালার এক কর্তা এবং কয়েক জোড়া মহিলা-পুরুষ ধরা পড়েন। পানশালাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। মুক্তি পেতে মালিকপক্ষ কোর্টে গিয়েছেন।

ছবি ৩) কিছুদিন আগেই চন্দননগরের একটি পানশালায় মদ্যপান করে কিঞ্চিৎ বেসামাল হয়ে যান তৃণমূলের এক যুবনেতা। এক নর্তকীর গালে হাতও দিয়ে দেন। বাউন্সারেরা নেতাটিকে মারধর করেন, খানিক ক্ষণ আটকেও রাখা হয়। থানা-পুলিশ যাতে না হয়, তার জন্য আসরে নামেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। পানশালা কর্তাদের সঙ্গে বসে বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়া হয়।

ডানকুনি থেকে মগরা— টানা ৪২ কিলোমিটার জুড়ে রাস্তার দু’পাশে এ রকম নানা আমোদের আয়োজন ছড়িয়ে রয়েছে। দিল্লি রোড আর দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া রাস্তার দু’ধারে পানশালার ছড়াছড়ি। চেনা রাম-হুইস্কি, অচেনা গায়িকা। সন্ধ্যে নামতেই চড়া বাজনার সঙ্গে ‘আর কত রাত একা থাকব-ও-ও-ও....।’ গাইতে-গাইতেই হাল্কা শরীর দোলান গায়িকা, শ্রোতাদের মধ্যে বিদ্যুৎ খেলে যায়। রাত একটু গড়ালেই স্বল্পবাস নর্তকী, টাকার বান্ডিল, মাস্তানদের আনাগোনা। কালো কাচ তোলা গাড়ি, কনট্রাসেপটিভ, রিভলভার।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু আফগারি দফতর থেকে শুধু মাত্র গানের অনুমতি নেওয়া থাকে পানশালা মালিকদের। যাকে বলে ‘সিঙ্গিং বার।’ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, ফি সন্ধ্যেয় দিব্যি নাচের আসর বসছে। নাচই যেখানে আইনের চোখের বাইরে, নাচের পোশাকবিধি নিয়ে ভাবছেটা কে? পোশাক যত ঝলমলে আর ছোট হয়, ততই ভাল। পুরোদস্তুর ‘স্ট্রিপটিজ’ যে শুরু হয়ে যায়নি, এ-ই অনেক। মত্ত খদ্দেরে (কখনও কখনও সশস্ত্রও) ঠাসা পানশালায় যে কোনও সময়ে অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঘটেও। কিন্তু পুলিশ বা আফগারি দফতর, কারও কোনও নিয়ন্ত্রণ কার্যত নেই।

মূলত ডানকুনি থেকে মগরা বা পালশিট পর্যন্ত দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে আর দিল্লি রোডের ধারে-ধারেই এই সব আমোদের ছড়াছড়ি। দূরপাল্লার ট্রাকের চালকেরা তো আছেই, গাড়ি হাঁকিয়েও আসেন নিয়মিত খদ্দেররা। এলাকার কিছু অল্পবয়সী ছেলেপিলেও জোটে। বহু ক্ষেত্রেই পানশালাকে কেন্দ্র করে যে সব আড্ডা জমে তার সবটা আইনের ভাষায় সোজাপথের নয়। পাথর, জমি-মাটির কারবারিরা ভিড় জমায়। তারাই দুষ্কৃতীদের জুটিয়ে আনে। রাত বাড়লেই টাকা ওড়ে। শুধু চটুল বিনোদন নয়, নানা রকম মতলব আর অপরাধের ছক কষার আখড়া হয়ে দাঁড়ায় রাতের পানশালা।

সব নিয়ে এলাকার মানুষজন তিতিবিরক্ত। তাঁদের অভিযোগ, পানশালা চালানোর নিয়মকানুন বা সময়সীমা তো মানাই হয় না। পানশালা মালিকেরা উল্টে লালন করে চলেছেন এই সব অপকর্ম। অন্যথায় তাঁদের ব্যবসায় টান পড়তে পারে। পুলিশ মাঝে-মধ্যে অভিযান চালিয়ে দুষ্কৃতীদের আটক করে। কিন্তু পানশালার অন্দর নিয়ে তারাও বিশেষ মাথা ঘামায় না। মালিকদের সঙ্গে পুলিশের গোপন বোঝাপড়াও রয়েছে বলে এলাকাবাসীর বড় অংশের অভিযোগ।

পুলিশ অবশ্য ও সব অভিযোগে আমল দেয় না। কিন্তু তাতে গণ্ডগোল আটকানো যাচ্ছে কই?

(চলবে)

gautam bandyopadhyay dance mafia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy