Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পড়ুয়াবোঝাই পুলকারে আগুন

দূরে দাঁড়ানো গাড়িটি থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে দেখেই বিপদের আঁচ পেয়েছিলেন কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকর্মীরা। ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে তাঁরা দেখেন, একটি পুলকারে আগুন জ্বলছে। গাড়ির ভিতরে ভয়ে চিৎকার করে কাঁদছে ১২ জন খুদে স্কুলপড়ুয়া। শেষমেশ স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় নর্দমা থেকে জল তুলে আগুন নিভিয়ে পড়ুয়াদের উদ্ধার করলেন ট্রাফিক পুলিশকর্মীরা।

পোড়া গাড়ি। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

পোড়া গাড়ি। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৪ ০৬:১৯
Share: Save:

দূরে দাঁড়ানো গাড়িটি থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে দেখেই বিপদের আঁচ পেয়েছিলেন কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকর্মীরা। ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে তাঁরা দেখেন, একটি পুলকারে আগুন জ্বলছে। গাড়ির ভিতরে ভয়ে চিৎকার করে কাঁদছে ১২ জন খুদে স্কুলপড়ুয়া। শেষমেশ স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় নর্দমা থেকে জল তুলে আগুন নিভিয়ে পড়ুয়াদের উদ্ধার করলেন ট্রাফিক পুলিশকর্মীরা।

পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকাল আটটা নাগাদ সালকিয়া থেকে ১২ জন ছাত্রীকে নিয়ে একটি পুলকার লিলুয়া স্টেশন রোডের এক বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে আসছিল। স্টেশন রোড মোড় থেকে কয়েক হাত দূরে জিটি রোডের উপরে হঠাৎই দাঁড়িয়ে পড়ে গাড়িটি। কিছুটা দূরে থাকা বালি সাব ট্রাফিক গার্ডের কয়েক জন পুলিশকর্মী দেখেন, গাড়িটি থেকে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে।

সঙ্গে সঙ্গে ট্রাফিকের ওসি বিপ্লবকুমার মণ্ডল, এএসআই দেবাশিস গায়েন ও দুই কনস্টেবল রবিউল খান ও তারকনাথ দলুই ছুটে গাড়িটির সামনে যান। পুলিশ জানিয়েছে, পুলকারটিতে কেজি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মিলিয়ে ১২ জন ছাত্রী ছিল। আগুনে এক ছাত্রীর কিছুটা চুল পুড়ে গিয়েছে। পুড়ে গিয়েছে চার জন ছাত্রীর স্কুলের ব্যাগ।

পুলিশকর্মীরা জানান, তাঁরা গিয়ে দেখেন, ছোট গাড়িটির সামনের আসনে ভয়ে সিঁটিয়ে বসে আছে দুই ছাত্রী। তাদের পিছনে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। পিছনের আসনে বসা বাকি ১০ জন ছাত্রী ভয়ে চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করেছে। গাড়ির ভিতরটা ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। একা হাতে ছাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চালক। এই অবস্থা দেখে কয়েক জন রিকশাচালককে রাস্তার পাশের বড় নর্দমা থেকেই জল তুলে গাড়িতে ঢালতে বলে পুলিশ। তত ক্ষণে ছাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে আনেন পুলিশকর্মীরা। রাস্তার পাশের দোকান থেকে বালতি নিয়ে নর্দমা থেকে জল তুলে গাড়িতে ঢালতে থাকেন রিকশাচালকেরা। আগুন নেভে।

পুলিশ জানায়, ছাত্রীদের গাড়ি থেকে বার করার পরেই খবর পাঠানো হয় তাদের স্কুলে। সেখান থেকে শিক্ষিকারা জিটি রোডে চলে আসেন। ছাত্রীদের নিয়ে গিয়ে স্কুলের ‘সিক রুম’-এ রাখা হয়। স্কুলের প্রিন্সিপাল এস কে শ্রীবাস্তব বলেন, “সঙ্গে সঙ্গে ওই ছাত্রীদের অভিভাবকদের খবর পাঠানো হয়েছে। তাঁরা এসে দেখা করার পরে ওই ছাত্রীরা পরীক্ষা দিতে বসেছে। কেউ তেমন আহত হয়নি।” কেজি-র এক ছাত্রী কুশালী নন্দীর বাবা গৌতম নন্দীর অভিযোগ, “ক’দিন ধরেই ভাবছিলাম, আর ওই পুলকারে ওদের স্কুলে পাঠাব না। রোজই গাড়িটার কোনও না কোনও সমস্যা দেখা দিত। মালিককে বলেও কোনও লাভ হয়নি।”

তবে ওই গাড়ির মালিক বলে পরিচিত স্থানীয় বাসিন্দা রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এ দিন বিকেলে গাড়িটির মালিকানা অস্বীকার করেন। এক সময় হাওড়া জেলা পুলকার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা রাজাবাবু বলেন, “গাড়িটি আমার নয়। এটা ভুল বলা হচ্ছে। তবে যান্ত্রিক ত্রুটি তো হতেই পারে। অভিভাবকেরা সব সময়ে দামি গাড়ি চান।” কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী পুলকারে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ও প্রাথমিক চিকিৎসার বন্দোবস্ত থাকার কথা। ওই গাড়িটিতে সে সব ছিল না। এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি রাজাবাবু। এমনকী, ওই গাড়িটি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্তও নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এর আগে সোমবার দুপুরে স্কুল থেকে ফেরার পথে ছাত্রীভর্তি একটি পুলকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সালকিয়া বাঁধাঘাটের কাছে কয়েক জন পথচারীকে ধাক্কা মারে। পুলিশ পুলকার চালককে গ্রেফতার করে। তবে ওই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।

হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার অজেয় রাণাডে বলেন, “পুলকারের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। সমস্ত কিছু পরীক্ষা করে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা চালুরও পরিকল্পনা রয়েছে। সেটা না থাকলেই পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

accident pool car
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE