Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শ্রীরামপুরকে সদর করে নয় পুরসভার সংযুক্তি, নানা প্রশ্ন

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরে কেটে গিয়েছে একটি দিন। কিন্তু ৯টি পুরসভাকে নিয়ে পুনর্গঠিত হতে যাওয়া চন্দননগর পুরসভার চূড়ান্ত রূপ নিয়ে কোনও রূপরেখা না পাওয়ায় নানা প্রশ্নের উত্তর এখনও হাতড়ে বেড়াচ্ছেন হুগলির বিভিন্ন পুরসভার প্রতিনিধিরা। সাধারণ মানুষও শুরু করে দিয়েছেন নানা জল্পনা।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৪ ০০:৩৯
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরে কেটে গিয়েছে একটি দিন। কিন্তু ৯টি পুরসভাকে নিয়ে পুনর্গঠিত হতে যাওয়া চন্দননগর পুরসভার চূড়ান্ত রূপ নিয়ে কোনও রূপরেখা না পাওয়ায় নানা প্রশ্নের উত্তর এখনও হাতড়ে বেড়াচ্ছেন হুগলির বিভিন্ন পুরসভার প্রতিনিধিরা। সাধারণ মানুষও শুরু করে দিয়েছেন নানা জল্পনা।

রাজ্যে চারটি নতুন কর্পোরেশন তৈরির পাশাপাশি যে তিনটি কর্পোরেশনের এলাকা বাড়ানো হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে চন্দননগর। সেখানে হুগলির গঙ্গাপাড়ের ন’টি পুরসভার সংযুক্তি ঘটানো হচ্ছে। আপাতত নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

পুরকর্তারাও মেনে নিয়েছেন কাজটি সময়সাপেক্ষ। আগামী বছরের আগে নতুন কর্পোরেশনের চেহারা চূড়ান্ত হবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা। কিন্তু জেলার অন্দরে মঙ্গলবারই নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে প্রতিনিধিদের।

প্রাথমিক ভাবে চন্দননগর কর্পোরেশনের সঙ্গে লাগোয়া কয়েকটি পুরসভার সংযুক্তি এবং শ্রীরামপুরকে আরও একটি কর্পোরেশনের মর্যাদায় উন্নীত করার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। সেই কর্পোরেশনে বাকি পুরসভাগুলিকে সংযুক্ত করা হবে বলে ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু সোমবার ঘোষণার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।

সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, পুরসভা এবং তার পরিষেবা নিয়ে বহু ক্ষেত্রেই নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকে। পুরসভার মতো একটি ছোট এলাকায় পরিষেবা দিতে পুরকর্তারা অনেক সময়েই ল্যাজেগোবরে হন। এর পরে এক ছাদের তলায় ন’টি পুরসভা এসে গেলে লক্ষ লক্ষ মানুষের চাহিদার সঙ্গে পুরকর্তারা কতটা দক্ষতার সঙ্গে তাল মেলাতে পারবেন?

চন্দননগরের বাসিন্দা গৌতম গুহরায় সংশয়ে নতুন কর্পোরেশনে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি কতটা গুরুত্ব পাবে তা নিয়ে। তিনি বলেন, “পুরসভাগুলি পরিবেশের প্রশ্নটি নানা ভাবে অবহেলা করে থাকে। কর্পোরেশন হলে যেন গুরুত্ব দেওয়া হয়।” উত্তরপাড়ার বাসিন্দা রবিশঙ্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “যাঁদের বাড়তি কর দেওয়ার ক্ষমতা আছে, ঠিক আছে। কিন্তু অনেকেই তো বাড়তি কর দিতে পারবেন না। তাই পুর-কর যেন সকলের সাধ্যের মধ্যে থাকে।”

প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, এখন প্রতিটি পুরসভা নিজস্ব একটি পরিকাঠামো রয়েছে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী পুরসভাগুলি যখন এক ছাদের তলায় চলে আসবে, তখন সেই সব পরিকাঠামোও কাজে লাগানো হবে। এখন কলকাতা কর্পোরেশন এলাকায় যেমন আছে, তেমনই ন’টি পুরসভা এলাকার প্রতিটিতে একটি করে বরো অফিস হবে। ফলে, পুর-পরিষেবার জন্য বাঁশবেড়িয়া বা উত্তরপাড়ার মতো দূরের এলাকার মানুষকে সব সময়ে শ্রীরামপুরে যেতে হবে না। নতুন কর্পোরেশন হলে পরিষেবার তাগিদে নতুন পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। আর্থিক নানা সুযোগ-সুবিধাও বাড়বে।

এখনই অন্য একটি প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। সেটি রাজনৈতিক। কর্পোরেশন হলে মেয়র হবেন এক জন। কিন্তু পুরসভার চেয়ারম্যানদের কী হবে। বর্তমানে ওই ন’টি পুরসভাই রয়েছে তৃণমূলের দখলে। চেয়ারম্যানরা ক্ষমতা হারালে দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বা বিদ্রোহ দেখা দেবে না তো? দলের এক জেলা নেতা অবশ্য সেই সম্ভাবনা মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “মানুষের প্রয়োজনে দল যদি ভিন্ন ভাবে কিছু করে তা খণ্ডন করার জায়গা নেই।”

তবে, রাজ্য সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “পুরসভা এবং পঞ্চায়েত গঠনের সময় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অন্যতম লক্ষ্য ছিল। এখন তো মনে হচ্ছে সেটাই ধাক্কা খাবে।” কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতি দিলীপ নাথ বলেন, “এত বড় এলাকায় পরিষেবা দেওয়া সহজ হবে না।” প্রায় একই মত জেলা বিজেপি-র সহ-সভাপতি স্বপন পালেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

goutam bandyopadhyay srirampur corporation vote
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE