Advertisement
E-Paper

আন্দামানে পরকীয়া! কোন রাগে মুন্ডু কেটে স্ত্রীকে খুন? ময়নায় বধূ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি

পুলিশ সূত্রে খবর, মহিলার দেহ শনাক্ত হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে কাটা মুন্ডুও। গ্রেফতার হয়েছেন অভিযুক্ত স্বামী পবিত্র বর্মণও। তিনি বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩৮

—প্রতীকী চিত্র।

কর্মসূত্রে সুদূর আন্দামানে গিয়ে পড়শি যুবকের সঙ্গে স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, বাড়ি ফিরে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন এবং তারই মাঝে স্বামীর সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলা। সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরেই শেফালি বর্মণকে খুন করেছেন তাঁর স্বামী। পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার বাকচায় বধূহত্যার তদন্তে নেমে ধৃতকে জেরা এবং পরিবারের লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিক ভাবে এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, মহিলার দেহ শনাক্ত হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে কাটা মুন্ডুও। গ্রেফতার হয়েছেন অভিযুক্ত স্বামী পবিত্র বর্মণও। তিনি বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে। গত ২০ জানুয়ারি রবিবার বেলার দিকে ময়না থানার দক্ষিণ আড়ংকিয়ারানা গ্রামের বিল্বতলা চণ্ডীয়া নদীর পাশ থেকে শেফালির অর্ধনগ্ন মুন্ডুহীন দেহ উদ্ধার হয়। মহিলার পরিচয় উদ্ধার করতে গিয়ে বেজায় হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। ড্রোন ক্যামেরা, পুলিশকুকুর নিয়ে যৌথ ভাবে তদন্ত চালায় সবং এবং ময়না থানার পুলিশ। শেষমেশ পাঁচ দিন পরে মহিলার পরিচয় জানা যায়।

তদন্তকারীদের একটি সূত্রে খবর, বছর দুই আগে স্বামী পবিত্রের সঙ্গে আন্দামানে গিয়েছিলেন শেফালি। সেখানে পড়শি যুবক শ্রীমন্ত মণ্ডলের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। ওই যুবকের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের বুড়াবুড়ি এলাকায়। কিছু দিনের মধ্যেই স্ত্রীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পারেন পবিত্র। এর পর থেকেই শেফালির উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় ওই সময় আন্দামান থেকে ভগবানপুরে পালিয়ে এসেছিলেন শ্রীমন্ত। কিন্তু শেফালি পালিয়ে আসতে পারেননি।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, শেফালির এক দাদা পবিত্রের কাছ থেকে প্রায় দু’লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিল। তার ফলেই স্বামীকে ছেড়ে আসতে পারছিলেন না শেফালি। কিন্তু অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্তই নেন তিনি। সেই মতো প্রায় আড়াই মাস আগে আন্দামান থেকে ফিরে প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুরের দুবরাজপুরে বাপের বাড়িতে চলে যান শেফালি। পরে ভগবানপুরে প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। পবিত্রের সঙ্গত্যাগ করে আবার বিয়ে করারও পরিকল্পনা করেন। যদিও আইনের গেরোয় তা সম্ভব হয়নি। শেফালির প্রেমিক শ্রীমন্ত বলেন, ‘‘ডিভোর্স ফাইল করার পর কমপক্ষে ছ’মাস অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। তাই বিয়ে না করেই শেফালি আমার বাড়িতে থাকতে শুরু করে। প্রায় আড়াই মাস ধরে এ ভাবেই কাটছিল।’’

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শেফালি যখন শ্রীমন্তের সঙ্গে থাকছিলেন, সেই সময় আন্দামান থেকে ফিরে এসেছিলেন পবিত্র। এসেই স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। শেফালির দাদা যে টাকা ধার নিয়েছিলেন, তা শোধ করার জন্য চাপ দেন। আর তা না দিলে শেফালির দাদা এবং তাঁর ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন পবিত্র। এর পরেই পবিত্রের কাছে ফিরে যান শেফালি। পরিবারের অভিযোগ, তার পর থেকে শেফালির সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না।

শ্রীমন্ত বলেন, ‘‘ময়না থানা থেকে আমাকেও ফোন করে দেহ শনাক্ত করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু জলে দীর্ঘ ক্ষণ থাকায় প্রথমে দেহ চিনতে পারিনি। পরে বৃহস্পতিবার পবিত্র ধরা পড়ার পর আমরা সমস্ত ঘটনা জানতে পারি। শেফালিকে ভয় দেখিয়েই ডেকে নিয়ে গিয়েছিল।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের দুবরাজপুরের বাসিন্দা

শেফালির বৌদি অপর্ণা বর্মণ বলেন, ‘‘প্রেমিকের সঙ্গে থাকা শুরু করার পর পুরনো স্বামীর সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু হয়। ভাইফোঁটার সময় শেষ বার বাপের বাড়িতে এসেছিল। ওর স্বামীর কাছ থেকে আমার ভাসুর ২ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিল। ৫০ হাজার টাকা দিয়েও দিয়েছিল। এই নিয়ে পবিত্র প্রায়শই স্ত্রীকে মারধর করত। এই নিয়ে আগেও একাধিক বার গ্রামে সালিশি হয়েছে। শেফালি ফোনে বলেছিল, বাপের বাড়িকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে প্রাণ দিতেও রাজি আছি। সেটাই যে ঘটবে, আমরা ভাবতে পারিনি।’’ শেফালির মা সীতা বর্মণ বলেন, ‘‘মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার দিন কয়েক বাদে আমরা খবর পেয়েছিলাম। এখন শুনলাম ওকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে। যে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, আমরা তার ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।’’

Moyna Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy