Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিদ্যাসাগরের দর্শন অটুট, বলছেন বংশধর

তিনি খোদ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বংশধর। ইংল্যান্ডের লফবরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়। আনন্দবাজারকে ই-মেলে নীলাদ্রি জানালেন, ইন্টারনেটে খবর দেখতে গিয়েই তিনি ওই ঘটনার কথা জানেন।

নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়

নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়

সুজিষ্ণু মাহাতো
শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার খবর পেয়ে, ভিডিয়ো দেখে ‘শক’ পেয়েছিলেন তিনি। সেই ধাক্কা সামলাচ্ছেন বিদ্যাসাগরের জীবনের কথা স্মরণ করেই। বলছেন, ‘‘মূর্তি ভাঙা যেতে পারে। কিন্তু তাঁর দর্শনকে ভাঙা যায় না। তার পরিধি আরও অনেক বেশি।’’

তিনি খোদ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বংশধর। ইংল্যান্ডের লফবরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়। আনন্দবাজারকে ই-মেলে নীলাদ্রি জানালেন, ইন্টারনেটে খবর দেখতে গিয়েই তিনি ওই ঘটনার কথা জানেন। তাঁর কথায়, ‘‘অসংখ্য বাঙালি এবং ভারতীয়র মতোই এমন ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত কাজ আমাকে খুব দুঃখ দিয়েছে।’’

বাবা অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিক থেকে বিদ্যাসাগরের পঞ্চম প্রজন্মের বংশধর নীলাদ্রি। তিনি জানালেন, ‘‘বিদ্যাসাগরের তৃতীয়া কন্যা বিনোদিনী দেবীর মেয়ে ছিলেন আমার ঠাকুরদা শৈলেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা।’’ তবে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের এই যোগকে কখনওই মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন নীলাদ্রি। তাঁর বাবা ও মা কেকা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলার অন্য সবাই ছোটবেলায় বিদ্যাসাগর সম্বন্ধে যা জানত, শিখত, আমিও তেমনই শিখেছি।’’

মূর্তি ভাঙার ঘটনার পরে বাংলা জুড়ে তোলপাড় চলছে বিদ্যাসাগরকে নিয়ে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে নীলাদ্রির মনে হচ্ছে বিদ্যাসাগরের দর্শন সময়ের থেকে এতটাই এগিয়ে ছিল যে আজকেও সেই দর্শনের পুরোটা আমরা অনুধাবন করতে পারিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বিদ্যাসাগরের মতো দার্শনিক যখন জন্মান, তখন সেই সমাজেরও একটা বিরাট দায়িত্ব আসে। সেই দায়িত্ব হল ওই দার্শনিকের কাজকে বোঝার, ভাবনাকে রূপায়িত করার। আমি নিশ্চিত নই কতটা সফল ভাবে আমরা তা করতে পেরেছি।’’

শিবপুর বিই কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং ও আইআইটি কানপুরে এমটেক করার পরে ২০০৮ সালে মনমোহন সিংহ স্কলারশিপ পেয়ে নীলাদ্রি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস কলেজে পিএইচডি করতে যান। সেখানেই পোস্ট ডক্টরেটও করেন তিনি। তার পর থেকে ইংলন্ডেই শিক্ষকতা করছেন তিনি। গত মার্চেই এসেছিলেন কলকাতায়। এর পরে এলে হয়তো তিনি যাবেন বিদ্যাসাগর কলেজে। নীলাদ্রির কথায়, ‘‘ওই কলেজের বাইরে দিয়ে অনেক বার গিয়েছি। তবে ভিতরে যাইনি। ওই মূর্তিটিও দেখিনি। তবে পরে কোনও সময় কলেজে যেতে পারলে ভালই লাগবে। তবে এই ঘটনা না ঘটলেও সুযোগ পেলে ওখানে যেতাম।’’

বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনীতির চাপানউতোর। নীলাদ্রি মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিদ্যাসাগরের জীবন, দর্শনের উত্তরাধিকার বহনের কথা। বলছেন, ‘‘কারও একার নয়, এই দায়িত্ব বাঙালি তথা ভারতীয়দের সবার। আমার মনে হয় বিদ্যাসাগরের জীবন ও কাজ অনেকটাই বিস্মৃত। তাঁর ভাবনা ও দর্শনকে রূপায়িত করার মাধ্যমেই তাঁর উত্তরাধিকারকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE