Advertisement
E-Paper

রক্তচক্ষুর তাড়নায় ‘ধীরে চলো’

সরকারি চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশের ব্যাখ্যা, এক দিকে পান থেকে চুন খসলে রোগীর পরিজনদের চড়াও হওয়া, অন্য দিকে একের পর এক ঘটনায় সরকারের চোখরাঙানি। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের ‘রোজকার ডিউটি’র বাইরে গিয়ে আর তাঁরা বিশেষ কিছু করবেন না।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩২

এক দিকে ঘরে ঘরে জ্বরের আতঙ্ক। অন্য দিকে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ঠাঁই নেই। এই দ্বিমুখী সমস্যা তো ছিলই। ডেঙ্গির মুখে এ বার অন্য এক বিপন্নতার মুখে পড়তে চলেছেন এ রাজ্যের অসংখ্য মানুষ। সরকারি ডাক্তারদের একটা বড় অংশই সরকারকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে কার্যত ‘ধীরে চলো’ পন্থা নিতে চলেছেন।

সেটা কেমন? সরকারি চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশের ব্যাখ্যা, এক দিকে পান থেকে চুন খসলে রোগীর পরিজনদের চড়াও হওয়া, অন্য দিকে একের পর এক ঘটনায় সরকারের চোখরাঙানি। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের ‘রোজকার ডিউটি’র বাইরে গিয়ে আর তাঁরা বিশেষ কিছু করবেন না।

ওই চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, নিজেদের কর্তব্যের বাইরে গিয়েই বহু ক্ষেত্রে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করতেন তাঁরা। ডেঙ্গির মরসুমে এক ওয়ার্ডে রোগীর শয্যা না মিললে অন্য ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করতেন। ওষুধ, স্যালাইনে ঘাটতি পড়লে পরিচিতি কাজে লাগিয়ে সে সবেরও ব্যবস্থা হত। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বার তাঁরা সেই অবস্থান থেকে সরে আসছেন। সরকার যেটুকু বরাদ্দ করেছে, তাতে যত জনকে পরিষেবা দেওয়া যায়, সেটুকুই হবে। তার বাইরে এক চুলও নয়।

অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স –এর তরফে গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিকাঠামো নেই, সেটুকু বলার অধিকারও আমাদের নেই। সব রকম ভাবে মুখ বন্ধ রাখা হচ্ছে। আমরাও তাই নিজেদের কাজটুকু ছাড়া আর কিছু করব না ঠিক করেছি। ডেঙ্গির মরসুমে দিন-রাত এক করে ডাক্তারেরা কাজ করছেন। বিনিময়ে সরকার যা করছে তাতে আমাদেরও এ ছাড়া আর কোনও পথ নেই।’’ কিন্তু সরকারকে শিক্ষা দিতে গিয়ে তাঁরা কি সাধারণ মানুষকেই আরও বিপন্ন করে তুলছেন না? গৌতমবাবুর জবাব, ‘‘আমাদেরও তো দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। এ ছাড়া আর কী-ই বা করতে পারি?’’

সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি করার নিয়ম কোথাও নেই। এখন ডাক্তারেরা বহু ক্ষেত্রে ৭২ ঘণ্টা, এমনকী ৯৬ ঘণ্টাও কাজ করেছেন। তার পরেও যা হচ্ছে, তাতে আমাদেরও হাত গুটিয়ে থাকার সময় এসেছে।’’

তাঁর এই বক্তব্যেরই প্রতিচ্ছবি বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘হাসপাতাল উপচে পড়ছে রোগীতে। অথচ বে়ড থাকছে না। এমনকী স্যালাইনের জোগানেও ঘাটতি পড়ছে মাঝেমধ্যেই। অথচ সে কথা বলা যাবে না। মুখ খুললে শাস্তি পেতে হবে। আমরাও তাই কলের পুতুলের মতো হাসপাতালে আসব-যাব, যতটুকু কাজ করার করব। এর বেশি আমাদের থেকে কেউ যেন প্রত্যাশা না করেন।’’ একই বক্তব্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের দুই ডাক্তারেরও। হাবরা হাসপাতালের এক ডাক্তার বলেছেন, ‘‘অরুণাচল দত্তচৌধুরী বারাসত হাসপাতালের যে ছবিটা তুলে ধরেছিলেন, আমাদের অবস্থাও তার চেয়ে আলাদা কিছু নয়। আমরা বাধ্য হয়ে মুখ বুজে রয়েছি।’’

কী বলছেন স্বাস্থ্যকর্তারা? দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সরকারি চাকরিতে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার পরিণতি ওঁরা
যদি এখনও না বোঝেন, তা হলে বোকামি করছেন।’’

এর পাল্টা সরকারি ডাক্তাররা কী বলছেন? ন্যাশনাল মে়ডিক্যালের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘সবাইকে সাসপেন্ড করলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটা চলবে না, সেটা সরকারেরও জানা আছে।’’

Doctors State Government Dengue Patients Hospitals
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy