একটিই টিকিট কাউন্টার (উপরে)। নীচে, নেই মাথা গোঁজার ছাউনি। —নিজস্ব চিত্র।
এখানে কোনও ঘোষণা হয় না।
নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা। নেই যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত ছাউনি।
এমনকী, রেল লাইন পারাপারের জন্য নেই ওভারব্রিজও।
এই ‘নেই’ রাজ্যের নাম বালি হল্ট রেল স্টেশন। যেখানে যাত্রিসংখ্যা প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে। অথচ, নামের জন্যই যাবতীয় পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্টেশনের যাত্রীরা। এমনটাই বলছেন রেল কর্তারা। আর স্টেশনে নূন্যতম পরিষেবাও না মেলায় ক্ষোভ বাড়ছে যাত্রীদের।
পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের ডানকুনি শাখার এই স্টেশন হয়ে প্রতিদিন ২৩ জোড়া লোকাল ট্রেন ও বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেন যাতায়াত করে। নিত্যযাত্রী এবং স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, আর পাঁচটা জংশন কিংবা বড় স্টেশনের মতো বালি হল্টও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব রেলের হিসেবেই প্রতিদিন গড়ে চার-পাঁচ হাজার যাত্রী এই স্টেশন ব্যবহার করেন। ওই স্টেশন হয়েই দু’নম্বর জাতীয় সড়ক (দিল্লি রোড) ধরে যাত্রীরা অন্যত্র চলে যান। আবার স্টেশনের কাছেই বালি স্টেশন থেকে হাওড়া ডিভিশনের ট্রেন ধরে মেন ও কর্ড শাখার নানা দিকে যাওয়া যায়।
বালি হল্ট স্টেশনটি এতটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও পরিষেবার মান বাড়ানো হয় না কেন?
যাত্রীরা নানা সময়ে স্টেশনের পরিষেবার মান বাড়ানোর জন্য দাবি জানিয়েছেন পূর্ব রেলের কাছে। কিন্তু তার পরেও কিছু হয়নি এবং স্টেশনটি অবহেলায় পড়ে রয়েছে বলেই অভিযোগ যাত্রীদের। পূর্ব রেলের কর্তারা জানাচ্ছেন, খাতায়-কলমে ওটা হল্ট স্টেশন! এখন গুরুত্ব বেড়ে গেলেও কিছু করার নেই। অন্য স্টেশনের মতো এখানে সব ধরনের পরিষেবা দেওয়ার নিয়ম নেই। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘যতটা পরিষেবা দরকার ততটা দেওয়া হয়েছে।” একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, “যাত্রীদের আরও কিছুর দাবি থাকলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের ফলক দেখে জানা যায়, বালিঘাট এবং রাজচন্দ্রপুরের মাঝের গ্রামাঞ্চলের মানুষের সুবিধার কথা ভেবে ওই হল্ট স্টেশনটি চালু হয় ১৯৮৭ সালের ২৯ জানুয়ারি। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য দফতরের তৎকালীন রাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি স্টেশনটির উদ্বোধন করেছিলেন। তার পর থেকে এ পর্যন্ত বালি হল্টে ঠিকাদারের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করা হয়। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে যিনি টিকিট বিক্রি করছেন, সেই প্রবীর রায় জানান, প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১০০০ টিকিট বালি হল্ট থেকে বিক্রি হয়। টিকিট শেষ হয়ে গেলে তাঁকে বালিঘাট স্টেশনে গিয়ে টিকিট কিনে আনতে হয়। আবার শুধুমাত্র শিয়ালদহ ছাড়া অন্য কোনও জায়গার মাসিক টিকিটও এখান থেকে পাওয়া যায় না। এখনও পুরনো আমলের বোর্ডের টিকিট পাওয়া যায় কাউন্টার থেকে। কাউন্টারটিও ভাঙাচোরা।
অবশ্য মানুষের দুর্ভোগ ওই কাউন্টারেই শেষ নয়। বালি স্টেশনের পাশ দিয়ে বালি হল্ট স্টেশনে ওঠার সিঁড়ি দু’টির সিমেন্ট খসে ইটের কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। অপরিসর সিঁড়ি দিয়ে এক সঙ্গে তিন জন লোক ঝুঁকি নিয়েই ওঠানামা করেন। একই অবস্থা এলাকা থেকে স্টেশনে ওঠার সিঁড়িরও। চারপাশে ঝোপজঙ্গল হয়ে গিয়েছে। বারো বগির ট্রেন দাঁড়াতে পারে এমন আপ ও ডাউন দু’টি প্ল্যাটফর্মেই যাত্রী-ছাউনি একটি করে। তা-ও অপরিসর। নেই পাখাও। আলো মাঝেমধ্যে জ্বলে বলে দাবি যাত্রীদের। কড়া রোদ কিংবা বৃষ্টিযাত্রীদের ছাতাই ভরসা। দু’টি প্ল্যাটফর্মে একটিও পানীয় জলের কল নেই। মহিলাদের জন্যও কোনও শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই।
বালি-ঘোষপাড়ার বাসিন্দা, নিত্যযাত্রী মোহন চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “একটি মাত্র কাউন্টার হওয়ায় অফিস টাইমে টিকিটের লম্বা লাইন লেগে যায়। কাউন্টারটির অবস্থাও ভাঙাচোরা।” কাঞ্চন দাস নামে আর এক নিত্যযাত্রী বলেন, “ট্রেন আসছে কি না জানতে প্ল্যাটফর্ম থেকে ঝুঁকে দূরে তাকিয়ে থাকতে হয়। ট্রেনের হর্ন কিংবা ইঞ্জিন দেখে বুঝতে হয় ট্রেন আসছে।”
দুর্ভোগ কবে মিটবে, সেই প্রশ্নই বার বার তোলেন যাত্রীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy