Advertisement
E-Paper

চার একরে তুঁতচাষ প্রকল্পের অস্তিত্ব শুধুই ইটের পাকা দালান

চার একর এলাকা জুড়ে তুঁত চাষ প্রকল্পের বর্তমান অস্তিত্ব বলতে প্রকল্প এলাকার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ইটের ঘর। এখানে যে এক সময় তুঁত চাষ হত, গুটি পোকা এনে রেশম উৎপাদনের ব্যবস্থা ছিল সে সবই এখন অতীত। এ ভাবেই ইতিহাস হয়ে গিয়েছে হুগলির গোঘাটের মান্দারনে তুঁত চাষ প্রকল্প।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০১:২০
বর্তমানে প্রকল্পের একমাত্র সাক্ষী। ছবি: মোহন দাস।

বর্তমানে প্রকল্পের একমাত্র সাক্ষী। ছবি: মোহন দাস।

চার একর এলাকা জুড়ে তুঁত চাষ প্রকল্পের বর্তমান অস্তিত্ব বলতে প্রকল্প এলাকার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ইটের ঘর। এখানে যে এক সময় তুঁত চাষ হত, গুটি পোকা এনে রেশম উৎপাদনের ব্যবস্থা ছিল সে সবই এখন অতীত। এ ভাবেই ইতিহাস হয়ে গিয়েছে হুগলির গোঘাটের মান্দারনে তুঁত চাষ প্রকল্প।

তুঁত গাছের বিলোপ ঘটেছে বছর ১৮ আগে। বছর সাতেক আগে ভেরেন্ডা চাষ করে প্রকল্পটিকে বাঁচাতে চাইলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। অবস্থা এমনই যে প্রকল্পটি যে কোনও এক সময় ছিল সে কথাই ভুলে গিয়েছে গোঘাট ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি। অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে প্রকল্প এলাকার পরিচয় এখন ‘লুটেপুটে খাওয়ার গড়’। প্রকল্প এলাকার মধ্যে থাকা পুকুরের মাছ এবং গাছকে কেন্দ্র করেই এই লুটোপুটি চলছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড় মান্দারনের পরিচিতি রয়েছে। তারই কাছাকাছি এমন একটি প্রকল্পের ইতির জন্য এলাকার মানুষ প্রশাসনিক ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন। প্রকল্পটির অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিও ক্ষোভ রয়েছে বাসিন্দাদের। প্রায় এক বছর হতে চলল এখনকার পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে। অথচ, গোঘাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তপন মন্ডল জানান, এমন একটি প্রকল্প যে এখানে রয়েছে তা তাঁর জানা ছিল না।

স্থানীয় তৃণমূলের বক্তব্য, প্রকল্পটি তৈরি হয়েছিল বাম আমলে। বাম আমলেই তার গঙ্গাপ্রাপ্তি ঘটে। তবে বিডিও শিবপ্রিয় দাশগুপ্তর কথায়, “বিষয়টি জানি। ১০০ দিনের প্রকল্পে ওই এলাকায় উদ্যানপালন জাতীয় কোনও কর্মসূচি নেওয়া যায় কি না আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গোঘাট ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি থেকে প্রকল্প এলাকা পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চার একর খাস জমিকে সংস্কার করে ১৯৯২ সালে গড়ে উঠেছিল তুঁত চাষ প্রকল্প। মূল উদ্যোক্তা ছিলেন তৎকালীন বিডিও খুরশিদ আনোয়ার। তৎকালীন কুটির শিল্পমন্ত্রীও এলাকায় এসে তুঁত চাষ প্রকল্পটি গড়ে তুলতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিলেন। কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছিল। প্রথম দিকে প্রকল্প পরিচালনার জন্য ৬ জন ঠিকাকর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুরুতে খুব উন্নতমানের রেশম গুটি তৈরি হচ্ছিল এখানে। পোকা আনা হত বিষ্ণুপুর ও পুরুলিয়া থেকে। বাজারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল মুর্শিদাবাদে।

শুরুতে রেশমের দাম ছিল প্রায় ৭৫ টাকা কিলো। ফলে প্রকল্প থেকে লক্ষাধিক টাকার আয় নিশ্চিত ছিল।

তার পরেও এমন অবস্থা কেন?

প্রশাসনিক মহল থেকেই উঠে এসেছে নানা ব্যাখ্যা। প্রকল্প এলাকায় কোনও নজরদারি ছিল না। বছর ছয়েক আগে এক কালীপুজোর রাতে কে বা কারা ঘরটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাতে পুড়ে যায় যাবতীয় সরঞ্জাম। বর্তমান শাসক দল তৃণমূলের অভিযোগ, প্রশাসনিক গাফিলতি ছাড়াও অন্তরায় ছিলেন প্রকল্পের কর্মীরাই। বাম সরকারের আমলে সিপিএমের নেতা-কর্মীরাই প্রকল্পে চাকরি পেয়েছিলেন। তাঁরা কাজ তো করেনইনি। উল্টে পোকাদের খাবার ও তুঁত গাছ নষ্ট করেছিলেন। পুকুরে মাছ চুরি হচ্ছিল। লোপাট হচ্ছিল গাছপালা। প্রশাসন এ সব রুখতে বা তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, প্রকল্পটি থেকে আয় হচ্ছিল না। উল্টে পঞ্চায়েত সমিতির তহবিল থেকে মাসে প্রায় ৯০ হাজার টাকা কর্মীদের বেতন সহ নানা খাতে খরচ হয়ে যাচ্ছিল। অভিযোগ রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেই প্রকল্পটি রুগণ হয়ে পড়ছিল। তুঁত ছাড়াও প্রকল্পটিতে মাছ চাষ, আম-পেয়ারা-কাজুবাদাম-এবং ভেষজ চাষ শুরু হয়েছিল। কিন্তু কোনওটাই সফল হয়নি। ২০০০ সাল নাগাদ মান্দারন গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতে প্রকল্পের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে তারাও সফল হয়নি।

প্রাক্তন সিপিএম পঞ্চায়েত প্রধান আনন্দ গায়ন, মনোরঞ্জন সাঁতরা জানান, মৃতপ্রায় প্রকল্পটিকে মান্দারন পঞ্চায়েতের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিছু দুষ্কৃতী দলের নাম ভাঙিয়ে প্রকল্পের সম্পত্তি তছনছ করেছে এটা অস্বীকার করা যায় না। তবে প্রশাসনিক নজরদারির অভাবটাই মূল কারন। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, প্রচুর সম্ভবনা থাকা সত্ত্বেও জায়গাটিকে আয়ের ক্ষেত্র হিসাবে প্রতিষ্টা করতে বর্তমান রাজ্য সরকারও উদ্যোগী নয়।

মান্দারন পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান তৃণমূলের বাবর আলি বলেন, “খাতায় কলমে প্রকল্পটি আমাদের অধীনেই আছে। তুঁত চাষ করে রেশম উৎপাদনে যদি কারিগরি সমস্যা থাকে তাহলে অন্য কোনও প্রকল্পের সন্ধান দিক পঞ্চায়েত সমিতি। পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে খ্যাত এই অঞ্চলকে আরও আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে আয়ের ক্ষেত্র হিসাবে প্রকল্পটিকে ব্যবহার করা হোক।” তবে একইসঙ্গে তাঁর দাবি, এক সময় লাভজনক প্রকল্পটি কী কারণে ধ্বংস হয়ে গেল তারও তদন্ত হোক।

piyush nandi mandaron
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy