প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এ বার নাম জড়াল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী, বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষের। নাম জড়িয়েছে তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর এবং তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লার। বিকাশ ভবনে তল্লাশি চালিয়ে সিবিআই যে নথি উদ্ধার করেছিল, সেই নথিতে নাম-পরিচয়ের উল্লেখ রয়েছে। সেই নথি আনন্দবাজার অনলাইনেরও হাতে এসেছে। সিবিআই সূত্রে খবর, নথি থেকে তদন্তকারীদের অনুমান, দিব্যেন্দু, ভারতী, মমতাবালা এবং শওকতেরা অনেক চাকরিপ্রার্থীর নাম সুপারিশ করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত এবং বর্তমানে জেলবন্দি)-এর কাছে। নথিতে সেই সব চাকরিপ্রার্থীরই নাম রয়েছে।
এ বিষয়ে বলে রাখা প্রয়োজন, ২০১৪ সালের প্রাথমিকের পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২২ সাল থেকে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। যে বছরের পরীক্ষা নিয়ে এত বিতর্ক, সেই সময় দিব্যেন্দু এবং ভারতী দু’জনের কেউই বিজেপিতে ছিলেন না। পরে তাঁরা বিজেপিতে যোগ দেন। ভারতী বিজেপির টিকিটে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছিলেন।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
সিবিআইয়ের ওই নথিতে বিধায়ক পরিচয়ে নাম রয়েছে নির্মল ঘোষ, বীণা মণ্ডল, শওকত মোল্লা, শ্যামল সাঁতরা, রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, গুলশন মল্লিকেরও। সকলেই তৃণমূলের নেতানেত্রী। নির্মল, বীণা, শওকত এবং গুলশন বর্তমানে বিধায়কও। নথিতে রাজ চক্রবর্তীর নামও রয়েছে। তবে তাঁর পরিচয়ের কোনও উল্লেখ নেই।
নথিতে দেখা যাচ্ছে, দিব্যেন্দুর নামের নীচে ১১ জন চাকরিপ্রার্থীর নাম রয়েছে। তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, দিব্যেন্দু ১১ জনের নাম ‘সুপারিশ’ করেছিলেন। একই ভাবে মমতাবালা, ভারতী, শওকত যথাক্রমে ২০, ৪ এবং ২ জনের নাম ‘সুপারিশ’ করেছিলেন। এ ছাড়া শ্যামল ২২ জনের নাম ‘জমা দিয়েছিলেন’ পার্থের কাছে। বীণা ‘সুপারিশ’ করেছিলেন ১৩ জনের নাম। নির্মল ১৬ জন, গুলশন ১০ জন এবং রমেন্দ্রনাথ ৫ জনের। সিবিআইয়ের নথিতে দেখা যাচ্ছে, সব মিলিয়ে ৩২৪ জনের নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ১৩৪ জন চাকরি পেয়েছিলেন বলেও জানানো হয়েছে সিবিআইয়ের চার্জশিটে।
আরও পড়ুন:
গত বছরের জুন মাসে বিকাশ ভবনের ওয়্যারহাউসে অভিযান চালিয়েছিল সিবিআই। সেখানে তল্লাশি চালিয়েই ওই নথি উদ্ধার হয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছে তারা। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ মমতাবালা বলেন, ‘‘এ সব কিছুই জানি না। পুরোটাই চক্রান্ত। অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত নই।’’ দিব্যেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। বলেছেন, ‘‘নো কমেন্টস।’’
আনন্দবাজার অনলাইন ভারতীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল। তিনি বলেন, ‘‘আমি এসপি (পুলিশ সুপার) থাকাকালীন অনেক লোকের উপকার করেছি। কিন্তু সবটাই আইনের গণ্ডির মধ্যে থেকে। কারও পরীক্ষাকেন্দ্র বদলের দরকার, যেখানে বলার বলেছি। কারও পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে, রেজাল্ট বেরোচ্ছে না, যেখানে বলার বলেছি। কিন্তু কেউ পরীক্ষা দেয়নি বা পাশ করেনি, তাকে চাকরি দিয়ে দাও, এ রকম আমি কখনও বলিনি। আমার নাম যদি সিবিআই কোথাও পেয়ে থাকে, আমার বলায় কারও চাকরি হয়েছে বলে যদি সিবিআই জেনে থাকে, তা হলে সিবিআইয়ের উচিত ছিল আমার সঙ্গে কথা বলা। আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করতে পারত। আমার সঙ্গে কোনও কথাই বলল না। আমি কিছু জানতামই না। কিন্তু আমার নাম জড়িয়ে দিল। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ আমি মোদীজিকে চিঠি লিখব। আজ রাতেই লিখব। কারণ সিবিআই মোদীজির দফতরের অধীনস্থ। সেই সংস্থা এ রকম বেআইনি কাজ করছে, সেটা আমি ওঁকে চিঠি লিখে জানাব।’’