Advertisement
E-Paper

জাতীয় সড়ক জুড়ে দাঁড়িয়ে লরি, দুর্ঘটনা বাড়ছে বালিতে

একমাত্র ছেলের মৃত্যুশোক আজও তাড়া করে বেড়ায় বালির বৃদ্ধ দম্পতিকে। শীতের রাতে ডানকুনির দিক থেকে কাজ সেরে মোটরবাইকে বালিতে ফিরছিলেন বছর তিরিশের যুবক। মাইতিপাড়া ব্রিজ পেরোতেই ঘটল বিপত্তি।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০১:১১

একমাত্র ছেলের মৃত্যুশোক আজও তাড়া করে বেড়ায় বালির বৃদ্ধ দম্পতিকে। শীতের রাতে ডানকুনির দিক থেকে কাজ সেরে মোটরবাইকে বালিতে ফিরছিলেন বছর তিরিশের যুবক। মাইতিপাড়া ব্রিজ পেরোতেই ঘটল বিপত্তি। আচমকাই মোটরবাইকের হেডলাইটের আলোয় যুবকটি দেখলেন সামনেই রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে একটি লরি। তীব্র গতিতে ব্রেক কষলেও শেষরক্ষা হল না। লরির পিছনে গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারল বাইক। রাস্তার পাশে ছিটকে পড়লেন ওই যুবক। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করলেন চিকিৎসকেরা।

বছরখানেক আগে বালির দু’নম্বর জাতীয় সড়কের এই ঘটনা নিছকই দুর্ঘটনা হলেও স্থানীয় বাসিন্দারা কিন্তু এর পিছনে প্রশাসনের উদাসীনতাকেই প্রধান কারণ বলে মনে করেন। তাঁদের কথায়, ‘‘দিনে-রাতে সব সময়েই জাতীয় সড়কের দু’পাশে সারিবদ্ধ ভাবে লরি-ট্রাক দাঁড় করানো থাকে। যার জন্য প্রতিনিয়ত ছোটখাটো দুর্ঘটনা তো বটেই বড়সড় দুর্ঘটনাও ঘটছে।’’ শুধু পথ-দুর্ঘটনাই নয়। এই লরি পার্কিংকে কেন্দ্র করে বালির দু’নম্বর জাতীয় সড়ক দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠছে বলেও অভিযোগ বাসিন্দাদের। যেমন, কয়েক বছর আগে এ রকমই রাস্তার ধারে দাঁড় করানো একটি ট্যাঙ্কারের ভিতর থেকে চালকের গলাকাটা দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। আবার এক ফুটপাথবাসী মহিলাকে ধর্ষণ করে বরাহনগর থেকে লরিতে চাপিয়ে এনে এই জাতীয় সড়কের ধারে ফেলে যাওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল।

শুধু জাতীয় সড়কই নয়। দু’নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া নিবেদিতা সেতুর উপরেও সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে লরি। যদিও ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়ার নিয়মেই স্পষ্ট বলা রয়েছে, কোনও জাতীয় সড়কের উপরে গাড়ি পার্কিং করা যায় না। তা হলে প্রশাসন বা পুলিশ এ বিষয়ে উদাসীন কেন? হাওড়া সিটি পুলিশের ট্রাফিক অফিসারদের দাবি, হুগলির দিক থেকে লরিগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেগুলি এসে বালিতে জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে যায়। কারণ জাতীয় সড়কের পরেই রয়েছে বালি ব্রিজ। সেখানে লরি দাঁড়ানোর উপায় নেই। পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, ‘‘সমস্যাটা জানি। কিন্তু হুগলির দিক থেকে লরি কেন ছেড়ে দেওয়া হয়? ওটা আগে বন্ধ করা দরকার। এ ছাড়াও হুগলি ও বালির মাঝে নির্দিষ্ট একটা লরি পার্কিংয়ের জায়গা তৈরি করা দরকার।’’ তবে লরি পার্কিং যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলেও দাবি ট্রাফিক কর্তাদের।

কিন্তু বাস্তব চিত্রটা যে উল্টো, তার প্রমাণ মেলে দু’নম্বর জাতীয় সড়কে চক্কর মারলেই। বালি হল্টের পর থেকে শুরু করে ডানকুনির দিকে মাইতিপাড়া ব্রিজের আগে পর্যন্ত এবং নিবেদিতা সেতু টোলপ্লাজার পাশের সার্ভিস রোডে দিনে-রাতে সব সময়েই লরি, বড় ট্রাক, ট্রেলার, বাস দাঁড় করানো থাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুই লেনের রাস্তার দু’পাশে এমন ভাবে লরিগুলি পার্কিং করা থাকে যে রাস্তাটি এক লেনের মতো চওড়াও হয় না। তার মধ্যে দিয়েই যানবাহন যাতায়াত করে। পথচারীদের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ষষ্ঠী গায়েন বলেন, ‘‘সার্ভিস রোডের ধারে এমন ভাবে লরি পার্ক করা থাকে যে রাতে রাজচন্দ্রপুর স্টেশনে নেমে মহিলারা ওই রাস্তা দিয়ে যেতে ভয় পান। আবার রাতের অন্ধকারে লরি দাঁড় করানো থাকলে অনেক সময়ে বোঝাও যায় না। একটু নিয়ন্ত্রণ হারালেই সোজা লরির পিছনে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা থাকে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, বালি হল্টের পর থেকে মাইতিপাড়া সেতুর আগে পর্যন্ত জাতীয় সড়কের ধারে রয়েছে অসংখ্য গ্যারাজ ও হোটেল। যার জন্য লরিগুলিও রাস্তার ধারে এনে পার্কিং করা হয়। বাসিন্দারা জানান, দিনের পর দিন এই লরিগুলি দাঁড়িয়ে থাকে। এখান থেকেই গাইড, চালক-খালাসি পরিবর্তন করা হয়। আবার মালপত্রও অন্য গাড়িতে তোলা হয়। সম্প্রতি জাতীয় সড়কে ঘুরে দেখা গেল, সাহেববাগান, জিরো পয়েন্ট, বামুনডাঙা, দুর্গাপুর-সহ সর্বত্রই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে লরি। পথচারীদের অভিযোগ, এর জেরে রাস্তার প্রায় অর্ধেকটা দখল হয়ে থাকায় পারাপারে অসুবিধা হয়। কোনও গাড়ি আসছে কি না, বোঝা যায় না। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্তা বলছেন, ‘‘জাতীয় সড়কে পার্কিং করার কোনও নিয়ম নেই। তবে সেটা দেখার কথা পুলিশের।’’

বাসিন্দাদের অভিযোগ, সন্ধে নামলেই পার্কিংয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অনেক সময়ে এমন অবস্থা হয় যে দু’টি লেনে লরি পার্কিং করা হয়। তখনই মোটরবাইক কিংবা ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। লরিচালকদের কথায়, ‘‘অনেক সময়ে নো-এন্ট্রির জন্য শহরে ঢোকা যায় না। তখন অপেক্ষা করার জন্য হাই-রোডই ভরসা।’’ তবে লরির পার্কিংয়ের জেরে সমস্যার কথা স্বীকার করছেন চালকেরাও। তবে তাঁদের বক্তব্য, ‘‘হুগলি ও বালির মাঝে কোনও ট্রাক টার্মিনাস তৈরি করা হলে সমস্যা হবে না।’’ পার্কিংয়ের জন্য অপরাধমূলক কাজকর্মের কথাও অস্বীকার করছেন না পুলিশকর্তারা। সার দিয়ে দাঁড়ানো লরির আড়ালেই চলে দুষ্কৃতীদের কাজকর্ম। লরি হাইজ্যাকের জন্য দুষ্কৃতীরাও চালকদের উপর হামলা চালায়। তবে প্রতিনিয়ত লরিগুলির উপর স্থানীয় থানা নজরদারি চালায় বলে জানিয়েছেন সিটি পুলিশের কর্তারা। মাঝেমধ্যেই লরি চুরির জন্য গ্রেফতার করা হয় দুষ্কৃতীদের। উদ্ধার হয় অস্ত্রশস্ত্র।

সব মিলিয়ে বালির দু’নম্বর জাতীয় সড়ক জুড়ে এখন বেআইনি পার্কিংয়ের রমরমা নিয়েই সমস্যায় স্থানীয় বাসিন্দারা।

national highway shantanu ghosh illegal lorry parking
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy