E-Paper

‘শহিদ’ স্মরণে কাঁটা দিলীপ, জারি রইল কথার লড়াইও

দলের রাজ্য দফতর এবং বিভিন্ন জেলায় শুক্রবার বিজেপির ‘শহিদ স্মরণ’ হয়েছে। শামিল হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ দলীয় নেতৃত্ব।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৫ ০৭:০৭
বিজেপির ‘শহিদ স্মরণ’ কর্মসূচিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মেদিনীপুরে।

বিজেপির ‘শহিদ স্মরণ’ কর্মসূচিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মেদিনীপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যে ২০২১ সালের ভোট পরবর্তী ‘সন্ত্রাসে’ নিহত দলীয় কর্মীদের স্মরণে ২ মে ‘শহিদ দিবস’ পালন করে বিজেপি। অন্য বছর এই কর্মসূচিতে রাজ্য বিজেপির মূল মঞ্চে দেখা যেত প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। কিন্তু এই বছর ‘শহিদ স্মরণে’ কর্মসূচিতে ‘কাঁটা’ হয়ে রইলেন সেই দিলীপ!

দলের রাজ্য দফতর এবং বিভিন্ন জেলায় শুক্রবার বিজেপির ‘শহিদ স্মরণ’ হয়েছে। শামিল হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ দলীয় নেতৃত্ব। তবে বিভিন্ন স্তর থেকে দিলীপের উদ্দেশে প্রশ্ন উঠেছে, যিনি রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে এত জন ‘শহিদ’ হলেন, তিনি কী করে সেই শাসক দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন! দিলীপ অবশ্য সমাজ মাধ্যমে ‘শহিদ দিবস’ নিয়ে পোস্ট করেই জবাব দিয়েছেন দলীয় সতীর্থদের।

শহিদ দিবস উপলক্ষে নন্দীগ্রাম ও মেদিনীপুরে কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু। দলের রাজ্য দফতরে কর্মসূচিতে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ, উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ প্রমুখ। যদিও অন্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতাদের এক হাত নিয়ে দিলীপের মন্তব্য, “কেউ কেউ মনে করছেন ২০২১ সালের পরে বিজেপি তৈরি হয়েছে। তাই তাঁরা ৫৭ জন শহিদের কথা বলেন। বিজেপির শহিদের সংখ্যা কিন্তু ২৫০ জন।”

তাঁকে ঘিরে প্রবল বিতর্কের মধ্যেই এ দিন সকালে দিলীপ স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেছেন, “যাঁরা ২০২১ সালের পরে বিজেপি হয়েছেন, তাঁরা সকালে বিজেপির বাড়িতে নাস্তা করেন, দুপুরে তৃণমূলের বাড়িতে খান। তাঁরা যেন দিলীপ ঘোষকে চারিত্রিক শংসাপত্র না দেন।” তাঁর মন্তব্য, “কারও দম আছে জঙ্গিপুরে গিয়ে সভা করার? দিলীপ ঘোষ করে এসেছে। কে আসল হিন্দু নেতা, সেটা মানুষ জানে। রাতারাতি হিন্দু নেতা হতে যেও না। হিন্দুত্ব সকলের সহ্য হয় না!’’

যদিও বিজেপি ঐক্যবদ্ধই আছে বলে দাবি করে শুভেন্দু এ দিন বলেছেন, ‘‘আমি এ সব নিয়ে মন্তব্য করব না। আমার অবস্থান, ‘মমতা ভাগাও, হিন্দু বাঁচাও’! আর কোনও প্রশ্ন নেই, কোনও উত্তর নেই, কোনও ভাষণ নেই।’’ পরস্পরের বিরুদ্ধে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে আর্জিও জানিয়েছেন তিনি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বালুরঘাটে দাবি করেছেন, “দলের মধ্যে কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ নেই। বিজেপি বিজেপির মতো চলছে। দিলীপ ঘোষ যখন জগন্নাথের ওখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন, তখন ওখান থেকেই তৃণমূলের বিসর্জনের শুরু!” সেই সঙ্গে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “দিঘায় জগন্নাথ কালচারাল সেন্টার উদ্বোধনে কেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা গেল না? উনি কি নিমন্ত্রণ পাননি? নাকি নিমন্ত্রণ পেয়েও যাননি রাগ করে যাননি, এ সব নিয়ে চিন্তার অবকাশ আছে। আমিও কিন্তু নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম!”

দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে মমতা-দর্শনের পর থেকেই দিলীপকে নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দিঘা থেকে ফেরার পথে কোলাঘাটে দলীয় কর্মীর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজে গিয়ে দিলীপকে কর্মীদের একাংশের কাছে শুনতে হয়েছে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান। মেদিনীপুর শহরে বিজেপির জেলা কার্যালয়ে স্লোগান উঠেছে ‘দিলীপ তৃণমূলের দালাল’। সেখানে বৃহস্পতিবার বিকেলে হাতাহাতিতে জড়িয়েছিলেন দিলীপ-বিরোধী এবং দিলীপ-অনুগামীরা। তারই পাশাপাশি মুখ খুলতে শুরু করেছেন দলের কিছু নেতা ও বিধায়ক। ময়নার বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দা যেমন এ দিন বলেছেন, ‘‘বিজেপি তিন থেকে ৭৭ বিধায়কের দল হয়েছিল মানুষের সমর্থন পেয়েছে বলে। রাজ্য সভাপতি থাকার সময়ে দিলীপ ঘোষ বলতেন, শহিদদের মরদেহে মালা দিয়ে তাঁকে এই জায়গায় পৌঁছতে হয়েছে। যাদের জন্য বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের প্রাণ দিতে হয়েছে, তাদের সঙ্গে সৌজন্যের কথা এখন মনে হল কেন? যখন হিন্দুদের উপরে আক্রমণ হচ্ছে রাজ্যে, সে সময়ে তিনি নানা কাণ্ড ঘটিয়ে নজর ঘোরাচ্ছেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP Suvendu Adhikari Sukanta Majumdar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy