তৈরি হয়ে গিয়েছে এক লক্ষ গ্যালন জলধারণের ক্ষমতাসম্পন্ন ওভারহেড রিজার্ভার। তিনটি পাম্পহাউস। যার মধ্যে আবার দুটি চালুও হয়ে গিয়েছে। জল সরবরাহরকারী পাইপ বসানোর কাজও সারা। শুরু হয়ে গিয়েছে জল সরবরাহ। বাকি ছিল শুধু বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের সংযোগ দেওয়ার কাজ। কিন্তু পরিকাঠামো তৈরির এক বছর কেটে গেলেও বাগনানের খালোড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ওই কাজ এখনও না হওয়ায় বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি বিশবাঁও জলে।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের বদলে রাস্তার ধারে যত্রতত্র ট্যাপ বসানো হয়েছে। কোথাও আবার দু’টি ট্যাপ কলের মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৫০-৭০ ফুট। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতে টাকা দিয়ে কেউ কেউ ওই পাইপ লাইন থেকে অবৈধ ভাবে বাড়ির কাছেই সংযোগ নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অভিযোগ, বেআইনি ও অপরিকল্পিত ভাবে জলের ট্যাপ বসানোয় আগের জল সরবরাহের ব্যবস্থার ওপর চাপ পড়ছে। পাইপ লাইনের সর্বত্র ঠিকঠাক জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে সমস্যায় পড়েছেন খালোড় পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ। সর্বোপরি পানীয় জলের অপচয়ও হচ্ছে ব্যাপক ভাবে। বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত খালোড় গ্রাম পঞ্চায়েত ও বাগনান-১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা পুরো বিষয়টি নিয়ে উদাসীন বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
খালোড় পঞ্চায়েত ও বাগনান-১ পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮-’০৯ সালে জল প্রকল্পটি তৈরি শুরু করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। খরচ হয় তিন কোটি টাকা। তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিল পঞ্চায়েত সমিতি। রিজার্ভার তৈরি করা হয় রামচন্দ্রপুরে। রামচন্দ্রপুর, গোবর্ধনপুর ও খালোড় রেগুলেটেড মার্কেটের কাছে তৈরি হয় পাম্পহাউসগুলি। প্রায় ৪০ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ পাইপ লাইন বসানোর কাজও শেষ হয়ে যায়। পাইপ লাইনে জল সরবরাহও শুরু হয় দু’টি পাম্পহাউস থেকে। পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের প্রক্রিয়া শুরু করে দেয় খালোড় পঞ্চায়েত।
কথা ছিল, উপভোক্তাদের কাছ থেকে এককালীন ৫০০ টাকা ও মাসিক ৬০ টাকা করে নেওয়া হবে। জল সংযোগের আবেদনপত্রও নেওয়া হয়। ২৩০০টি আবেদনপত্র জমাও পড়েছিল। কিন্তু এর পরই পঞ্চায়েত নির্বাচনের কারণে বাকি কাজ বন্ধ হয়ে যায় বলে তৎকালীন বাম বোর্ডের দাবি। নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। অভিযোগ, তারপরই যত্রতত্র ট্যাপ বসায় তৃণমূল। গোবর্ধনপুরে গিয়ে দেখা গেল ৭০ ফুটের ব্যবধানে বসানো হয়েছে দু’টি ট্যাপ।
এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে জানালেন, দু’হাজার টাকা দিয়ে তাঁরা এই ট্যাপ পেয়েছেন। প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের শ্রাবন্তী বোস বলেন, “এ ভাবে খালোড় পঞ্চায়েত এলাকায় অন্তত ১৫০টি ট্যাপ বসানো হয়েছে। ফলে সর্বত্রই জলের সমস্যা তৈরি হয়েছে। জল কম আসার পাশাপাশি তা বেশিক্ষণ থাকছেও না। অথচ এক বছর কাটতে চললেও বাড়ি বাড়ি সংযোগ দেওয়ার ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
শীতলপুরের বাসিন্দা অরূপ মিত্র, বাবুয়া মাইতির কথায়, “বাড়িতে সংযোগ পাওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলাম। এখনও তার কোনও সাড়াশব্দ নেই।” খালোড় পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান তৃণমূলের মিঠু পাত্র অবশ্য অবৈধ জল সংযোগের কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাঁর বক্তব্য, “আমরা ঘটনাটি জানার পরই সংযোগ ছিন্ন করে দিয়েছি। আমাদের জানার বাইরে হয়তো কিছু থেকে যেতে পারে। খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।”
বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে বাগনান-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নয়ন হালদার বলেন, “দ্রুত যাতে ওই কাজ করা যায় তার ব্যবস্থা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy