Advertisement
০৮ মে ২০২৪

মমতার সুর নরম, বার্তা সহযোগিতার

এত দিন ছিলেন রণং দেহি। শনিবার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনে বিজেপির ‘সাম্প্রদায়িক’ রাজনীতির প্রতিবাদে ডাকা সভা থেকেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার কথা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও আজ, রবিবার বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের যে বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তাতে যোগ দিচ্ছেন না তিনি। কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসা ইস্তক মোদী বলে আসছেন, সরকার পরিচালনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।

জঙ্গি-যোগে অভিযুক্ত তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য আহমেদ হাসান ইমরানকে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে। শনিবার গাঁধী মূর্তির পাদদেশে। (ডান দিকে) মিছিলের ফাঁকে একটু রসনাতৃপ্তি মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার।  ছবি: প্রদীপ আদক এবং শুভাশিস ভট্টাচার্য।

জঙ্গি-যোগে অভিযুক্ত তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য আহমেদ হাসান ইমরানকে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে। শনিবার গাঁধী মূর্তির পাদদেশে। (ডান দিকে) মিছিলের ফাঁকে একটু রসনাতৃপ্তি মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার। ছবি: প্রদীপ আদক এবং শুভাশিস ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫২
Share: Save:

এত দিন ছিলেন রণং দেহি। শনিবার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনে বিজেপির ‘সাম্প্রদায়িক’ রাজনীতির প্রতিবাদে ডাকা সভা থেকেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার কথা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও আজ, রবিবার বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের যে বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তাতে যোগ দিচ্ছেন না তিনি।

কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসা ইস্তক মোদী বলে আসছেন, সরকার পরিচালনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূলের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ যা-ই থাক, পশ্চিমবঙ্গের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে কসুর করবেন না তিনি। মমতা কিন্তু পাল্টা হাত বাড়াননি। উল্টে সারদা কেলেঙ্কারি থেকে খাগড়াগড় একের পর এক ঘটনা নিয়ে যত সরব হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব, ততই কেন্দ্রের প্রতি ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তিনি। মোদী সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে সিবিআই-কে কাজে লাগাচ্ছে অভিযোগ করে তাঁকে গ্রেফতার করার চ্যালেঞ্জও ছুড়েছেন মমতা।

এই অবস্থায় এ দিন বিজেপি-বিরোধিতায় ডাকা ‘সংহতি দিবস’-এর মঞ্চ থেকে কেন তিনি মোদী সরকারের প্রতি সহযোগিতার বার্তা দিলেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। মমতা বলেন, “তোমরা সরকার চালাও ভাল করে। আমাদের সহযোগিতা পাবে, যদি তোমাদের কাজ গঠনমূলক হয়। আমাদের সঙ্গে ‘কো-অপারেশন’ করলে সহযোগিতা পাবে। অসহযোগিতা করলে আমরা যুদ্ধের জন্য তৈরি আছি।”

অনেকের মতে, সারদা নিয়ে সিবিআই তদন্ত এবং খাগড়াগড় নিয়ে এনআইএ-র তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই চাপে পড়ছে রাজ্যের শাসক দল। এই দুই ঘটনাতেই ক্রমশ জড়িয়ে যাচ্ছে একাধিক তৃণমূল নেতার নাম। রাজ্যে এসে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাজনৈতিক ভাবেও চাপ বাড়িয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। আর এই বেকায়দা অবস্থা থেকে উদ্ধার পেতেই কেন্দ্রকে বার্তা দিতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিজেপি সূত্র অবশ্য বলছে, তৃণমূল নেত্রীর বার্তা দেওয়ার যে উদ্দেশ্যই থাক, রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই নেই। মোদী সম্প্রতি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, “আমি সরকার চালাচ্ছি। সেটা নিরপেক্ষ ভাবেই চালাব। সব রাজ্যের উন্নয়নের চেষ্টা করব। আর অমিত দল চালাচ্ছে। ও ওর মতো রাজনীতি করবে।” অমিত শাহ-ও আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার জায়গায় থাকলে কি বিজেপি-কে রাজ্যে ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করতেন না!” ফলে তিনি যে কোনও অবস্থাতেই চাপ আলগা করবেন না, সেটা স্পষ্ট।

কেউ কেউ আবার বলছেন, মমতার বার্তার পিছনের আর একটা বড় কারণ, সম্প্রতি মোদীর সঙ্গে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বৈঠক। রাজনৈতিক ভাবে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে থেকেও সরকার পরিচালনার খাতিরে গোটা মন্ত্রিসভাকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে বসিয়ে দিয়েছিলেন বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী। তখন শিলিগুড়ির জনসভায় ওই বৈঠককে কটাক্ষ করে মমতা বলেছিলেন, “বড় ভাই-ছোট ভাইয়ের কথা হচ্ছে।”


শনিবার গাঁধী মূর্তির পাদদেশে তৃণমূলের সভা। —নিজস্ব চিত্র।

কিন্তু মানিক-মোদী বৈঠক জনমানসে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াই যে তৈরি করেছে, সেটা অবশেষে মমতা বুঝতে পেরেছেন বলে তৃণমূল নেতাদের একাংশের মত। আর সেই কারণেই এ দিনের সভায় সুর পাল্টে তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, “রাজনীতি রাজনীতির পথে চলুক। কিন্তু সৌজন্য বজায় থাকুক। আর সরকার চলুক সরকারের পথে। সৌজন্য বজায় রেখে। রাজনীতির সঙ্গে সরকারের কাজে ফারাক আছে।”

তবে সুর নরম করার কারণ যা-ই হোক, কার্যক্ষেত্রে সরকারকে সরকারের পথে চালানোর কাজটা মমতা নিজেই কতটা করবেন, তা নিয়ে সংশয়ী শাসক-বিরোধী দুই শিবিরই। কারণ, কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের বয়স ছ’মাস হয়ে গেলেও এখনও মোদীর সঙ্গে দেখা করে উঠতে পারেননি তিনি। আজ, রবিবার মোদীর ডাকা মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকেও নিজে না-গিয়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে পাঠােচ্ছেন মমতা। তৃণমূল সূত্রের অবশ্য ব্যাখ্যা, যোজনা কমিশন তুলে দিয়ে নতুন কী ব্যবস্থা চালু করা যায়, সেটাই বৈঠকের মূল বিষয়বস্তু। সেখানে অর্থমন্ত্রীর যাওয়াই ভাল।

তৃণমূলের এ দিনের কর্মসূচির দায়িত্ব প্রথমে দেওয়া হয়েছিল যুব সংগঠনকে। কিন্তু গত সোমবারই শহিদ মিনার ময়দানে তাদের সভায় আশানুরূপ লোক হয়নি। তাই ময়দানে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে সভা করার ভার দেওয়া হয় সংখ্যালঘু সেলকে। এবং জমায়েত দেখে খুশি তৃণমূল নেতৃত্ব। গত ২৪ নভেম্বর কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত পদযাত্রার শেষে মমতা বলেছিলেন, ‘১ আর ৬ তারিখ আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে।’ কিন্তু শহিদ মিনারের সভায় ভিড়ের হাল দেখে তিনি আর ও-মুখো হননি বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। এ দিনও তিনি আসবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। শেষ পর্যন্ত বেলা আড়াইটে নাগাদ এসে পৌঁছন মমতা। বক্তৃতার শুরুতেই বলেন, “আমার এখানে আসার কথা ছিল না। কিন্তু ববিকে (পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম) ফোনে জিজ্ঞাসা করলাম, তোদের সভার খবর কী? ও ঘুরে দেখে যেতে বলল।”

তবে তৃণমূলেরই একটি অংশের মতে, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদে ডাকা সভায় না এলে সংখ্যালঘু মহলে যে অন্য রকম বার্তা যাবে, সেটা মমতা বিলক্ষণ জানেন। সেই কারণেই হাজিরা দিলেন তিনি। যদিও বার্তা দিলেন বিজেপি-কে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE