রীতিমতো চিঠি দিয়ে রাজ্যকে শিক্ষার বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বাড়াতে বলছে কেন্দ্র। সেই পরামর্শ নিয়ে পাল্টা চিঠিতে তরজায় মেতে ওঠার পাশাপাশি চলতি আর্থিক বছরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন খাতে বরাদ্দ ৩৮ কোটি টাকা কমিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। এতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে।
সারা দেশের বিচারে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাদবপুর আছে পঞ্চম স্থানে। এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সাম্প্রতিক প্রশাসনিক বৈঠকে খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, যাদবপুরকে তিনি খুব ভালবাসেন। কিন্তু অর্থ দফতর সূত্রের খবর, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন-বরাদ্দে কোপ পড়েছে। গত অর্থবর্ষে রাজ্য ওই খাতে যাদবপুরের জন্য ১৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। এ বার তা কমিয়ে করা হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। অন্য কোনও খাতের বরাদ্দ বাড়েনি, কমেওনি। গত বারের মতোই রয়েছে।
বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (জুটা)। তাদের বক্তব্য, যাদবপুরে এখন প্রায় ৩৫% শিক্ষক-পদ শূন্য। রাজ্য সরকার সেই সব শূন্য পদ পূরণের জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছে। নিয়োগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ও উদ্যোগী হয়েছে। নতুন নিয়োগ হলে বেতন খাতে আরও বেশি টাকা লাগবে। তার জন্য বাড়তি টাকা তো দূরের কথা, বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে রাজ্য। এমনটা কেন হলো, প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষক সংগঠন। যাদবপুর সূত্রের খবর, গত আর্থিক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যত টাকা খরচ হয়েছিল, সেই খাতে প্রাপ্য ৩৮ কোটি টাকা এখনও দেয়নি সরকার।
উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তার ব্যাখ্যা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পদের জন্যও মাইনের টাকা নিয়েছিল। সেটা আর কিছুতেই হবে না। শূন্য পদ ধরে নিয়ে মোট পদের জন্য আর বেতনের টাকা দেওয়া হবে না। বর্তমানে যত পদে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী আছেন, শুধু তার জন্যই বেতন দেওয়া হবে। শিক্ষক বা কর্মী বাড়লে অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার কথা ভাবা হবে।
উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বৃহস্পতিবার জানান, বেতন খাতে কম বরাদ্দ নিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। ‘‘এই বিষয়ে আমাদের কাছে কিছু তথ্য ও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আমার দৃ়ঢ় ধারণা, প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে কোনও সমস্যা হবে না,’’ বলেন উপাচার্য।
জুটার সহ-সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের বক্তব্য, গত বছরের প্রাপ্য ৩৮ কোটি টাকার বিষয়েও উপাচার্য জানিয়েছিলেন, ওই টাকা নিয়ে সমস্যা হবে না। ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশে পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গবেষণাগার, ক্লাসরুম এবং অন্যান্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন থমকে যাবে বলে আমাদের আশঙ্কা,’’ বলেন পার্থপ্রতিমবাবু।