বলরাম মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
দিনের অনেকটা সময় বাবার সঙ্গে অন্যের চাষের জমিতে দিনমজুরির কাজ করতে হয়েছে বলরামকে। অভাবের সংসারে ছোট ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য টাকা জমাতে চায় সে। তবু পড়াশোনাটাও চালিয়ে গিয়েছে পাশাপাশি। এ বার মাধ্যমিকে বসিরহাট টাউন হাইস্কুলের ছাত্র বলরাম হাজরা সাতটি বিষয়ে লেটার পেয়ে মেধা তালিকায় সম্ভাব্য অষ্টম।
ছোট্ট একটা টালির চালের বাড়ির বারান্দায় বসে তার মা কাকলিদেবী বলেন, “আমরা খুব গরিব। সংসারই চলে না। তার উপরে পড়ার খরচ সামলাবো কী করে? ওর স্কুলের শিক্ষকেরা পাশে না দাঁড়ালে এ সব কিছুই হত না।” ছেলে জেদ ধরেছে ডাক্তার হবে। কী তার উপায়? উত্তর জানা নেই কাকলিদেবী কিংবা বলরামের বাবা স্বপনবাবুর।
সর্দারআটি গ্রামের এই ছেলেটি এ বার স্কুলেরও মুখোজ্জ্বল করেছে। এর আগে মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় বসিরহাট টাউন হাইস্কুলের কোনও ছাত্র মেধাতালিকায় স্থান পায়নি। প্রধান শিক্ষক যোগেশচন্দ্র ঘোষ বলেন, “বলরাম এ বার ৬৭৫ নম্বর পেয়েছে। স্কুলের আরও এক ছাত্র দেবরাজ ঘোষ পেয়েছে ৬৭৮ নম্বর। ওদের জন্য আমাদেরও স্বপ্ন পূরণ হল।” বলরামের বাবা স্বপনবাবু বলেন, “ছেলেকে মাঠে কাজ করতে হয় অনেক সময়। তার পরেও দিনে ৮-১০ ঘণ্টা সময় বের করে পড়েছে।” টেস্টে আশানুরূপ ফল হয়নি বলে জানায় বলরাম। ভেবেছিল, কয়েক জন গৃহশিক্ষকের সাহায্য পেলে বাল। কিন্তু সঙ্গে এটাও জানত, এ সব বিলাসিতার কথা ভেবে লাভ নেই। লড়াইটা তাকে একাই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাই ভাল ফলের আশায় দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গিয়েছে। স্কুলের শিক্ষকেরাও পাশে থেকেছেন বলে জানায় সে।
বলরামের ছোট ভাই অনুপম মূক-বধির। তার চিকিৎসার খরচ অঢেল। সেই খরচ সামলানোর পাশাপাশি বলরামের পড়ার খরচও চালাতে জেরবার হতে হয়েছে পরিবারকে। বলরামের ভূগোল শিক্ষক অভিজিৎ মিস্ত্রি জানালেন, অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ছেলেটির মেধা এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে সব শিক্ষকই যে যেমন ভাবে পেরেছেন ছেলেটিকে পড়াশোনায় সাহায্য করেছেন।
কিন্তু ভবিষ্যতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনেক টাকা দরকার, জানে বলরাম। কোথা থেকে জোগাড় হবে তা, জানা নেই শুধু সেটুকুই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy