Advertisement
E-Paper

দুল, বালা, কয়েন, মার্বেল, চাবি... যুবতীর পেট কেটে চোখ কপালে চিকিত্সকদের

হাসপাতাল সূত্রের খবর, পেটব্যথা, বমি-বমি ভাব, পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়ার মতো উপসর্গ নিয়ে দিন দশেক আগে ওই মহিলা হাসপাতালে এসেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০২:৫৩
সম্ভার: পেট থেকে বের হওয়া গয়না, কয়েনের স্তূপ। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

সম্ভার: পেট থেকে বের হওয়া গয়না, কয়েনের স্তূপ। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

হার, বালা, আংটি, ঘড়ি, মার্বেল থেকে কয়েন! তার কোনওটা আবার একাধিক। মানসিক ভারসাম্যহীন এক তরুণীর পাকস্থলীতে অস্ত্রোপচারের পরে মিলল এক কেজি ছ’শো আশি গ্রাম ওজনের জিনিস। বুধবার সকালে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শল্য বিভাগের প্রধান সিদ্ধার্থ বিশ্বাস এই অস্ত্রোপচার করেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে থাকাকালীন সিদ্ধার্থবাবু বছর দু’য়েক আগে এক রোগীর পাকস্থলী থেকে ৬৩৯টি লোহার পেরেক বের করে সাড়া ফেলেছিলেন। এই অস্ত্রোপচারকেও বিরল বলেই মনে করছেন মেডিক্যালের এমএসভিপি সুজয় মিস্ত্রি। তাঁর কথায়, “এমন রোগী সচরাচর কলকাতায় রেফার হয়ে যায়। রামপুরহাটের মতো জায়গায় এমন অস্ত্রোপচার ভাল টিম ওয়ার্ক ছাড়া সম্ভব হত না।’’

হাসপাতাল সূত্রের খবর, পেটব্যথা, বমি-বমি ভাব, পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়ার মতো উপসর্গ নিয়ে দিন দশেক আগে ওই মহিলা হাসপাতালে এসেছিলেন। সিটি স্কান, এক্স-রে রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকেরা অনুমান করেন রোগীর পাকস্থলীতে এমন কিছু ভারী জিনিস আছে যার ভারে পেট ঝুলে গিয়েছে! সিদ্ধার্থবাবু বলেন, ‘‘রোগী বা তার মা-বাবা কেউই রোগীর গয়না খাওয়া নিয়ে কখনও কিছু জানায়নি। পরে রিপোর্ট দেখে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে গয়না সহ বিপুল জিনিস বের করা হয়।” চিকিৎসকেরা জানান, রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অস্ত্রোপচার জরুরি ছিল। রোগীর অবস্থার কথা ভেবে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মেডিক্যাল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রোগীর হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুবই কম থাকার জন্য অস্ত্রোপচারের আগের দিন ভর্তি করানো হয়। পাঁচ বোতল রক্ত দেওয়া হয়। এ ভাবে হিমোগ্লোবিন এবং অ্যালবুমিন বাড়িয়ে তবে অস্ত্রোপচার করা হয়। ঘণ্টা দেড়েকের ওই অস্ত্রোপচারে সিদ্ধার্থবাবুকে সাহায্য করেন শল্য বিভাগের চিকিৎসক এটি এম সাহিন, সুমন দে। অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসক অরূপ ঘোষ এবং সুপ্রিয় ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন। রোগীর অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল।

এমন অস্ত্রোপচারের হাসপাতালে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসকেরা জানান, পাকস্থলী থেকে অসংখ্য মালা, দশটি নুপুর, চার জোড়া কানের দুল, নাকছাবি, দশ থেকে বারোটি ছোট তামার বালা, নাকের নথ, তিনটি লোহার চাবি, ত্রিশটিরও বেশি দশ টাকার কয়েন, দশটি পাঁচ টাকার কয়েন সহ দু’টাকা, এক টাকার কয়েন ও চারটি মার্বেল বের হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেন, ‘‘রোগী কিছু খেতে পারছিল না। অস্ত্রোপচার না করলে বাঁচানো যেত না।’’ রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৪ বছর বয়সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই মানসিক রোগে ভুগতে শুরু করেন ওই তরুণী। দীর্ঘ দিন মানসিক রোগের চিকিৎসা করানো হয়েছে বলেও পরিজনদের দাবি। কিন্তু, গয়না খাওয়ার কথা টের পাননি? তরুণীর মা বলেন, ‘‘দু’বছর আগে এক বার আমার আর মেয়ের গয়না হারিয়ে গিয়েছিল বলে ভেবেছিলাম। এখন বুঝতে পারছি মেয়ে সে সব খেয়ে ফেলেছে।’’ ওই তরুণীর ভাইয়ের গ্রামের বাড়িতে ইমিটেশন গয়নার দোকান আছে। তাঁর কথায়, ‘‘দিদি তা হলে লুকিয়ে তার কিছু খেয়েছে।’’

কেন এমন হয়? রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান শৌভিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রোগীকে পর্যবেক্ষণ না করে বলা যাবে না। তবে মানসিক চাপ থেকেই রোগীরা এমন আচরণ করে থাকেন।’’

Jewellery Doctors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy