Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মোছেনি পোড়া দাগ, ফের ভোট এল নির্দেশখালিতে

গত বছর এক রাতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল সব কিছু। বাসন্তীর নির্দেশখালি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরের দিন ভোরে যে গ্রামে তৃণমূলের লোকজন বাম সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ। প্রায় ৪৫টি বাড়িতে হামলা চালানো হয়। পোড়ান হয় ধানের গোলা। বাড়ি-ভাঙচুর থেকে আসবাব, টাকা-গয়না সব লুঠপাট করা হয় বলে অভিযোগ। আক্রান্ত সব ক’টি বাড়ির বাসিন্দাই মূলত কৃষিজীবী। গত নির্বাচনে স্থানীয় ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েত আরএসপি-র হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল।

এখনও মোছেনি সন্ত্রাসের চিহ্ন। নির্দেশখালি গ্রামে সামসুল হুদার তোলা ছবি।

এখনও মোছেনি সন্ত্রাসের চিহ্ন। নির্দেশখালি গ্রামে সামসুল হুদার তোলা ছবি।

শুভাশিস ঘটক
বাসন্তী শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০১:২৩
Share: Save:

এখনও ভাঙা বাড়ি সারাই করা যায়নি।

আশপাশের কিছু বাড়িতে পোড়া কালো দাগ। মাটির বাড়ির ছাদে কালো প্লাস্টিকের এ দিক-ও দিক ছিঁড়ে গিয়েছে। ঘর থেকে উপরের ছ্যাঁদা দিয়ে আকাশ দেখা যায়। বর্ষায় প্লাস্টিক চুঁইয়ে জল পড়ে।

গত বছর এক রাতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল সব কিছু। বাসন্তীর নির্দেশখালি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরের দিন ভোরে যে গ্রামে তৃণমূলের লোকজন বাম সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ। প্রায় ৪৫টি বাড়িতে হামলা চালানো হয়। পোড়ান হয় ধানের গোলা। বাড়ি-ভাঙচুর থেকে আসবাব, টাকা-গয়না সব লুঠপাট করা হয় বলে অভিযোগ।

আক্রান্ত সব ক’টি বাড়ির বাসিন্দাই মূলত কৃষিজীবী। গত নির্বাচনে স্থানীয় ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েত আরএসপি-র হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। অভিযোগ, এর পরেই এলাকায় ফতোয়া জারি করা হয়েছে। আক্রান্ত পরিবারগুলির চাষ বন্ধ। কয়েকটি পরিবার প্রায় অনাহারে কাটাচ্ছে। শিশুদের চিকিত্‌সারও ব্যবস্থা হচ্ছে না। তৃণমূল নেতাদের হাতে-পায়ে ধরেও কোনও সুরাহা হয়নি।

এক বছর পরে ফের ভোটের সামনে নির্দেশখালি। এলাকায় সব দলই প্রচার করে গিয়েছে। টাঙানো হয়েছে পতাকা, ফেস্টুুন, ব্যানার। তবু, গ্রামবাসীরা যেন নিরুত্তাপ!

হামলার দিন বাড়ি থেকে পালাতে পারেননি এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের আরজেদ লস্কর। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে লোহার শাবল দিয়ে মারা হয়েছিল। এখনও হাঁটু ও কোমর অকেজো। কথা জড়িয়ে যায়। ছেলেরা কলকাতায় কাজ করছেন। গ্রামে ফেরার যো নেই। ফিরলেই ফের মারধর করা হবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। আরজেদের কথায়, “ভোট দিতে যেতে হয় যাব। কিন্তু তাতে আমাদের অবস্থা কি পাল্টাবে?” পড়ন্ত বিকেলে আধভাঙা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মর্জিনা বিবি। কোলে বছর তিনেকের নাতি। সারা মুখে ছোট ছোট ফুসকুড়ি থেকে রস গড়াচ্ছে। যন্ত্রণায় মাঝে-মধ্যেই ঠাকুমার কোলে কেঁদে উঠছে শিশুটি। মর্জিনা বলেন, “আমার বাড়িটা ওরা ভেঙেচুরে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। এখনও সারাই করতে পারিনি। মারের ভয়ে ছেলে বাড়িতে ফিরতে পারছে না। নাতির চিকিত্‌সা করাব যে তার টাকা কোথায়? খাব কী? চিকিত্‌সাই বা করাব কী? ভোট নিয়ে সে ভাবে কিছু ভাবছি না।”

নির্দেশখালি গ্রামে আক্রান্ত বাড়িগুলির প্রায় সব ক’টিতেই এক চিত্র। বাড়ির উপরে কালো প্লাস্টিক। ঘরে মধ্যে ভাঙাচোরা ক’টি আসবাব, ক’টি থালা-বাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। হামলার পরে সরকারি সাহায্য বলতে এক প্যাকেট করে মুড়ি পেয়েছিল পরিবারগুলি। প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় কিছু বাসনপত্র আর চাল-ডাল দিয়েছিলেন। ওই পর্যন্তই। আক্রান্তদের অভিযোগ, এখন আর হাতে নয়, ভাতে মারার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চাষ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জমি-ভিটে বিক্রি করারও সুযোগ নেই। তাঁদের কোনও জমি বা বাড়ি যে কেউ কিনতে পারবে না, তা-ও বকলমে ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। এ ভাবে আসলে জমি-ভিটে ছেড়ে যাওয়ার জন্য চাপ তৈরি করা হচ্ছে তাঁদের উপরে। বিডিও থেকে পঞ্চায়েত প্রধান সবাইকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও প্রতিকার হয়নি।

রাজ্যের শাসক দল প্রথম থেকেই ওই হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান আতাবর মোল্লার দাবি, “ওই এলাকার কোথাও অসুবিধা থাকতে পারে। তবে এত যে সমস্যা, তা আমাকে জানানো হয়নি। বিষয়টি দেখছি।” বাসন্তীর বিডিও কেওয়ার আলি আবার বলেন, “এখন নির্বাচন নিয়ে খুব ব্যস্ত। ভোট মেটার পরে ওদের বিষয়টি দেখব।’’

আপাতত প্রশাসনের দিকেই তাকিয়ে দিন গুজরান নির্দেশখালির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

election nirdeshkhali basanti subhasis ghatak
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE