গাইঘাটা থেকে হাবরা পর্যন্ত যশোহর রোডের এমনই অবস্থা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
দূর থেকে দেখলে রাস্তার বদলে শুকিয়ে যাওয়া ডোবা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ পিচ উঠে গিয়ে গোটা রাস্তা জুড়েই এ দিক ওদিক তৈরি হয়েছে গর্ত। রাস্তার এমন দূরবস্থায় দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ। যানচালক থেকে নিত্যযাত্রী সকলেরই দিনের পর দিন চরম ভোগান্তি হলেও এ ভাবেই চলছে। বস্তুত উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থেকে হাবরা পর্যন্ত ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক তথা যশোহর রোডের ১৩ কিলোমিটার অংশ কার্যত মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সব দেখে শুনেও প্রশাসন নির্বাক হয় তাহলে আবেদন জানিয়েও কি ফল হবে?
যশোহর রোডে নিত্য যাতায়াতকারী লোকজনের কথায়, যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে এটাকে জাতীয় সড়ক বলতে লজ্জা হয়। অথচ শুধু যাত্রী পরিবহণই নয়, বাংলাদশের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা। এমনকী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাস চলাচলও এই সড়কে। কিন্তু এটা খুবই আশ্চর্যের যে, জাতীয় সড়ক হওয়া সত্ত্বেও তার রক্ষণাবেক্ষণে প্রশাসনের কারও কোনও তাগিদ নেই। যানচালকদের বক্তব্য, সরকার তাঁদের থেকে রাস্তা গাড়ি চলাচলের জন্য কর নেন। কিন্তু খারাপ রাস্তার কারণে তাঁদের যানবাহনের যন্ত্রাংশের যে ভাবে ক্ষতি হচ্ছে তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে? তা ছাড়া রাস্তার কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় নেওয়ায় যাত্রীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।
যশোহর রোডে নিত্য যশোহর রোডে নিত্য
ওই রাস্তায় রোজ যাতায়াত করতে হয় স্কুলশিক্ষিকা রত্নাবলী বসু বলেন, “রাস্তার কারণে রোজই স্কুলে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। মাঝেমধ্যেই বাসের কন্ডাক্টর-চালকের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ি। কিন্তু পরে বুঝেছি ওরা নিরুপায়। রাস্তার যা অবস্থা তাতে ওদেরও কিছু করার নেই। পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে। বনগাঁ, বাগদা, গোবরডাঙা, গাইঘাটা এমনকী নদিয়ার একটি বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের কাছে সড়ক পথে জেলা সদর বারাসত বা কলকাতায় আসার প্রধান ও একমাত্র মাধ্যম যশোহর রোড। এক বার সড়ক অবস্থা খারাপ হলে সারাতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আবার মেরামত করা হলেও এক বছরের মধ্যেই ফের আগে অবস্থায় ফিরে যায় রাস্তা। গত এক বছরে এই সড়কের উপযুক্ত সংস্কারের দাবি নিয়ে কম বিক্ষোভ হয়নি। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। গত শুক্রবার ফের জাতীয় সড়কের সংস্কারের দাবিতে এসইউসি-র নেতৃত্বে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন কয়েকশো মানুষ। অবরোধের ফলে যানজটে পড়ে নাকাল হতে হয় যাত্রীদের। আধঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ-অবরোধ চলার পরে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে সহকারি বাস্তুকার জয়ন্ত চক্রবর্তী এসে প্রতিশ্রুতি দেন এক মাসের মধ্যে ওই রাস্তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হবে। এর পরেই অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের তরফে অশোক দাস বলেন, “দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে গাইঘাটা থেকে হাবরা পর্যন্ত যশোহর রোডের ১৩ কিলোমিটার অংশ বেহাল। অটোয় আগে যেখানে ২৫ মিনিট সময় লাগত, সেখানে এখন লাগে ৪৫ মিনিট। প্রায় দ্বিগুণ সময় লেগে যাচ্ছে বাসেও। রাস্তায় বেরিয়ে দুর্ভোগের শেষ থাকছে না। যশোহর রোডের সংস্কার ও সম্প্রসারণের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু বাম আমলে রাস্তার পাশে দোকানঘর বা বাড়ি ভেঙে রাস্তা সম্প্রসারণ করা যায়নি। তা ছাড়া জমিরও সমস্যা রয়েছে। তবে আগের বাম সরকারের আমলেই সিদ্ধান্ত হয় যশোহর রোডকে চার লেনের করা হবে। কেন্দ্রীয় ওই প্রকল্পের সমীক্ষাও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় রাজ্যে বিরোধী দল তৃণমূলের বাধায় তা আর বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ। যদিও বর্তমানে রাজ্যে তৃণমূলের সরকার থাকলেও এ বিষয়ে আর কোনও অগ্রগতি হয়নি। এই অবস্থায় রাস্তা সম্প্রসারণ দূরঅস্ত, রাস্তার সংস্কারও না হওয়ায় বর্তমানে এই শনকে যাতায়াত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে জয়ন্তবাবু বলেন, “শুক্রবার থেকে গাইঘাটা থেকে হাবরা পর্যন্ত রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। যা শেষ হতে দিন সাতেক সময় লাগবে। তবে পূর্ণাঙ্গ মেরামতির জন্য এক মাস সময় লাগবে।’’
নিত্য সড়ক যন্ত্রণায় নাকাল জনতা এখন জয়ন্তবাবুর আশ্বাসের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy