শ্রীরামপুরে পোস্টার আব্দুল মান্নানের নামে।—নিজস্ব চিত্র।
ভোটে দাঁড়ানো থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রবীন নেতা আব্দুল মান্নান। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য চায়, তিনি ভোটে দাঁড়ান। কংগ্রেসের অন্দরের খবর, শ্রীরামপুরে দলের প্রার্থী হচ্ছেন মান্নান। প্রার্থী ঘোষণার আগেই শ্রীরামপুরে মান্নানের নামে প্রচারও শুরু হয়ে গিয়েছে।
মান্নানের নামে শহরে ব্যানার লাগানো হয়েছে কংগ্রেসের তরফে। তাতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মান্নানকে জয়ী করার আবেদন জানানো হয়েছে। জেলা কংগ্রেস নেতা দিলীপ নাথ বলেন, “শ্রীরামপুর কেন্দ্রে মান্নানদার দাঁড়ানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। প্রবীন নেতা। উনি দাঁড়ানো মানে কর্মীরা প্রচণ্ড উদ্যমে লড়াইয়ের রসদ পাবেন।” শ্রীরামপুর শহর কংগ্রেস সভাপতি গিরিধারী সাহার বক্তব্য, “মান্নানদার দাঁড়ানোর সম্ভাবনায় দলের লোকজন প্রচণ্ড উজ্জীবিত। তাই আগাম প্রচার শুরু করে ফেলেছেন।”
কংগ্রেস সূত্রের খবর, আজ বুধবার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে এআইসিসি।
প্রার্থী হওয়া নিয়ে মান্নান নিজে কী বলছেন?
তাঁর বক্তব্য “কোনও দিন পদের লোভে রাজনীতি করিনি। আজও তাই। শারীরিক অসুস্থতার কথা দলকে জানিয়েছি। তা সত্ত্বেও দল যদি দাঁড়াতে বলে, সেটা মেনে নিতে হবে।”
জেলার রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, মান্নান ভোটে দাঁড়ালে শ্রীরামপুরে ত্রিমুখী লড়াই হবে। আগের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়েছিল তৃণমূলের। তৃণমূলের প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে সিপিএমের শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়কে হারান। তৃণমূল পেয়েছিল ৫ লক্ষ ৬৯ হাজার ৭২৫টি ভোট। সিপিএমের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪ লক্ষ ৩২ হাজার ৫৩৫টি। দিলীপবাবুর দাবি, “শ্রীরামপুর মান্নানদার নিজের জায়গা। এই শহরেরই বাসিন্দা। সব সম্প্রদায়ের মানুষের কাছেই তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আছে। ফুরফুরা, জাঙ্গিপাড়া, চণ্ডীতলায় প্রচুর সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। তাঁদের সমর্থন মান্নানদাই পাবেন।”
মান্নান চার বারের বিধায়ক। এক বার জিতেছিলেন আরামবাগ থেকে। বাকি তিন বার চাঁপদানি থেকে। বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতকও ছিলেন।
চাঁপদানি থেকেই ২০০৬ সালে সিপিএমের জীবেশ চক্রবর্তীর কাছে হেরে যান। এ বার তিনি ভোটে দাঁড়াতে চাননি। কারণ হিসেবে শারীরিক অসুস্থতার কথা জানান দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। গত অক্টোবর মাসে দিল্লিতে গিয়ে পা ভেঙেছিল প্রবীন এই কংগ্রেস নেতার। মাস দেঁড়েক ভর্তি থাকতে হয়েছিল রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে। এখন নিয়মিত ফিজিওথেরাপি করাতে হয়।
হেভিওয়েট এই কংগ্রেস নেতার দাঁড়ানোর বিষয়টিতে অবশ্য সে ভাবে আমল দিচ্ছে না সিপিএম বা তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রতিপক্ষকে ছোট করে দেখতে নেই। কিন্তু সাংসদ হিসেবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এলাকার যা উন্নয়ন করেছেন, তাতে কংগ্রেস প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। শ্রীরামপুরে ওঁর কোনও অবদান নেই।” কল্যাণের নিজের বক্তব্য, “মান্নান দাঁড়ালে আমি খুশিই হব। জেলার রাজনীতিতে ওঁর যে কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই, সেটা প্রমাণ করে দেওয়া যাবে।” তাঁর আরও সংযোজন, “শ্রীরামপুরে কংগ্রেস-বিজেপি কারওরই জায়গা নেই।” অন্য দিকে, সিপিএম প্রার্থী তীর্থঙ্কর রায়ের বক্তব্য, “ব্যক্তি লড়াই নয়। লড়াই নীতি-আদর্শের। ফলে অন্য দলের প্রর্থী কে হলেন, সেটা বিবেচ্য নয়।”
শেষমেশ মান্নান এই কেন্দ্রে টিকিট পাবেন কিনা, তা জানতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে আরও কিছুটা সময়। যদিও প্রবীন নেতাকে সামনে রেখে লড়তে চায় শ্রীরামপুরের কংগ্রেস নেতৃত্বের বড় অংশ। সেই বার্তাই দিতে শুরু করেছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy