বছর তিনেক আগে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিত্র সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় বেকসুর খালাস পেলেন দুই চিকিৎসক, অভিনব সিংহ ও শৌভিক বাগ।
আইনজীবীরা জানান, আদালত রায়ে জানিয়েছে, তদন্তকারী অফিসারের গাফিলতিতেই প্রকৃত অপরাধীরা সামনে আসেনি। অথচ পুলিশের কাছে অপরাধীদের গ্রেফতার করার অনেক সুযোগ ছিল। ওই তদন্তকারী অফিসার, অঞ্জন রায়ের তদন্ত করার ক্ষমতা তিন বছরের জন্য কেড়ে নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে বলে আইনজীবীরা জানান।
২০১২ সালের ২৮ মার্চ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীমৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। পরে তা নিয়ে গলসির কয়েকজন বাসিন্দাদের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের গোলমালও বাধে। সেই ঘটনারই ছবি তুলতে যান চিত্র সাংবাদিকেরা। দেখা যায়, কিছু জুনিয়র ডাক্তার গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়েই রোগীর পরিজনদের মারছেন। এরপরেই ওই চিকিৎসকেরা পাল্টা তেড়ে এসে সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের মারধর করেন বলে অভিযোগ। মাথা ফেটে আহতও হন কয়েকজন চিত্র সাংবাদিক। তার মধ্যে আনন্দবাজার পত্রিকার উদিত সিংহও ছিলেন। পরে সুজাতা মেহরা নামে এক সাংবাদিক বর্ধমান থানায় জুনিয়র ডাক্তার অভিনব সিংহ ও শৌভিক বাগ-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান। এতদিন সেই মামলাই চলছিল বর্ধমান আদালতে। বুধবার তারই রায় দেন বিচারক পবনকুমার মণ্ডল।
সপ্তাহ দেড়েক আগে, সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ দিনেও এই ঘটনায় পুলিশকে তীব্র ভৎসর্না করছিল আদালত। বিচারক বিরক্তির সঙ্গে জানিয়েছিলেন, তদন্তকারী অফিসার চেষ্টা করলেই ছবি দেখে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সাহায্যে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে পারতেন। পুলিশের এই ভূমিকার জন্যই বিচার প্রক্রিয়ায় অসুবিধে হচ্ছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। সরকারি আইনজীবী, শিবরাম ঘোষালের দাবি, এ দিনও বিচারক জানান, প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করার অনেক সুযোগ ছিল পুলিশের কাছে। কিন্তু পুলিশ চার্জশিট জমা দিলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ আদালতে জমা দিতে পারেনি। একই সঙ্গে ওই ঘটনার তদন্তকারী অফিসার, গলসি থানার ওসি অঞ্জন রায় ন্যূনতম তিন বছর যাতে কোনও ঘটনার তদন্ত করতে না পারেন তার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে সুপারিশ করা হয়। রায় পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, তাও আদালতকে জানানোর জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
সরকারি আইনজীবী এ দিন বলেন, “১১ জন সাক্ষীই আদালতে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেছেন। সাক্ষীরা আদালতে যে ছবি পেশ করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে জুনিয়র ডাক্তারেরা সাংবাদিকদের ধরে মারছেন।” আইনজীবীরা জানান, বিচারক তার রায়ে বলেছেন, তদন্তকারী অফিসার ইচ্ছা করলেই টিআই প্যারেড করে, মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সাহায্যে ছবি দেখিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তদন্তের মূল নিয়মগুলিকেই এড়িয়ে গিয়ে তা করেননি। সে জন্যই ওই অফিসারকে আর তদন্তের ভার না দেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে সুপারিশ করেছেন বিচারক।
বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল যদিও বলেন, “আমি এখনও রায়ের প্রতিলিপি হাতে পাইনি। কাজেই এ ব্যাপারে কিছু মন্তব্য করা ঠিক হবে না।” ওই তদন্তকারী অফিসার, গলসি থানার ওসি অঞ্জন রায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
—ফাইল চিত্র।