Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরির উদ্যোগ ডোমজুড়ে

বর্জ্য পদার্থ থেকে জৈব সার তৈরিতে উদ্যোগী হল হাওড়ার ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতি। এই প্রকল্পের কাজ করার জন্য প্রাথমিকভাবে ২৪ জন যুবক কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। জেলার পঞ্চায়েত সমিতিগুলির মধ্যে ডোমজুড়ই প্রথম এই কাজে এগিয়ে এসেছে বলে দাবি ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের।

এখানেই গড়ে উঠবে প্রকল্প। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

এখানেই গড়ে উঠবে প্রকল্প। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৪ ০১:০৪
Share: Save:

বর্জ্য পদার্থ থেকে জৈব সার তৈরিতে উদ্যোগী হল হাওড়ার ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতি। এই প্রকল্পের কাজ করার জন্য প্রাথমিকভাবে ২৪ জন যুবক কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। জেলার পঞ্চায়েত সমিতিগুলির মধ্যে ডোমজুড়ই প্রথম এই কাজে এগিয়ে এসেছে বলে দাবি ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের।

ডোমজুড়ের বিডিও তমোঘ্ন কর বলেন, “কয়েক বছর আগেই এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে সেটি আটকে ছিল। আবার নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই উৎপাদন শুরু হবে।” তমোঘ্নবাবুর দাবি, বর্তমান বাজারে জৈব সারের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই প্রকল্পটি শুরু হলে অনেক বেকার যুবক যেমন কাজ পাবেন তেমনই সুনাম বাড়বে ডোমজুড়ের।

ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া জেলা পরিষদের আর্থিক সহযোগিতায় ২০০৯ সালে এই প্রকল্পটির আলাদা করে পঞ্চায়েতগত ভাবে রূপরেখা তৈরি হয়েছিল। বেগড়ি, দক্ষিণ ঝাঁপড়দহ, উত্তর ঝাঁপড়দহ, ডোমজুড় ও পাবর্তীপুর-এই পাঁচটি পঞ্চায়েতে এই সার তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। সিদ্ধান্ত হয়, পরিকাঠামোগত সুবিধা পাওয়ার জন্য পাঁচটি পঞ্চায়েত একসঙ্গে মিলে কেন্দ্রীয় কোনও জায়গায় সার তৈরির কাজ করবে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্মল ভারত অভিযানের অন্তর্গত এই প্রকল্পের জন্য পঞ্চায়েত পিছু ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। বর্জ্য পদার্থ থেকে সার তৈরির জন্য ডোমজুড়ের বানীশ্রী সিনেমা হলের উল্টো দিকে ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতিরই একটি পতিত জমিকে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু সেই সময়ে প্রকল্পটির বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করা যায়নি। পুরো কাজটি কোন পদ্ধতিতে হবে, সেই নিয়ে বিস্তারিত তথ্য না মেলায় সাময়িক ভাবে ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল প্রকল্পটি। সেই সময় ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতিতে আরও বেশি আসনে জিতে ক্ষমতায় ফিরে আসে তারা। তারপরেই ফের এই প্রকল্পটি শুরু করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সার তৈরির জন্য চিহ্নিত করা পতিত জমিতে সার কারখানার জন্য নির্মাণকাজ। প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির জন্য কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী চলতি মাসের প্রথম দিকে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিতে যান পঞ্চায়েত সমিতির একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে প্রকল্পটির কর্মপদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ দীপক মুখোপাধ্যায় জানান, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে তাঁদেরই প্রকল্পের প্রয়োজনে নিয়োগ করা হবে। লোকসভা নির্বাচনের জন্য সার কারখানার জন্য চিহ্নিত জমিতে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকলেও সেটি খুব শীঘ্রই শুরু হবে বলে জানান তিনি। ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বর্ণালী ঘোষ বলেন, “ওই পতিত জমিটিকে আমরা মাটি ফেলে ভরাট করব। পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গেলেই সার তৈরির এই প্রকল্প শুরু হয়ে যাবে।”

ডোমজুড় বিডিও দফতর থেকে এই প্রকল্পটির দায়িত্বে রয়েছেন সুমন্ত মণ্ডল নামে ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা। তিনি জানান, হাওড়া জেলায় এই উদ্যোগ আগে হয়নি। সুমন্তবাবুর দাবি, শুধু হাওড়াই নয়, বাংলার অন্য জেলাতেও এই প্রকল্পের সংখ্যা হাতে গোনা। তিনি জানান, যে পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকাকে নিয়ে কাজ শুরু হচ্ছে, সেই এলাকার প্রতিটি বাড়িতে দু’টি করে আবর্জনা রাখার জন্য বালতি দেওয়া হবে। তার একটিতে পচনশীল ও আর একটিতে অপচনশীল বর্জ্য রাখতে হবে। পরে এই প্রকল্পের কর্মীরা তিনচাকার ভ্যানগাড়ি করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই বর্জ্য সংগ্রহ করে প্রকল্প এলাকায় নিয়ে আসবেন। সেই গাড়ির মধ্যে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য রাখার দু’টি আলাদা জায়গা থাকবে। সেই বর্জ্যগুলি গোবরজল, কাদার সঙ্গে মেখে প্রথমে ১৫ দিন রেখে দেওয়া হবে। তারপরে ওই মিশ্রণটিকে আবার ভাল করে নাড়িয়ে আরও ১৫ দিন রেখে দিতে হবে। তারপরে ওই মিশ্রণের মধ্যে কেঁচো ছেড়ে দিতে হবে। এর পরেই ওই মিশ্রণ গাছের উৎকৃষ্ট সারে পরিণত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE