সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে ছাত্র সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
কাজ করতে গেলে ভুল হবে। তবে তা শুধরে নেওয়া প্রয়োজন। আরও এক বার বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘রাস্তায় হাঁটতে গেলেও তো হোঁচট খেতে হয়। তবে সে রাস্তাও ভাল করে নিতে হয়। কাজ করতে গেলে কেউ যদি ভুল করে, তা শুধরে নেওয়া দরকার।’’
ঘটনাচক্রে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির মন্তব্য-বিতর্কে এমনিতেই অস্বস্তিতে শাসক তৃণমূল। অস্বস্তিতে রাজ্য সরকারও। তার আগে থেকেই শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি নিয়েও একপ্রস্ত বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়েছে রাজ্য সরকার এবং রাজ্যের শাসকদল। সেই জোড়া অস্বস্তির মধ্যেই সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে এক ছাত্র সমাবেশে ওই মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সোমবার ‘শিশু দিবসে’ পড়ুয়াদের ট্যাব দেওয়ার কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘ভুল করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে কারও নাম করেননি। কিন্তু মমতা বলেছেন, ‘‘কাজ করতে গেলে যদি কেউ ভুল করে, তা শুধরে নেওয়া দরকার। কাজ করতে গেলে ভুল তো হয়! রাস্তায় হাঁটতে গেলে আমরা হোঁচট খাই না? তার পর সেটাকে (রাস্তাকে) ঠিক করে নিতে হয়।’’ যা থেকে অনেকের অনুমান, মমতা ওই ‘আত্ম সংশোধন’-এর বার্তার মধ্য দিয়ে অখিল বা শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য প্রমুখের কথা বলতে চেয়েছেন।
সম্প্রতি নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে তৃণমূলের ‘অস্বস্তি’ বাড়িয়েছেন রাজ্যে মন্ত্রী তথা পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি। রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে তাঁর অবমাননাকর মন্তব্যে দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করতে গিয়ে নন্দীগ্রামেরই এক সভায় রাষ্ট্রপতিকে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে অখিলের বিরুদ্ধে। একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, অখিল বলছেন, ‘‘আমরা রূপের বিচার করি না। তোমার রাষ্ট্রপতির চেয়ারকে আমরা সম্মান করি। তোমার রাষ্ট্রপতিকে কেমন দেখতে বাবা?’’ ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। কিন্তু সেই ভিডিয়ো নিয়েই শোরগোল পড়েছে। বিজেপি ওই ঘটনাায় ইতিমধ্যেই পথে নেমেছে। অখিলের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিবাদও শুরু হয়েছে। তৃণমূল তাদের মতো করে সেই প্রতিবাদের মোকাবিলা করছে। অখিলের মন্তব্য থেকে ‘দূরত্ব’ রচনা করেছে। অখিল নিজেও ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু তাতেও শোরগোল থামছে না।
অখিলের ক্ষমাপ্রার্থনা বা এর দায়ভার বহনে তৃণমূলের আপত্তি সত্ত্বেও বিষয়টি থিতিয়ে যায়নি। বরং বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে এ নিয়ে অখিলের বিরুদ্ধে নিন্দাপ্রস্তাব আনতে চাইছে বিজেপি। এর জল গড়িয়েছে আদালতেও। কলকাতা হাই কোর্টে এ নিয়ে দু’টি জনস্বার্থ মামলা রুজু করছে বিজেপি। এই আবহেই মমতার মন্তব্য।
তবে এরই পাশাপাশি মমতার দাবি, ‘‘কেউ কেউ বাংলাকে ভালবাসে না। সে জন্য সারা ক্ষণ কুৎসা, চক্রান্ত, অপপ্রচার করে চলেছে। তবে সব তথ্য সত্য নয়!’’ বিজেপিকে কটাক্ষ করে মমতা বলেছেন, ‘‘বাংলায় খেয়ে-পরে দিল্লিকে বলছে, বাংলায় টাকা দিয়ো না। বয়েই গিয়েছে টাকা নিতে! বাংলা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। দিল্লির মনে রাখতে হবে, আমাদের আত্মসম্মান রয়েছে। এটা ছিনিয়ে নিতে দেব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy