Advertisement
E-Paper

বনগাঁয় চালু হচ্ছে বৈদ্যুতিক চুল্লি

বনগাঁ শহরের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শ্মশানে একটি বৈদ্যুতিক চুল্লির। অবশেষে বনগাঁবাসীর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। বনগাঁ পুরসভার উদ্যোগে নির্মীয়মাণ বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ। সোমবারই হয়েছে চুল্লি পুজো।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০২:০৬
এই শ্মশানেই বসবে চুল্লি।—নিজস্ব চিত্র।

এই শ্মশানেই বসবে চুল্লি।—নিজস্ব চিত্র।

বনগাঁ শহরের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শ্মশানে একটি বৈদ্যুতিক চুল্লির। অবশেষে বনগাঁবাসীর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। বনগাঁ পুরসভার উদ্যোগে নির্মীয়মাণ বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ। সোমবারই হয়েছে চুল্লি পুজো। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, ২২ জুন ওই চুল্লির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের কথা। তারপরেই ব্যবহারের জন্য তা খুলে দেওয়া হবে। বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় তাঁরা খুশি।

১৯৫৪ সালে বনগাঁ পুরসভা তৈরি হলেও এখানে এত দিন পর্যন্ত শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি ছিল না। পুরসভা হোক বা বিধানসভা যে কোনও নির্বাচনের আগে যা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রচারের অন্যতম বিষয় বস্তু ছিল। বহু বছর ধরে মানুষ প্রতিশ্রুতি পেতে পেতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন।। শহরের একমাত্র শ্মশানটি স্থানীয় খয়রামারি এলাকায় ইছামতী নদীর ধারে। সেই পুরনো শ্মশানেই বসেছে বৈদ্যুতিক চুল্লি। ২০১০ সালের পুরভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। চেয়ারম্যান হন তৃণমূলের জ্যোত্‌স্না আঢ্য। ওই সময়ের বনগাঁর তৃণমূল বিধায়ক গোপাল শেঠ ও সাংসদ গোবিন্দচন্দ্র নস্করের বিধায়ক ও সাংসদ তহবিলের টাকায় শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। শিলান্যাস করেন তত্‌কালীন কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায়। গোপালবাবু দেন ৪০ লক্ষ টাকা। সাংসদ দেন ৩৫ লক্ষ।। রাজ্যের পুর দফতর দিয়েছে ৮০ লক্ষ টাকা।।বকিটা পুরসভার তহবিল থেকে খরচ হয়।

জ্যোত্‌স্নাদেবীর অভিযোগ, তত্‌কালিন বাম সরকারের কাছে এ জন্য অর্থ সাহায্য চেয়েও পাওয়া যায়নি। পরে বিধায়ক- সাংসদ তহবিলের টাকায় এবং পুরসভার নিজস্ব তহবিলের অর্থে বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ শেষ হয়েছে। পুরমন্ত্রী ফিরাদ হাকিমও তাঁর দফতর থেকে অর্থ সাহায্য করেছেন। পুরপ্রধানের কথায়, “এলাকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারাটা আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ভাল লাগছে মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি মেটাতে পেরে।” পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, বৈদ্যুতিক চুল্লি বসাতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। শ্মশানটির নাম দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত ভূপেন্দ্রনাথ শেঠের নামে। শুধু মাত্র শহরেই নয়, গোটা মহকুমাতেই বৈদ্যুতিক চুল্লি ছিল না। এত দিন চুল্লি না থাকায় মহকুমার বহু মানুষ হালিশহর, নবদ্বীপ বা কলকাতায় শবদেহ নিয়ে যেতেন। তাতে পরিবহণ খরচ যেমন অনেকট হত, সময়ও বেশি লাগত। এখন থেকে সেই সমস্যা আর থাকবে না।

পুর কর্তৃপক্ষের আশা, শুধু মহকুমা নয় নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকেও এ বার এখানে শবদেহ আসবে। কিছু দিন আগেও খয়রামারি শ্মশানের পরিকাঠামো বেহাল ছিল। বর্ষার সময়ে নদীর জল ঢুকে পড়ত শ্মশান চত্বরে। জল সরতে বেশ কিছু দিন সময় লেগে যেত। ফলে সত্‌কারের কাজে এসে মানুষকে চরম বিপাকে পড়তে হত। বৃষ্টিতে শবদেহ পোড়ানোর জ্বলন্ত কাঠ নিভে যেত। খোলা আকাশের নীচে শবদেহ পোড়ানোর ফলে দূষণও ছড়ায়। বর্তমান পুরবোর্ড নদীর ধারে পাঁচিল দিয়েছে। ফলে নদীর জল এখন ঢুকে পড়ে না। শ্মশান চত্বর মাটি ফেলে উঁচু করা হয়েছে। শ্মশানের পরিকাঠামোর আরও নানা সংস্কার করেছে পুরসভা। আগে শবদেহ আসত দিনে গড়ে ৫-৭টি। পরিকাঠামো উন্নতির পরে এখন শবদেহ আসে ১০-১৪টি। বৈদ্যুতিক চুল্লি চালু হয়ে গেলে সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।

জ্যোত্‌স্নাদেবী বলেন, ‘‘বৈদ্যুতিক চুল্লিতে শবদেহ পোড়ানোর খরচ ১০০০-১২০০ টাকার মধ্যে থাকবে। যাতে গরিব মানুষের কোনও অসুবিধা না হয়, তা-ও দেখা হবে।” গোপালবাবু বলেন, ‘‘উন্মুক্ত পরিবেশে মৃতদেহ পোড়ানোর ফলে তীব্র দূষণ ছড়ায়। দুর্গন্ধে বাড়িতে টেঁকা য়ায় না। খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় কখনও কখনও।’’ এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘হাসপাতালের মর্গে থাকা দীর্ঘদিনের পচা গলা শবদেহ পোড়ানোর সময়ে সব থেকে বেশি দূর্গন্ধ বেরোয়। বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর জন্য পুরসভাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার মানুষজন।

bongaon electric furnace crematorium
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy