টোটো। যা নিয়ে বিতর্ক।
অটো বনাম টোটো চালকদের মধ্যে গোলমাল অব্যাহত হুগলিতে। বুধবার ফের দু’পক্ষের মারামারিতে উত্তেজনা ছড়ায় চন্দননগর স্টেশন-চত্বরে। জখম হয়েছেন বেশ কয়েকজন। চার জনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। ঘটনার জেরে বেশ কিছুক্ষণ গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, মফ্ফস্বলের পরিবহণ ব্যবস্থায় নতুন আমদানি হওয়া টোটো গাড়ি নিয়ে প্রশাসন চুপ করে থাকাতেই এ ধরনের গোলমাল তৈরি হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ চন্দননগর কোর্টঘাটে একটি অটোয় তিনজন যাত্রী উঠে বসেছিলেন। চালক আরও দু’জন যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেই সময় একটি টোটো এসে দাঁড়ালে অটোর যাত্রীরা নেমে তাতে উঠে পড়েন। এ নিয়ে ওই অটো ও টোটো চালকের মধ্যে বচসা বেধে যায়। সেই সময় আরও কয়েকজন টোটো চালক সেখানে চলে আসেন। অভিযোগ, রাজু নাথ নামে ওই অটোচালককে বেধড়ক মারধর করে তারা। অটোতেও ভাঙচুর করা হয়। রাজু কোনওক্রমে সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে চন্দননগর স্টেশনে পৌঁছে অন্য অটোচালকদের ঘটনাটি বিষয়টি জানান। তাঁকে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
রাজুর কাছে সব শুনে ক্ষেপে যান অটো অটোচালকেরা। সকাল ১১টা নাগাদ স্টেশনের বাইরে টোটো চালকদের ঘিরে ধরেন তাঁরা। কেন রাজুকে মারধর করা হল, তা জানতে চান তাঁরা। দু’পক্ষে তুমুল বাদানুবাদ শেষে মারামারিতে পরিণত হয়। অভিযোগ, তিনটি টোটোয় ভাঙচুর চালায় অটোচালকেরা। কয়েক জন জখম হন। তাঁদের মধ্যে তিনজন টোটোচালককে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিত্সার পরে এক জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও লক্ষ্মণ বসাক এবং সুব্রত বাগ নামে দুই টোটোচালক হাসপাতালে।
ভাঙচুর করা অটো।
লক্ষ্মণবাবু বলেন, ‘‘স্টেশনের বাইরে গাড়ি দাঁড় করাতেই অটোচালকেরা আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাস্তায় ফেলে কিল, চড়, ঘুসি মারা হয়।’’ ঘটনার জেরে এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রীরা রিকশায়, হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে চন্দননগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। দু’পক্ষই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে। এসডিপিও (চন্দননগর) সৈকত ঘোষ বলেন, ‘‘দু’পক্ষের অভিযোগই পেয়েছে পুলিশ। তদন্ত করে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী বলেন, ‘‘একটা ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’’ চন্দননগর-বৈদ্যবাটি রুটের অটোরকিশা মালিক সংগঠনের সম্পাদক শেখ মহম্মদ আজাদ বলেন, ‘‘একা পেয়ে আমাদের এক অটোচালককে মারধর করে টোটো চালকেরা। আমাদের ছেলেরা এ নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিল ওদের সঙ্গে। তখনই ঝামেলা শুরু হয়। আমরা পুলিশকে সব জানিয়েছি।’’
মাস কয়েক ধরে হুগলির বিভিন্ন এলাকায় টোটো চলাচল করছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ব্যাটারিচালিত এই গাড়ি পরিবেশ-বান্ধব হলেও রাস্তায় চলার কোনও ছাড়পত্র নেই। সরকারকে করও দিতে হয় না। অন্যদিকে, অটোচালকদের বক্তব্য, তাঁরা সরকারকে কর দিয়ে গাড়ি চালান। বহু অটোই ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে কেনা। সেই ঋণের বোঝা রয়েছে তাঁদের ঘাড়ে। অথচ টোটোর কোনও খরচ কার্যত নেই। তারা অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহণ করছে। এতে অটোচালকদের লোকসান হচ্ছে। তাঁদের দাবি, প্রশাসন অবিলম্বে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুক। পাল্টা টোটোচালকদের অভিযোগ, জেলায় অনেক বেআইনি অটো চলে। তার কী হবে?
তবে দু’পক্ষই চায় এ ব্যাপারে প্রশাসনিক সমাধান। যদিও সম্প্রতি একটি জনস্বার্থ মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট বালি থেকে রিষড়ার মধ্যে জিটি রোডে টোটো চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
ছবি: তাপস ঘোষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy