Advertisement
E-Paper

প্রচারে বেরিয়ে কাঁথা সেলাই কংগ্রেস প্রার্থীর

বনগাঁ-বাগদা সড়কের ডান দিকে গ্রামের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে মাটি-ইটের রাস্তা। রাস্তার মধ্যে কোথাও কোথাও সবুজ ঘাসের উঁকি। স্থানীয় জিয়ালা মোড় থেকে বনগাঁর কংগ্রেস প্রার্থী ইলা মণ্ডলের গাড়ি ওই রাস্তা দিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যখন জিয়ালা আদিবাসী পাড়ায় পৌঁছলো ঘড়িতে তখন বেলা সাড়ে ১১টা। রাস্তার ধারে অশ্বথ্ব গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে পড়ল প্রার্থীর তিন গাড়ির কনভয়।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫৯
হাত তুলে দলের প্রতীক বোঝাচ্ছেন বনগাঁর কংগ্রেস প্রার্থী। —নিজস্ব চিত্র।

হাত তুলে দলের প্রতীক বোঝাচ্ছেন বনগাঁর কংগ্রেস প্রার্থী। —নিজস্ব চিত্র।

বনগাঁ-বাগদা সড়কের ডান দিকে গ্রামের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে মাটি-ইটের রাস্তা। রাস্তার মধ্যে কোথাও কোথাও সবুজ ঘাসের উঁকি। স্থানীয় জিয়ালা মোড় থেকে বনগাঁর কংগ্রেস প্রার্থী ইলা মণ্ডলের গাড়ি ওই রাস্তা দিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যখন জিয়ালা আদিবাসী পাড়ায় পৌঁছলো ঘড়িতে তখন বেলা সাড়ে ১১টা। রাস্তার ধারে অশ্বথ্ব গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে পড়ল প্রার্থীর তিন গাড়ির কনভয়। গাড়ি থেকে নেমে এক আদিবাসী বৃদ্ধার দিকে এগিয়ে গেলেন প্রার্থী। জানলেন, নাম সরলাদেবী মুণ্ডা। হাতদু’টি জড়িয়ে ধরে কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করেই হাতছেড়ে তুলে ধরলেন নিজের ডান হাতের তর্জনী। বৃদ্ধাকে জানালেন, “এই চিহ্নে দাঁড়িয়েছি। ভোটটা দিও বুড়িমা।” হাত তুলে প্রার্থীকে আশ্বস্ত করেন বৃদ্ধা।

প্রার্থী এগোবার তোড়জোড় করতেই সরলাদেবী বলে উঠলেন, “আগে খেতে কাজ করতাম। এখন পারি না। ছেলে-বৌমা খেতে দিনমজুরি করে, তাই কোনওরকমে বেঁচে রয়েছি।” প্রার্থী উত্তর দেওয়ার আগেই বৃদ্ধার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দিফুল সর্দার বলে ওঠেন, “এখানে ১০০ দিনের কাজ হয়নি। খেতে মজুরি করে ১৫০ টাকা পাই। বছরের বেশরিভাগ সময় কাজ থাকে না। অনেকে বাধ্য হয়ে মুম্বই, গুজরাতে কাজের খোঁজে চলে গিয়েছে। আমাদের কথা কেউ ভাবে না। আপনি কিছু করতে পারবেন?” প্রশ্নের উত্তরে আশ্বাস দিয়ে এগিয়ে যান প্রার্থী।

গ্রামের ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল টিনের ছাউনি, পাটকাঠির বেড়া দেওয়া ঘর। থুড়ি ভুল হল, মাথা গোঁজার আস্তানা। কোনওটায় পাটকাঠির বদলে মাটির দেওয়াল। প্রার্থীর সঙ্গে থাকা দলীয় কর্মীরা ইতিমধ্যেই জড়ো হওয়া লোকজনের মধ্যে বিলি করতে শুরু করেছেন হাত চিহ্নের ছাপ দেওয়া টুপি। বাড়ির উঠোনে খেজুরপাতার চাটাইয়ে বসে কাঁথা সেলাই করছিলেন ভাদুরি সর্দার। তাঁকে সাহায্য করছিলেন আর একজন। সোজা সেখানে গিয়ে বসে পড়লেন প্রার্থী। “মাসী আমি কংগ্রেসের প্রার্থী”, কথা শেষ করেই কাঁথা, সুতো টেনে নিয়ে সেলাই শুরু করে দিলেন। খানিকক্ষণ সেলাই করার পরে বলে ওঠেন, “ভুল হলে খুলে দিও।” ‘‘না, না ভুল হয়নি। ঠিকই আছে” জানালেন ভাদুরি দেবী। তারপরেই বলতে থাকেন, “জমিতে কাজ করে কখনও ১১০, কখনও ১২০ টাকা পাই। দু’বেলা কোনওরকমে চলে। ১০০ দিনের কাজ হয় না। বিপিএল তালিকায় নাম নেই। তাই সরকারি বাড়িঘর মেলেনি। ওগুলো যাতে পাই, একটু দেখবে দিদি?” ভাদুরিদেবীকে সান্ত্বনা দিয়ে বেরিয়ে আসেন প্রার্থী। গৃহবধূ উর্মিলা সর্দার জানালেন, “ইন্দিরা আবাসের ঘর পাইনি। নাম নেই বিপিএলে। গ্রামে কাজ নেই। কী ভাবে সংসার চলে বলতে পারেন?”

সব দাবির উত্তরে শুধুই আশ্বাস দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েন প্রার্থী। ধুলো উড়িয়ে গাড়ি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বোধহয় চলে যায় আশ্বাসও।

simanta maitra congress candidate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy