Advertisement
E-Paper

শিলাবৃষ্টিতে ভাঙল জানলার কাচ, ক্ষতি ফসলে মনে হল কেউ ঢিল মারছে ছাদে

চৈত্রের শুরুতেই প্রবল ঝড় আর টানা শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হল হুগলির সদর মহকুমা চুঁচুড়ায়। শিলের ঘায়ে পোলবার রাজহাট এবং গাঁধীগ্রামে বেশ কয়েকটি ময়ূরের মৃত্যু হয়েছে। কয়েক হাজার বাড়ির টিন, টালি, অ্যাসবেসটস ভেঙেছে। তার ছিড়ে বিদ্যুত্‌হীন হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বিকল হয়ে পড়ে টেলিফোন পরিষেবা।

তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৪ ২৩:৪৯
বাড়ির সামনে স্তূপাকৃত শিলা।

বাড়ির সামনে স্তূপাকৃত শিলা।

চৈত্রের শুরুতেই প্রবল ঝড় আর টানা শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হল হুগলির সদর মহকুমা চুঁচুড়ায়। শিলের ঘায়ে পোলবার রাজহাট এবং গাঁধীগ্রামে বেশ কয়েকটি ময়ূরের মৃত্যু হয়েছে। কয়েক হাজার বাড়ির টিন, টালি, অ্যাসবেসটস ভেঙেছে। তার ছিড়ে বিদ্যুত্‌হীন হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বিকল হয়ে পড়ে টেলিফোন পরিষেবা। গেরস্থের পাশাপাশি চাষিরও মাথায় হাত পড়েছে। বিঘের পর ধান, পেঁয়াজ এবং কাঁচা সব্জিও নষ্ট হয়েছে। সরকারি সাহায্যের দাবিতে পাণ্ডুয়ায় পথ অবরোধ হয়। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, তালিকা তৈরি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।

শনিবার বিকেল থেকেই আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা ছিল। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রবল ঝড় শুরু হয়। সঙ্গে শিলাবৃষ্টি। বিশাল বিশাল আকারের শিল পড়তে থাকে। প্রায় আধঘণ্টা ঝড় এবং শিলাবৃষ্টির দাপট চলে। রাজহাট, গাঁধীগ্রাম-সহ আশপাশের ঝোপঝাড় জাতীয় পাখি ময়ূরের মুক্তাঞ্চল। বন দফতর জানিয়েছে, শনিবার সকালে ওই এলাকায় অন্তত ৮টি মযূরকে মরে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। কয়েকটি ময়ূর আহতও হয়েছে। শিলার ঘায়েই পূর্ণবয়স্ক পাখিগুলির মৃত্যু হয়েছে বলে দফতরের অফিসারদের অনুমান। মৃতদেহগুলি ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে গিয়েছে বন দফতর। এর পাশাপাশি হুগলি স্টেশন চত্ত্বরে বেশ কিছু বক এবং চুঁচুড়ার ময়নাডাঙায় অনেকগুলি কাক মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

পাণ্ডুয়া, পোলবা, চুঁচুড়ায় শিলাবৃষ্টির কারণে কৃষিতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে চাষিরা জানাচ্ছেন। কোথাও ছোট ছোট আম গাছ থেকে ঝড়ে গিয়েছে। পেঁপে এবং কলাগাছ নুয়ে পড়েছে। আবার বোরোধান থেকে শুরু করে বাধাকপি, টমেটো, লাউ ফলন নষ্ট হয়েছে বহু জায়গায়।

রাজহাটের বাসিন্দা ৮৬ বছরের জয়দেব কর্মকার বলেন, “রাতে ঘুমিয়েছিলাম। হঠাত্‌ বিকট আওয়াজে ঘুম ভেঙে দেখি টালি ভেঙে শিলে ঘর ভর্তি হয়ে গিয়েছে। বাইরে গিয়ে দেখি এত শিল পড়েছে যে রাস্তা সাদা হয়ে গিয়েছে। এত বড় শিল আগে দেখিনি।” জয়দেববাবু জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে টমেটো, লাউ, শশা, বাধাকপি বুনেছিলেন। পুরোটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গাঁধীগ্রামের বাবলু কল্যা বলেন, “আমাদের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তবে সব থেকে ক্ষতি হল অতগুলি ময়ূরের মৃত্যুতে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।” পোলবার মহেশাপুরের অনিল বেরা ৩ বিঘা জমিতে বাধাকপি, টমেটো, লাউ, কলা বসিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “কলাগাছ মাঝ খান দিয়ে চিরে গিয়ে নুইয়ে পড়েছে। অন্য ফসলও নষ্ট। বহু টাকা ক্ষতি হল।”

নষ্ট কলাচাষ।

বড় বড় শিলের আঘাতে অনেক জায়গাতেই জানলার কাচ, জলের ট্যাঙ্ক, অ্যাসবেসটস, টিন বা টালির চাল ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। বহু মানুষ কার্যত গৃহহীন হয়ে পড়েন। চুঁচুড়ার গোবিন্দ দাস বলেন, “মনে হচ্ছিল, কেউ ইট-পাটকেল মারছে বাড়ির ছাদে। মিনিট কুড়ি ধরে চলল তাণ্ডব। ভয়ে সিঁটিয়ে বসেছিলাম সকলে। পরে দেখি, উঠোন সাদা হয়ে গিয়েছে। যেন বরফ পড়েছে মনে হচ্ছিল।” চুঁচুড়ারই প্রতাপগড়, অরবিন্দপল্লি, কোদালিয়া, তালডাঙা, ময়নাডাঙায় প্রচুর বাড়িতে ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুত্‌, টেলিফোনের চার ছিঁড়ে যায়। রাত থেকেই বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুত্‌হীন হয়ে পড়ে। টেলিফোন পরিষেবা বিকল হয়ে যায়। ওই দুই দফতরের কর্মীরা জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করেন।

এ দিন সকাল থেকে চুঁচুড়ার বিধায়ক তপন মজুমদার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন, “উদ্যানপালন দফতর চাষে ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করে দেখছে। তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেবে প্রশাসন। যাঁদের বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে, তাঁদেরও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে। ছুটির দিন সত্ত্বেও রবিবার সব পঞ্চায়েত, বিডিও অফিস খোলা রাখা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য।”

পাণ্ডুয়া জায়েদ-দ্বারবাসিনী পঞ্চায়েত কামতাই, আলাসিন, ইশাকপুর, সাঁচিতারা-সহ অন্তত দশটি গ্রামে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবিলম্বে সরকারি সাহায্যের দাবিতে এ দিন সকালে সেখানে রাস্তা অবরোধে নামেন গ্রামবাসীরা। পাণ্ডুয়ার বিডিও নবনীপা সেনগুপ্ত এবং ওসি প্রদীপ দাঁ ঘটনাস্থলে যান। তাঁদের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। জেলাশাসক মনমীত নন্দা বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সংশ্লিষ্ট বিডিওরা গিয়েছেন। ক্ষতিগ্রহস্তদের তালিকা তৈরি করে ত্রাণ তহবিল থেকে ত্রিপল দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। চাষিদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”

রবিবার পোলবার বিভিন্ন এলাকায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

hail storm chinsurah tapas ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy