Advertisement
E-Paper

নিজেকে ভগবান ভাবছেন নাকি, তিরস্কার আমলাকে

বাম জমানার নিয়োগ নিয়ে মামলা। আর কলকাতা হাইকোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়লেন বর্তমান সরকারের আমলা।মঙ্গলবার বজবজে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করায় রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৪

বাম জমানার নিয়োগ নিয়ে মামলা। আর কলকাতা হাইকোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়লেন বর্তমান সরকারের আমলা।

মঙ্গলবার বজবজে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করায় রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সচিবকে তীব্র তিরস্কারে বিঁধে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘উনি কি নিজেকে ভগবান ভাবছেন নাকি!’’ সেই সঙ্গেই তাঁর প্রশ্ন, নেতারা চিঠি দিলে চাকরি হবে, অথচ যোগ্য লোক কাজ পাবে না কেন? অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল, নাকি টাকার লেনদেন হয়েছে— কাল, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে হাজির হয়ে হলফনামা পেশ করে তা জানানোর জন্য সমাজকল্যাণ দফতরের যুগ্মসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।

আইনজীবী প্রবীর মাঝি জানান, বজবজ-১ নম্বর ব্লকে ৩৯ জন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগের জন্য ২০০৬ সালে বিজ্ঞপ্তি দেয় তখনকার বামফ্রন্ট সরকার। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে স্নাতক স্তরের কম। অভিযোগ ওঠে, যাঁরা নিযুক্ত হয়েছেন, তাঁদের শিক্ষাগত মান স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। সেই অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তদন্তের ফলাফল না-বেরোনোয় ওই নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পাঁচ জন কর্মপ্রার্থী শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালে হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলার আবেদনে বলা হয়, নিযুক্ত কর্মীরা নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা গোপন করে চাকরি পেয়েছেন। তাই নতুন ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হোক। ইতিমধ্যে রাজ্যে সরকার বদলেছে।

মামলার আবেদনকারী প্রার্থীদের আইনজীবী প্রবীরবাবু জানান, ২০১৪ সালের নভেম্বরে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত নির্দেশ দেন, ওই নিয়োগ নিয়ে সমাজকল্যাণ দফতরের তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। নিয়োগপত্র পাওয়া কর্মীরা শিক্ষাগত যোগ্যতা গোপন করেছেন কি না, সংশ্লিষ্ট এলাকার চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার (সিডিপিও) বা শিশু কল্যাণ আধিকারিক সেটা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।

প্রবীরবাবুর মক্কেলদের অভিযোগ, উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশ সরকার মানেনি। তাই গত সেপ্টেম্বরে তাঁরা আদালত অবমাননার মামলা করেন।

হাইকোর্ট সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট এলাকার সিডিপিও গত বছরের ৩০ অক্টোবর সমাজকল্যাণ দফতরের যুগ্মসচিবকে চিঠি দিয়ে জানতে চান, আদালতের নির্দেশ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য কী। সিডিপিও একই সঙ্গে যুগ্মসচিবকে জানান, তিনি ওই নিয়োগ আপাতত বহাল রাখছেন। কিন্তু যুগ্মসচিবের দিক থেকে কোনও সাড়া না-পেয়ে সিডিপিও গত ১৬ ফেব্রুয়ারি চার জন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন।

বরখাস্তের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ওই চার কর্মী বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদালতের দ্বারস্থ হন। এ দিন সেই মামলারই শুনানি ছিল। বরখাস্ত কর্মীদের মামলায় যুক্ত করা হয় আগে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়া পাঁচ কর্মপ্রার্থীকেও। সেই পাঁচ প্রার্থীর আইনজীবী প্রবীরবাবু আদালতে নথিপত্র পেশ করে জানান, সিডিপিও ১৬ ফেব্রুয়ারি বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ সমাজকল্যাণ দফতরের যুগ্মসচিব ২৩ ফেব্রুয়ারি সিডিপিও-কে চিঠি দিয়ে জানাচ্ছেন, ওই চার কর্মী চাকরিতে বহাল থাকবেন। এটা কী করে সম্ভব, প্রশ্ন প্রবীরবাবুর। বরখাস্ত চার কর্মীর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী আদালতে জানান, সমাজকল্যাণ দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির নির্দেশেই ওই চিঠি দিয়েছেন যুগ্মসচিব।

এই বক্তব্য শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। সমাজকল্যাণ দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির উদ্দেশে তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘উনি কি নিজেকে ভগবান ভাবছেন নাকি!’’ বিচারপতি একই সঙ্গে সরকারি আইনজীবী তপন মুখোপাধ্যায়কে জানিয়ে দেন, ওই দফতরের যুগ্মসচিব যে-হলফনামা দেবেন, তাতে কোনও ত্রুটি থাকলে তাঁকে যেন বিধানসভার ভোটে কোনও দায়িত্ব দেওয়া না-হয়।

bureaucrat rebuked
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy