Advertisement
E-Paper

বকেয়ার জন্য পুলিশে চটকল শ্রমিকেরা

অবসরের পর ন্যায্য বকেয়া না পাওয়ায় চটকল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন হুগলির চন্দননগর গোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিকরা। এর আগে ‘অবসরপ্রাপ্ত জুটমিল মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করে প্রাপ্য আদায়ের আন্দোলন করছিলেন তাঁরা। কিন্তু মালিকের বিরুদ্ধে চন্দননগর থানায় লিখিত অভিযোগ এই প্রথম। গোন্দলপাড়া মিল কর্তৃপক্ষের এক প্রতিনিধি অবশ্য দাবি করেছেন, ওই শ্রমিকদের কোনও বকেয়া পাওনা নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০০:৩০

অবসরের পর ন্যায্য বকেয়া না পাওয়ায় চটকল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন হুগলির চন্দননগর গোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিকরা।

এর আগে ‘অবসরপ্রাপ্ত জুটমিল মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করে প্রাপ্য আদায়ের আন্দোলন করছিলেন তাঁরা। কিন্তু মালিকের বিরুদ্ধে চন্দননগর থানায় লিখিত অভিযোগ এই প্রথম। গোন্দলপাড়া মিল কর্তৃপক্ষের এক প্রতিনিধি অবশ্য দাবি করেছেন, ওই শ্রমিকদের কোনও বকেয়া পাওনা নেই।

বকেয়া পাওয়ার দাবি তুলে ধরতে ওই চটকলের প্রায় শ’খানেক কর্মী এ বছর ভোট বয়কটও করেছেন। তাঁদের দাবি, ভোট আসে-যায়, কিন্তু তাঁদের বকেয়া ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখেননি কেউ। গোন্দলপাড়া জুটমিলের এক সময়ের শ্রমিক নন্দকিশোর সাউ, নিতাই খান, রামলক্ষণ সাউরা এবার কেউই ভোটের লাইনে দাঁড়াননি।

অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের অনেকের শরীর অশক্ত। কেউ আবার দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। ন্যূনতম চিকিৎসা করাতে পারেন না। সলিলকুমার দাস তাঁদেরই এক জন। ২০১২ সালে অবসর নেন। মিল কর্তৃপক্ষের থেকে তাঁর বকেয়া ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। চন্দননগর আইনি সহায়তা কেন্দ্রের সাহায্যে তিনি বকেয়ার জন্য আবেদন করেও পাননি। তাঁর স্ত্রী বীথিকা দাস অসুস্থ। সলিলবাবুও সুস্থ নন। নিজের এবং স্ত্রীর কথা জানিয়ে তিনি বহুবার মিল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। সলিলবাবু বলেন, “কী হবে ভোট দিয়ে? ভোট মিটে গেলেই তো রাজনৈতিক দলগুলি তাঁদের প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যাবেন।”

গোন্দলপাড়া জুটমিলের কুলি লাইনের বাসিন্দা নিমাই বোলেল ৩০ বছর কাজ করে ২০১০ সালে অবসর নেন। গ্র্যাচুইটি বাবদ পাওনা ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসে, সুগার, কিডনির সমস্যাও ধরা পড়ে। কিন্তু আর্থিক কারণে চিকিৎসা করাতে পারেননি। এইসব জানিয়ে ২০১০ থেকে বারবার মিল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। বকেয়া পাননি। শেষ পর্যন্ত গত অক্টোবরে চন্দননগরের আইন সহায়তা কেন্দ্র তাঁর পাশে দাঁড়ায়। ওই সংস্থার তরফে চন্দননগর শ্রম কমিশনারের কাছে বিষয়টি জানানো হয়। নিমাইবাবুর বকেয়া যাতে দ্রুত পান সেই সংক্রান্ত সমস্ত নথি জমা দেওয়া হয় কমিশন দফতরে।

এর পরেই সংশ্লিষ্ট দফতর নড়েচড়ে বসে। মিল কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। তাতে কাজ না হওয়ায় হুগলির জেলাশাসককে ওই শ্রমিকের বকেয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য শ্রম দফতর পাঠিয়ে দেয়।

অবসরপ্রাপ্ত জুটমিল মঞ্চ-এর আহ্বায়ক গৌতম গুহরায় এর সময় গোন্দলপাড়া জুটমিলেই কাজ করতেন। তাঁর প্রাপ্যও বাকি। গৌতমবাবুর আক্ষেপ, “মিল শ্রমিকদের বেশির ভাগই লেখাপড়া শেখেননি। তাঁদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে মিল মালিকেরা শ্রমিকদের ঠকিয়ে চলেছেন।”

চন্দননগরের ডেপুটি লেবার কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন,“আমরা বহু ক্ষেত্রেই মিল কর্তৃপক্ষকে শোকজ করে জেলাশাসকের কাছে শ্রমিকদের বকেয়ার বিষয়গুলি পাঠিয়ে দিয়েছি।” যদিও গোন্দলপাড়া জুটমিলের অন্যতম মানেজার মেহন্ত কুমার সুলতানিয়া বলেন,“অবসর নেওয়া শ্রমিকদের কোনও বকেয়া পাওনা নেই। আমরা ডেপুটি লেবার কমিশনারকে বিষয়টি জানিয়েছি।”

শ্রমিকদের বকেয়া পাওনার ব্যাপারে অবশ্য আলোচনায় বসার আশ্বাস দিয়েছেন আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থী তথা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি দোলা সেন। তিনি বলেন, “গোন্দলপাড়া জুটমিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়ার বিষয়টি নতুন নয়। বামফ্রন্ট ৩৪ বছরে রাজ্যের বহু জুটমিলের শ্রমিকদের বকেয়া নিয়ে কিছুই করেনি। ১৬ তারিখ ভোটের ফল বের হওয়ার পরই আমরা আলোচনায় বসব।”

chandannagar jute mill worker salary
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy