Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গরিবদের বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে সঙ্কটে পুরসভা

গোড়ায় গলদ। শহরে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীদের জন্য বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণ করতে গিয়ে সঙ্কটে পড়েছে উলুবেড়িয়া পুরসভা। প্রয়োজনীয় টাকা না মেলায় প্রায় ৩০০ বাড়ি তৈরির কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড এই সমস্যার জন্য দুষছে আগের বাম পুরবোর্ডকে।

বিএসইউপি প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে তৈরি হওয়া বাড়ি।

বিএসইউপি প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে তৈরি হওয়া বাড়ি।

মণিরুল ইসলাম
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০১:৫৭
Share: Save:

গোড়ায় গলদ। শহরে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীদের জন্য বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণ করতে গিয়ে সঙ্কটে পড়েছে উলুবেড়িয়া পুরসভা। প্রয়োজনীয় টাকা না মেলায় প্রায় ৩০০ বাড়ি তৈরির কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড এই সমস্যার জন্য দুষছে আগের বাম পুরবোর্ডকে। বামেরা দাবি করেছে, তারা বেনিয়ম করেনি।

কেন্দ্রীয় ওই প্রকল্পটির নাম ‘বেসিক সার্ভিসেস ফর আরবান পুওর’ বা বিএসইউপি। ২০০৬-০৭ অর্থবর্ষে তৎকালীন বাম পরিচালিত পুরবোর্ড ওই প্রকল্পে দু’টি পর্যায়ে ৪২২০টি বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করে। প্রথম পর্যায়ে ২১২০টি বাড়ি তৈরি এবং আশপাশের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৪২১৪.২৬ লক্ষ টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২১০০টি বাড়ির জন্য ৫৩৬৯.২৫ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়। সামগ্রিক ভাবে প্রকল্পে কেন্দ্রের ৪৫ শতাংশ, রাজ্যের ২৫ শতাংশ, কেএমডিএ এবং সংশ্লিষ্ট পুরসভার পাঁচ শতাংশ করে টাকা দেওয়ার কথা। উপভোক্তার দেওয়ার কথা ২০ শতাংশ টাকা। প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি বাড়ি তৈরির জন্য এক লক্ষ টাকা খরচ ধরা হয়। সেই হিসেবে উপভোক্তাদের দেওয়ার কথা ছিল ২০ হাজার টাকা করে। এবং তা প্রকল্প শুরুর সময়েই।

কিন্তু প্রথম পর্যায়ের বাড়ি তৈরি হয়ে গেলেও বহু উপভোক্তার থেকে তাঁদের টাকা পুরসভা আদায় করতে পারেনি। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, উপভোক্তারা প্রথম দিকে নিজেদের অক্ষমতার কথা জানানোয় তাঁদের বলা হয় প্রাথমিক ভাবে পাঁচ হাজার টাকা করে দিতে। কাজ শেষ হওয়ার আগে বাকি ১৫ হাজার টাকা মিটিয়ে দিতে। এর জন্য পুরসভা কিস্তির ব্যবস্থা করলেও বেশির ভাগ উপভোক্তার থেকেই টাকা মেটাননি। ফলে, প্রায় তিন কোটি টাকা বকেয়া থেকে যায়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে তৈরি বাড়ি। টাকার অভাবে অসম্পূর্ণ কাজ।

নিয়ম অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবর্ষে ওই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়ে যায়। ইতিমধ্যে পুরবোর্ডের হাতবদল হয়। বামেদের থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। কিন্তু টাকার অভাবে দ্বিতীয় পর্যায়ের সেই কাজ এখনও গতি পায়নি। পুরকর্তাদের একাংশ জানান, প্রথম পর্যায়ের ওই টাকা জমা না পড়ায় দ্বিতীয় পর্যায়ে যে ২১০০টি বাড়ি তৈরি হওয়ার কথা, তার ভাগের টাকা দিতে অস্বীকার করেছে কেন্দ্রীয় পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। তারা জানিয়ে দিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে যে টাকা অনাদায়ী রয়েছে সেই টাকা (অন্তত তিন কোটি) কেটে নিয়ে বাকি অংশ দেওয়া হবে উলুবেড়িয়া পুরসভাকে। কিন্তু সেই ঘাটতি পূরণ অসম্ভব বলেই মনে করছেন পুরকর্তারা। টাকা দেওয়ার জন্য উপভোক্তাদের এলাকায় নোটিস পাঠানো হলেও তা মিলছে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

পুরসভার তরফে ওই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা চেয়ারম্যান পারিষদ (জল) আকবর শেখ বলেন, “জলপ্রকল্প চালানো ও উন্নয়নমূলক কাজ করতেই সব টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে পুরসভার। ফলে, বাড়ি তৈরির প্রকল্পের বকেয়া টাকা পূরণ করা খুবই কঠিন। তবু আমরা গরিব মানুষদের জন্য চেষ্টা করছি।” দ্বিতীয় পর্যায়ের বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে উপভোক্তাদের ভাগের টাকা যথাযথ ভাবেই আদায় করা হচ্ছে দাবি করে আকবরের অভিযোগ, আগের বামেদের পুরবোর্ড পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করতে গিয়েই ওই গোলমাল করেছে। তার ফল বর্তমান বোর্ডকে ভুগতে হচ্ছে।

আগের বাম পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান বটকৃষ্ণ দাস অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেন, “তখন পুরবোর্ডে আলোচনার পরে নিয়ম মেনেই আমরা কাজ করেছিলাম।” টাকা আদায় না হওয়ার জন্য তৃণমূলকেই দুষেছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান কংগ্রেসের সাইদুর রহমান। তাঁর দাবি, “ভোট পেতে তৃণমূল ওই উপভোক্তাদের টাকা দিতে হবে না বলেছে। এখন টাকা চাইতে যাবে কী করে?”

প্রথম পর্যায়ের উপভোক্তাদের অনেকেই টাকা না দেওয়ার জন্য পুরসভার বিরুদ্ধে কাজ অসম্পূর্ণ রাখার অভিযোগ তুলেছেন। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের এক উপভোক্তার দাবি, “পুরসভা বাড়ির চাবি হাতে দিলেও শৌচাগার বানায়নি। শেষমেশ নিজের খরচে ৩০ হাজার টাকায় শৌচাগার বানাতে হয়। পুরসভাকে কেন বাড়তি টাকা দেব?” আর এক উপভোক্তা জানান, ঘরের জানলা হয়নি। বাঁশ দিয়ে জানলার ফাঁক ভরাট করতে হয়েছে। তাই টাকা দিচ্ছেন না। পুরসভা বকেয়া কাজ করে দিলে টাকা দিয়ে দেবেন। বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষ কাজ অসম্পূর্ণ রাখার দায়ও আগের পুরবোর্ডের দিকেই ঠেলেছেন।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

monirul islam uluberia bsup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE