প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই চলছে। দু’দলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবস্থান বজায় রেখেই ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সিপিএম প্রার্থীকে সমর্থন করছে কংগ্রেস। কিন্তু তার পরেও দলের যাঁরা তৃণমূল সম্পর্কে ‘সুর নরমে’র কথা বলে হইচই করছেন, তাঁরা আসলে বিজেপির ‘পরিকল্পনা’য় চলছেন বলে মনে করছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বিজেপির পাতা ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের সতর্কও করে দিচ্ছেন প্রদেশ সভাপতি।
সর্বভারতীয় একটি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে অধীরের করা ‘নদী ও পুকুর’ সংক্রান্ত মন্তব্যের জেরে বিতর্ক শুরু হয়েছে কংগ্রেসে। বিধান ভবনে শনিবার দলের বৈঠকে জেলা সভাপতিদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছিলেন, তৃণমূলের প্রতি কি ‘নরম অবস্থানে’র কোনও ইঙ্গিত আছে? তখনই এক প্রস্ত অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন প্রদেশ সভাপতি। দলের মধ্যে জলঘোলা বন্ধ করতে এ বার আরও এক ধাপ এগিয়েছেন অধীর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সুর নরমের বিতর্কটাই অবান্তর! পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপির মেরুকরণের আবহ কাটতে শুরু করেছে। তৃতীয় শক্তি হিসেবে বাম ও কংগ্রেস ধীরে ধীরে জমি উদ্ধার করছে। সংখ্যালঘুদের একাংশ তৃণমূলের দিক থেকে সরে আসছেন। কিন্তু বিজেপি চায় না যে, তৃতীয় শক্তি তৈরি হোক, তাতে তাদের অসুবিধা। তাই তারা এই কংগ্রেস বা সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের বন্ধুত্বের গল্প তৈরি করছে। যাঁরা এই নিয়ে কথা বলছেন, তাঁরা বিজেপির সুরেই চলছেন।’’
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে এর আগে অধীর ছিলেন লোকসভার বিরোধী দলের নেতা হিসেবে মূলত পদাধিকার বলে। এ বার নতুন ওয়ার্কিং কমিটিতে রবিবার তাঁর নাম উঠে এসেছে ৫ নম্বরে। দলের সর্বভারতীয় স্তরে মজবুত অবস্থানে বলীয়ান হয়ে অধীর বলছেন, ‘‘বিরোধী জোটকে এ রাজ্যে ‘বিজেন্ডিয়া’ বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস বা বামেদের নয়, সব ভোট তৃণমূলকে দেওয়ার কথা বলেছেন মমতা। কংগ্রেস তো কিছুই বলেনি! তৃণমূলের সঙ্গে জোট করা নিয়েও কেউ কিছু বলেনি। এই প্রচারটা চালাচ্ছে বিজেপি, পিছনে আছেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই তালেই কেউ কেউ সুর নরমের কথা বলছেন।’’
অধীর যে দিন এই কথা বলছেন, সে দিনই ফের ‘সুর নরমে’র অভিযোগ তুলে তোপ অব্যাহত রেখেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র ও আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সুর নরমের কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ হয়তো নিজেদের আসন পাওয়া বা বাঁচানোর জন্য তৃণমূলের দালালি করছেন! আমি বলেছি তৃণমূলের সঙ্গে কোনও রকম জোট, সমঝোতা বা ভাব-ভালবাসা রাখা যাবে না। এটা যদি আমার অপরাধ হয়, তা হলে দল কী ব্যবস্থা নেবে, আমি তার পরোয়া করি না!’’ নিয়মিত মন্তব্য করে কৌস্তভ যে ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাকে কার্যত আহ্বান জানাচ্ছেন, তাতে তাঁর বিজেপির দিকে পা বাড়ানো সময়ের অপেক্ষা— এমনই ধারণা কংগ্রেসের একাংশের। ওই অংশ উদাহরণ দিচ্ছে সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আবার কৌস্তভ যখন ‘সুর নরম’ নিয়ে অভিযোগ করছেন, দক্ষিণ কলকাতায় তখন কংগ্রেসের তুলসী মুখোপাধ্যায়, দ্বারকানাথ (বাপ্পা) ঘোষ, জ়াহিদ হোসেনেরা গড়িয়াহাট থানা ঘেরাও করেছেন কংগ্রেসের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতারের দাবিতে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির প্রশ্ন, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোন লড়াইয়ে আমি পিছিয়ে এসেছি বা সুর নরম করেছি? এই তো পঞ্চায়েত ভোটে এত লড়াই হল, তার জের এখনও চলছে। সংসদের মধ্যে মণিপুর-প্রশ্নে বা অনাস্থা বিতর্কে কংগ্রেস এবং তৃণমূল একই সুরে বিজেপির বিরোধিতা করেছে। তার সূত্র ধরে সুর নরম বা আপসের যে সব কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত!’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘কংগ্রেস এবং সিপিএমের নেতৃত্ব বাংলায় দলের কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। সেটা বুঝতে পারছেন বলেই ওঁদের দলের নেতা-কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন। এতে বিজেপির ফাঁদের কী আছে? আর ‘ইন্ডিয়া’ জোট করবেন কিন্তু অধীরবাবু মমতার কথা শুনবেন না, সেটা কি হয়!’’
সূত্রের খবর, দিল্লি বা প্রদেশ নেতৃত্ব কী করছেন, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর আগে এলাকায় সংগঠনে নজর দেওয়ার জন্যও জেলা সভাপতিদের আগের দিনের বৈঠকে কড়া বার্তা দিয়েছেন অধীর। জেলায় জেলায় লড়াই করে সিপিএম পঞ্চায়েতে এত প্রার্থী দিতে পারলেও কংগ্রেস কেন বহু এলাকায় সংগঠন পোক্ত করতে পারছে না, জেলা নেতৃত্বকে সেই প্রশ্নে ভাবতে বলেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy