মোদীর সরকারের শপথ গ্রহণ উপলক্ষে লাড্ডু বিলি। সোমবার বেড়াচাঁপায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
বাইরে তখন বেশ বৃষ্টি। তার মধ্যেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ছেন পথচারীরা। বাজার হাট থেকে বাস স্ট্যান্ড কিন্তু জমজমাট। টিভিতে তখন চলছে দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। সোমবার বিকেলে তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার মোড়ে এলসিডি স্ক্রিনে নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রণ অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় হয়েছিল দেখার মতো।
এ দিন বিকেলে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার চাঁদপাড়া বাজারে যশোহর রোডের ধারে বিজেপির তরফে বড় এলসিডি টিভি লাগানো হয়। সঙ্গে ছিল চোঙার ব্যবস্থাও। বিকেলের পর থেকে সেখানে লোকজন আসতে শুরু করেন। কয়েকশো লোকের ভিড় জমেছিল ওই মোড়ে। প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান দেখতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পড়েন পথ চলতি মানুষও। থমকে যান গাড়ি চালকেরাও। রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করানোর জায়গা ছিল না। তাঁরা গাড়ির গতি কমিয়ে দিয়ে এক পলক দেখে নেন। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের কিছুক্ষণ আগে থেকেই টিভি চালানো হয়েছিল। অনেক ক্ষণ ধরেই উৎকণ্ঠা ছিল, রাষ্ট্রপতি ভবনে কখন মোদীকে দেখা যাবে। তারপরে মোদীর রাজকীয় প্রবেশ টেলিকাস্ট হতেই হাততালিতে ফেটে পড়ে জনতা। তার পরেই অবশ্য চুপ সবাই। মন দিয়ে শুনছিলেন নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ। শেষ হতেই ফের হাততালির আওয়াজে কান পাতা দায়। রাস্তা দিয়ে ভ্যানে করে যাচ্ছিলেন গৌরব বিশ্বাস নামে এক বৃদ্ধ। রাস্তায় স্ক্রিন দেখে ভ্যানচালককে অনুরোধ করলেন দাঁড়াতে। রাস্তায় দাঁড়িয়েই চোখ রাখলেন টিভিতে। তিনি বললেন, “আশা করছি, আমাদের মতো বৃদ্ধদের জন্য উনি কিছু করবেন।”
মোদীর শপথের পরে এক এক করে শপথ নিচ্ছিলেন ক্যাবিনেট সদস্যেরা। তার মধ্যে ফের বৃষ্টি নামে। ছাতা মাথায় দিয়ে অনুষ্ঠান দেখেন মানুষ। শপথগ্রহণ শেষ হয়ে গেলে চাঁদপাড়া বাজারে মিছিল শুরু হয়। সবাইকে লাড্ডু খাওয়ানো হয় বিজেপির তরফে। এ দিন হাবরা শহরেও বাণীপুর থেকে জয়গাছি পর্যন্ত মিছিল বের হয়। মিছিলে ফুলের বৃষ্টি করা হয়। শঙ্খধ্বনি হয়। পথচারীদের মধ্যে লাড্ডুও বিতরণ করা হয়।
বসিরহাটেও মঞ্চ বেঁধে, মাইক লাগিয়ে, চেয়ার পেতে মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা করে বিজেপি। বসিরহাট টাউনহল চত্বরে বড় পর্দায় মোদির ছবি ভেসে উঠতেই হাততালিতে ফেটে পড়ে জনতা। নতুন প্রধানমন্ত্রী শপথ নিতে শুরু করলেই দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে শুরু হয় গেরুয়া আবির খেলা, বাজি ফাটানো ও লাড্ডু বিতরণ।
জায়েন্ট স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে ওই অনুষ্ঠান।
বনগাঁর চাঁদপাড়ায় নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।
বসিরহাটের অনেক আগেই অবশ্য এ দিন দুপুরে দেগঙ্গার বেড়াচাঁপায় উপচে পড়ছিল ভিড়। শুরু হয়েছিল পতাকা ফেস্টুন নিয়ে বাজনা বাজানো, নাচ-গা, লাড্ডু বিতরণ। বেড়াচাঁপা হাটখোলা থেকে দলীয় সমর্থকেরা মোদির ছবি এবং ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করে দেগঙ্গার কার্তিকপুর যান। সেখানে দেশের মঙ্গল এবং মোদি সরকারের সাফল্য কামনা করে যজ্ঞের আয়োজন করা হয়। দেগঙ্গার বিজেপি ব্লক সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নুরনগর পঞ্চায়েতের বিজেপির প্রধাণ তরুণকান্তি ঘোষ বলেন, “মিছিল থেকে ১০ হাজার লাড্ডু জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হয়। কার্তিকপুরে বড় পর্দায় মোদির শপথ অনুষ্ঠান দেখানো হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার স্টেট বাস স্ট্যান্ড, কুলপি ও কাকদ্বীপ বাসস্ট্যান্ডে কোথাও টিভি, জায়েন্ট স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছিল মোদীর শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান। প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডেই ছিল দেড় থেকে দু’হাজার লোকের ভিড়। ডায়মন্ড হারবার বাসস্ট্যান্ডে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিজেপি সমর্থকেরা একে অপরের কপালে গেরুয়া আবির দিয়ে আলিঙ্গন করছিলেন পরস্পরকে। পথযাত্রীদের কপালেও গেরুয়া আবির লাগিয়ে দিচ্ছিলেন তারা। তাঁদের লাড্ডু দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন বিজেপি সমর্থকেরা।
ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা ঋতু পাহাড়ি, চন্দ্রবলী হালদার, মৌসুমী মহাপাত্র বলেন, “এই সরকারের কাছে প্রত্যাশা অনেক বেশি। এই সরকার যুব সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে, সারদাকাণ্ডে প্রতারিত হয়েছে যারা, তাদের ব্যাপারেও নজর দেবে বলেও আশা। দিন দিন মেয়েদের উপর নির্যাতন, শিশু পাচার বেড়ে যাচ্ছে। সে দিকেও এই সরকার নজর দেবে। মূল্যবৃদ্ধি কমাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy