দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের খবর এখন কারও অজানা নয়। সেই ঘটনার প্রভাবে স্কুলগুলিও সমস্যায় পড়ে গিয়েছে। একদিকে যেমন শিক্ষকের অভাবে স্কুলের পঠনপাঠনে প্রভাব পড়েছে। তেমনই নতুন অর্থবর্ষের প্রথম মাসে কীভাবে শিক্ষক, করণিক এবং অশিক্ষকদের বেতন দেবেন— তা নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় পড়েছিল স্কুলগুলি। সেই দুশ্চিন্তা দূর করতে রবিবারেই জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক-ডিআই) চিঠি পাঠালেন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের। সেই নির্দেশ পাওয়ার পর স্কুল শিক্ষকদের ধারণা, বেতন দেওয়া নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল, তা দূর করা সম্ভব হবে।
বেতন সংক্রান্ত ন’দফা নির্দেশিকার প্রথমে বলা হয়েছে, স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্ট (এসএলএসটি) ২০১৬-র মাধ্যমে চাকরি পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে অযোগ্যদের বেতন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে হবে। একই ভাবে তৃতীয় ধাপে ‘রিজিওনাল লেভেল সিলেকশন টেস্ট (আরএলএসটি)’ থেকে চাকরি পাওয়া গ্রুপ-সি এবং ডি কর্মীদের বেতন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে হবে। তবে প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রাপকদেরও বেতন দেওয়ার পদ্ধতি চালু রাখতে হবে। বদলি হয়ে আসা কোনও শিক্ষক যদি অযোগ্যদের তালিকায় থেকে থাকেন, তা হলেও বেতন দেওয়া যাবে না। বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী যদি গুগল ফর্ম পূরণ না করে থাকেন, তা হলে অবিলম্বে তাঁকে সেই ফর্ম পূরণ করতে হবে।
তবে অযোগ্যদের তালিকায় থাকা কোনও শিক্ষক যাতে বেতন না পান, সেই বিষয়ের ওপর সজাগ দৃষ্টি রেখে চলতে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষকদের। সঙ্গে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা দেওয়ার বিষয়েও নজর রাখতে হবে। যদি গোটা প্রক্রিয়ায় কোনও ভুল হয়ে থাকে, তবে ডিআই অফিসে এসে তা ঠিক করাতে হবে। প্রসঙ্গত, আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে এখন বদ্ধপরিকর শিক্ষা দফতর। তাই ছুটির দিনেও এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারি স্কুলগুলিকে।
তবে এ প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা দফতর যদি পদক্ষেপ নিত, তা হলে এই পরিস্থিতি হত না। শেষ মুহূর্তে দিন রাত এক করে কাজ করলেও মাস পয়লায় মাইনে দিতে পারবে কি না সন্দেহ। গত দু’মাস ইনকাম ট্যাক্সর মাস গেছে। অনেকেরই আর্থিক অসুবিধা আছে। সময়ে বেতন না হলে অসুবিধা হবে। এর জন্য দায়ী সরকার।’’ তবে এ বিষয়ের সমালোচনা করতে চায় না শাসকদলের শিক্ষক সংগঠন। পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিজন সরকার বলেন, ‘‘উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শিক্ষা দফতর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে সঠিক সময়ে শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের বেতন অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যায়। কিছু বিরোধী মনোভাবাপন্ন শিক্ষক শিক্ষিকা এই বিষয়ে অহেতুক জলঘোলা করার চেষ্টা করছেন। আসলে সরকার মহামান্য আদালতের নির্দেশ মেনেই আইনি পরামর্শ করে যথাযথ নির্দেশ দিয়েছেন।’’