Advertisement
E-Paper

ডায়ালিসিস করতে বলেছিলেন প্রদীপই, দাবি করছেন অর্পিতা

তিনি বেঁকে না বসলে এত দিনে একটি ‘ভিভিআইপি’ কুকুরের ডায়ালিসিস হয়েই যেত এসএসকেএম হাসপাতালে। চাপে পড়ে একটি পশুর ডায়ালিসিস করে লজ্জার রেকর্ড বইয়ে নাম উঠে যেত রাজ্য সরকারের এই সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালটির।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ০৪:৫৩

তিনি বেঁকে না বসলে এত দিনে একটি ‘ভিভিআইপি’ কুকুরের ডায়ালিসিস হয়েই যেত এসএসকেএম হাসপাতালে। চাপে পড়ে একটি পশুর ডায়ালিসিস করে লজ্জার রেকর্ড বইয়ে নাম উঠে যেত রাজ্য সরকারের এই সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালটির।

যে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের অধিকর্তা এবং নেফ্রোলজির বিভাগীয় প্রধান বিশেষ ভাবে সুপারিশ লিখে দিয়েছেন, ‘মেডিক্যাল এথিক্স’ মেনে তা খারিজ করে সহকর্মীদের অনেকেরই ফোন পাচ্ছেন তিনি। কিন্তু প্রকাশ্যে তাঁকে বাহবা জানাতে কুণ্ঠায় রয়েছেন সহকর্মীদের অনেকেই। কারণ, যে ঘটনায় খোদ হাসপাতাল অধিকর্তাকে বদলি হতে হয়, তার মূল হোতাকে প্রকাশ্যে সাধুবাদ দিয়ে সমস্যা বাড়াতে চাইছেন না অধিকাংশ সহকর্মী। স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা বিষ্মিত— এক জন সরকারি চিকিৎসকের কী ভাবে এমন মেরুদণ্ড গজিয়ে গেল! এক স্বাস্থ্য-কর্তার স্বীকারোক্তি, ‘‘এ রাজ্যের সরকারি আমলাদের যে কারও কারও মেরুদণ্ড নামক জিনিসটা রয়েছে, তা প্রমাণ করেছেন এসএসকেএম-এর নেফ্রোলজির চিকিৎসক অর্পিতা রায়চৌধুরী!’’ এমন মেরুদণ্ডী সরকারি চিকিৎসককে আর কলকাতায় রাখা হবে কী না, তা নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের অলিন্দে চলছে জল্পনাও। এসএসকেএমের নেফ্রোলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অর্পিতা রায়চৌধুরী ৭ বছর এই হাসপাতালেই রয়েছেন। তবে আর কত দিন তিনি এখানে থাকতে পারবেন, কুকুর-কাণ্ডের পরে সে বিষয়ে সংশয়ে তিনি নিজেও।

অর্পিতাদেবীকে প্রশ্ন করা হয়, স্রোতের উল্টো দিকে হেঁটে বিভাগীয় প্রধান রাজেন পাণ্ডে এবং হাসপাতালের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের সুপারিশ খারিজের মতো মনের জোর তিনি পেলেন কোথায়? তাঁর কি শাস্তির ভয় নেই? বছর সাতচল্লিশের চিকিৎসক বলেন, ‘‘আসলে একটি কুকুরের ডায়ালিসিসের রেফারাল স্লিপটা দেখে আমি এতটাই স্তম্ভিত হয়েছিলাম, যে এত ভাবনা তখন মাথায় আসেনি। প্রথমে ভেবেছিলাম— নিশ্চয়ই কোথাও কিছু গোলমাল হচ্ছে। তার পর নিজেকে বেশ অপমানিত লাগছিল। কেন আমাদের বলা হবে একটা কুকুরের ডায়ালিসিস করতে? সরাসরি ফোন করেছিলাম প্রদীপ মিত্রকে। বলেছিলাম, স্যার আপনার সুপারিশের অর্থ ঠিক বুঝতে পারছি না।’’ স্যার যে জবাব দিয়েছিলেন, তাতে আরও অবাক হন অর্পিতাদেবী।

কেন? অর্পিতা বলেন, ‘‘উনি বললেন— এটা যে হতে পারে না, তা উনিও জানেন। কিন্তু ওঁর পক্ষে না বলাটা একটু অসুবিধের। আমার আপত্তির কারণ জানিয়ে নোট পাঠিয়ে দিতে বললেন। আমি সেটাই করলাম!’’

কুকুরের ডায়ালিসিসের রেফারাল স্লিপটি প্রদীপবাবু নিজে সই করেই আপনাদের বিভাগে পাঠিয়েছিলেন? ‘‘হ্যাঁ। আননোন ডগ-লেখা রেফারাল স্লিপে প্রদীপবাবু সই করে পাঠান আমাদের বিভাগীয় প্রধান রাজেন্দ্র পাণ্ডেকে। কিন্তু পাণ্ডে স্যার তখন কলকাতায় ছিলেন না। ডায়ালিসিসের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয় ভারপ্রাপ্ত ভিজিটিং চিকিৎসককে। ফলে আমার কাছেই স্লিপটা আসে।’’—বললেন অর্পিতা। সুপারিশ পাঠিয়ে প্রদীপবাবু সে দিন প্রকৃত সিনিয়র চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করেননি বলে মত অর্পিতাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘কুকুরের ডায়ালিসিস যে এসএসকেএমে করা সম্ভব নয়— এটা বোঝা প্রদীপ স্যারের পক্ষে অসুবিধা ছিল না! অথচ তার পরেও তিনি সুপারিশ করেছিলেন।’’

রাজেন্দ্র পাণ্ডের ভূমিকাটি কী ছিল?

অর্পিতার মন্তব্য, ‘‘প্রদীপ মিত্রের সই করা রেফারাল স্লিপ যেমন আসে, রাজেন্দ্র স্যারও তেমনই ফোন করে আমাদের এক জুনিয়র ডাক্তারকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কী ভাবে কুকুরের ডায়ালিসিস করতে হবে। এক জন চিকিৎসক হিসেবে আমার কাছে সিনিয়রদের এই ভূমিকা একেবারেই অভিপ্রেত ছিল না!’’

তিনি কুকুরের ডায়ালিসিস করাতে আপত্তি করাতেই কি প্রদীপ মিত্রকে বদলি হতে হল?

জবাবে নেফ্রোলজি বিভাগের এই চিকিৎসক বলেন, ‘‘প্রদীপবাবু বদলি হওয়ায় আমার খুব খারাপ লেগেছে। নিজেকে মহান প্রতিপন্ন করতে বা কারও ক্ষতি করতে চেয়ে কিন্তু আমি সে দিন প্রতিবাদ করিনি। সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছিল, ওই সুপারিশ মানলে শুধু নেফ্রোলজি বিভাগ নয়, গোটা হাসপাতালের পক্ষে সেটা খুব খারাপ হবে।’’ অর্পিতা বলেন, এক জন ভুল করলে সিনিয়র-জুনিয়র নির্বিশেষে আর এক জন সেটা শুধরে দেবেন, এতে তো কোনও অন্যায় নেই!

কিন্তু শাস্তির ভয়?

অর্পিতার কথায়, ‘‘আমার বিবেক তখন যা বলেছে, সেটাই করেছি। এর পর যদি কারও কিছু করার ইচ্ছা হয়, করবেন। অত ভয় করলে চলে না। মাথা উঁচু করে থাকতে পারলেই হল!’’

কুকুরের ডায়ালিসিসের প্রস্তাব শোনামাত্র খারিজ না-করে তিনি রেফারাল স্লিপ পাঠালেন কেন— জানতে চাওয়া হলে প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘আমি এর কোনও জবাব দেব না।’’ আর রাজেন্দ্র পাণ্ডেকে বার-বার ফোন করে এবং এসএমএস করেও কোনও সাড়া মেলেনি। কুকুর-কাণ্ডের পরে অর্পিতাদেবীকে অবশ্য এখনও কাজ করতে হচ্ছে রাজেন্দ্র পাণ্ডের অধীনেই। এই রকম পরিস্থিতিতে কাজ করতে অস্বস্তি হচ্ছে না?

‘‘ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর রাজেন্দ্র স্যার আমাকে ফোন করে জানতে চান, কেন আমি আপত্তি করেছি এবং ইনফেকশন ছড়ানোর আশঙ্কার কথা বলেছি। আমি তাঁকে আমার মত সবিস্তার বলি। তার পর আমাদের সামনাসামনি দেখা হলেও এই প্রসঙ্গ কেউই তুলিনি। এখনও পর্যন্ত আমার কাজ করতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না,’’—সোজা ব্যাটেই বাউন্সার সামলালেন এসএসকেএমের নেফ্রোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।

parijat bandyopadhyay arpita roychoudhuri pradip mitra sskm director dog dialysis latest news pradeep mitra dr arpita roy choudhuri vvip dog dog dialysis pradip mitra directed
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy