Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে মৃত্যু

চাকরিটা পাকা হয়েছিল এ মাসেই। বেতন পেলে বাবাকে একটা নতুন মোবাইল ফোন আর মা’র জন্য শাড়ি কিনে দেবে বলেছিল ছেলে। মা বলতেন, বেশি রাত করিস না, সাবধানে যাওয়া আসা করিস। ট্রেনে ঝুলিস না। যেমন বলেন সব মা। প্রবোধ দিত ছেলে। বলত, ‘‘চিন্তা করোনা। আমার কিছু হবে না।’’ সোমবার রাতে অবশ্য দুর্ঘটনাটা ঘটেই গেল। শ্যামনগর স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে ট্রেনের চাকার তলাতেই মৃত্যু হল তন্ময় দে-র (২৫)।

তন্ময় দে।

তন্ময় দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০৩:০৭
Share: Save:

চাকরিটা পাকা হয়েছিল এ মাসেই। বেতন পেলে বাবাকে একটা নতুন মোবাইল ফোন আর মা’র জন্য শাড়ি কিনে দেবে বলেছিল ছেলে। মা বলতেন, বেশি রাত করিস না, সাবধানে যাওয়া আসা করিস। ট্রেনে ঝুলিস না। যেমন বলেন সব মা। প্রবোধ দিত ছেলে। বলত, ‘‘চিন্তা করোনা। আমার কিছু হবে না।’’

সোমবার রাতে অবশ্য দুর্ঘটনাটা ঘটেই গেল। শ্যামনগর স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে ট্রেনের চাকার তলাতেই মৃত্যু হল তন্ময় দে-র (২৫)।

তাঁর দেহ যখন কাটিহার এক্সপ্রেসের কামরার পা-দানিতে আটকে পাক খাচ্ছে, তখন প্ল্যাটফর্মেই বসা তাঁর বাবার সহকর্মী রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতি সন্ধ্যায় প্ল্যাটফর্মে প্রবীণদের আড্ডা বসে। রঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘ট্রেনটা শ্যামনগরে দাঁড়ায় না। গতি কমায়। কেউ কেউ নেমে পড়ে। দেখলাম তিন নম্বর কামরা থেকে কে যেন লাফ দিল। ভেবেছিলাম কেউ ধাক্কা মারল কিনা। পরের দৃশ্যটা ছিল ভয়ঙ্কর।’’ ট্রেন বেরিয়ে যেতেই রঞ্জনবাবুরা খবর দেন স্টেশন ম্যানেজার এবং কেবিন ম্যানকে। ওই লাইনে ট্রেন চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়। তখনও তন্ময়ের দেহে প্রাণ ছিল বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। একটি খালি ট্রাককে দাঁড় করিয়ে তন্ময়কে ব্যারাকপুর বিএন বসু মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেই অবশ্য চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানিয়ে দেন। রঞ্জনবাবু জানান, ছেলেটির ওর বাবা খুবই সাধারণ এক কর্মী। খুব কষ্ট করে একমাত্র ছেলেকে মানুষ করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তন্ময় সায়েন্স সিটির কাছে একটি গাড়ির সার্ভিস সেন্টারে কাজ করছিল বছর তিনেক ধরে। এ মাসের গোড়াতেই তন্ময়ের চাকরিটা পাকা হয়। সাদা কাপড়ে জড়ানো ছেলের দেহটা দেখে তন্ময়ের বাবা তপনবাবু প্রতিবেশীদের বলছিলেন, ‘‘ওর মুখটা ঢাকাই থাক। হাসিখুসি মুখটাই মনে থাকুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE