Advertisement
E-Paper

প্রার্থীর এজেন্টকেও মারধর, দিনভর অশান্ত গোটা জেলা

ভোট-চিত্রে উত্তরের সঙ্গে মিলে গেল দক্ষিণও। অবাধ ভোট হল না। বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, ভোটারদের ভয় দেখানোর যে অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে উত্তর ২৪ পরগনায় তুলেছে বিরোধীরা, সেই একই অভিযোগ সোমবার শোনা গেল দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। অবশ্য উত্তরের হাড়োয়ার মতো কোনও বড় ঘটনা নেই দক্ষিণে। তবু, জেলার চারটি কেন্দ্রের নানা প্রান্তে মানুষ অবাধে ভোট দিতে পারলেন কই? অনেক জায়গাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী সে ভাবে দেখা যায়নি বলে তাঁদের দাবি।

শান্তশ্রী মজুমদার ও সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৪ ০৪:১৬

ভোট-চিত্রে উত্তরের সঙ্গে মিলে গেল দক্ষিণও। অবাধ ভোট হল না।

বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, ভোটারদের ভয় দেখানোর যে অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে উত্তর ২৪ পরগনায় তুলেছে বিরোধীরা, সেই একই অভিযোগ সোমবার শোনা গেল দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। অবশ্য উত্তরের হাড়োয়ার মতো কোনও বড় ঘটনা নেই দক্ষিণে। তবু, জেলার চারটি কেন্দ্রের নানা প্রান্তে মানুষ অবাধে ভোট দিতে পারলেন কই? অনেক জায়গাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী সে ভাবে দেখা যায়নি বলে তাঁদের দাবি।

দিনের শেষে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “শাসক দলের ছাপ্পা ভোট, এজেন্ট বসতে না দেওয়া এবং কর্মীদের ভয় দেখিয়ে ভোট দিতে না যেতে দেওয়ার কারণে মথুরাপুর কেন্দ্রের ৪২টি বুথে, ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের ৪৭টি বুথে এবং জয়নগর কেন্দ্রের ২০টি বুথে আমরা পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি।” অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি চৌধুরী মোহন জাটুয়ার দাবি, “কোথাও কোনও ঝামেলা হয়ি। শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হয়েছে।”

এ দিন সকালে ডায়মন্ড হারবারে প্রথম গোলমাল হয় বেলা ১১টা নাগাদ। ফলতা পোর্ট এনএসপি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০৮ নম্বর বুথে পিডিএস প্রার্থী সমীর পুততুণ্ডর এজেন্ট মেঘনাথ পুরকাইত প্রহৃত হন। তাঁকে মারধর করে বুথ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তাঁকে বাঁচাতে যান এলাকার বাসিন্দা তথা সিপিএম সমর্থক সোমা পুরকাইত। দু’পক্ষের গোলমাল বাধে। সিপিএম সমর্থক নাড়ুগোপাল মালো, সমরেশ বিশ্বাস, ভারতী পুরকাইত ও ফলতা পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা তথা বামপ্রার্থী আবুল হাসনাতের এজেন্ট বিধান পাড়ুই প্রহৃত হন। বেলা প্রায় ২টো পর্যন্ত ঝামেলা চলে। ফলতার বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বিধানবাবু।

ওই ঘটনার পরে ফলতায় সিআরপিএফ পাঠানো হয়। মাইক্রো-অবজার্ভারও যান। বেলা পৌনে তিনটে নাগাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই বুথে তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও দলের এজেন্ট নেই। পিডিএস প্রার্থী বলেন, “ফলতার ওই বুথে আমাকেও বের করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। নির্বাচনী অফিসারদের পক্ষপাতমূলক আচরণ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছি। বিষ্ণুপুর ও ফলতার কয়েকটি বুথে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছি।” ওই এলাকার বেশ কিছু বুথে ভোটারদের ভিড় চোখে পড়েনি।

বামপ্রার্থীর অভিযোগ, “১০৭ থেকে ১৬৪ নম্বর বুথেও বিরোধী এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি। মানুষকে ভয় দেখিয়ে ভোট দিতে দেয়নি শাসক দল।” রিটার্নিং অফিসারের দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সব অভিযোগই খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার সোমনাথ দে বলেন, “যখনই অভিযোগ উঠেছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে সে সব জায়গায় পুলিশ পর্যবেক্ষক ও নির্বাচনী আধিকারিকদের পাঠিয়েছি। বেশির ভাগ জায়গায় বিরোধীরা এজেন্ট দিতে পারেনি।”

বিষ্ণুপুরেও পানাকুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আমগাছিয়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুথ দখলের অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আবার মথুরাপুরের মন্দিরবাজার বিধানসভা এলাকার কালিকাপুর ১২৯ নম্বর বুথে তৃণমূল ছাপ্পা ভোট দিতে এসেছে বলে অভিযোগ ওঠে। বিরোধীদের মারধর করা হয়। ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী রিঙ্কু নস্করের এজেন্ট তথা জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য বিকাশ বৈরাগীও প্রহৃত হন। তাঁর মাথা ফাটে। পঁয়ত্রিশ মিনিটের মাথায় এলাকায় র্যাফ নামানো হয়। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক জয়দেব হালদারের পাল্টা অভিযোগ, তাঁদের কিছু সমর্থককে মারধর করা হয়েছে। আহতদের নাইয়ারহাট ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করানো হয়। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রূপান্তর সেনগুপ্ত বলেন, “দু’তরফের অভিযোগ পেয়েছি। দু’দলের এজেন্টদের মধ্যে মারপিট হয়েছে।”

রবিবার রাত থেকেই কাকদ্বীপের সূর্যনগর, শ্রীনগর, বাপুজির মতো গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে বিরোধীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট দিতে না যাওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসীর দাবি, “রবিবার রাতেই তৃণমূলের লোকেরা আমাদের বাড়ি এসে বলে গিয়েছিল, কাল বাড়িতে ভাল করে রান্না কর। ভোট দিতে যেতে হবে না।” ওই কেন্দ্রের মধুসূদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন বুথে ঢুকে তৃণমূল ছাপ্পা ভোট দিয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের। কাকদ্বীপ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক পারিজাত বিশ্বাসের কাছে সিপিএম অভিযোগ দায়ের করেছে। সাগরেও বেশ কিছু বুথে সিপিএম-তৃণমূলের মধ্যে বচসা হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও মহকুমাশাসকের দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বেশিরভাগ অভিযোগই ভিত্তিহীন।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে জেলায়। তবে, তার আগেই নানা জায়গা থেকে শাসক দলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ ওঠে। জয়নগর কেন্দ্রের ক্যানিং-১ ব্লকের উত্তর অঙ্গদবেড়িয়াতে লাঠি, রডের আঘাতে প্রহৃত হন কংগ্রেসের চার জন। কংগ্রেস প্রার্থী অর্ণব রায় বলেন, “আমাদের কর্মীরা ভোট দিতে গেলে তৃণমূল তাদের ভয় দেখায়, হুমকি দেয়। তার প্রতিবাদ করতেই কর্মীদের মারধর করতে শুরু করে ওরা।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল।

ক্যানিং ১ ব্লকের রায়বাঘিনীতেও নিশিকান্ত মণ্ডল নামে এক সিপিএম কর্মীকে খুর দিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। তাঁকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জয়নগর কেন্দ্রের আরএসপি প্রার্থী সুভাষ নস্কর বলেন, “তৃণমূল বুঝে গিয়েছিল, জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রে হারবে। তাই সকাল থেকে বিভিন্ন জায়গায় বুথ দখল, ছাপ্পা মারা, এজেন্টকে মারধর করেছে।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি পরেশ দাস অবশ্য দু’টি অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।

সহ প্রতিবেদন: দিলীপ নস্কর।

dilip naskar shantashri majumder samshul huda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy