Advertisement
E-Paper

ড্রোন ওড়ালেই তেড়ে আসছে পুলিশ, বিএসএফ! রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় ফ্যাসাদে ভ্লগার এবং ফোটোগ্রাফারেরা

গত সপ্তাহেই ড্রোনের মতো কিছু একটা উড়তে দেখা গিয়েছিল কলকাতার আকাশে। জোর রহস্য দানা বেঁধেছিল তা নিয়ে। যদিও তা সত্যিই ড্রোন ছিল কি না, শেষ পর্যন্ত স্পষ্ট করেনি লালবাজার।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ ১৪:২৭
ড্রোন ঘিরে আতঙ্ক রাজ্যের সীমান্ত এলাকায়।

ড্রোন ঘিরে আতঙ্ক রাজ্যের সীমান্ত এলাকায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

এত দিন বিয়েবাড়ির ভিডিয়ো বানাতে গেলেই বর-বৌয়ের আবদার থাকত, ‘‘ড্রোন শট চাই-ই চাই।’’ গানের ভিডিয়োতেও অন্তত একটা ড্রোন শট না হলে নয়! চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে ভ্লগার, ফোটোগ্রাফারেরাও হুড়মুড়িয়ে ড্রোন কিনেছিলেন। সেই উড়ন্ত যন্ত্র নিয়েই এখন মহা ফ্যাসাদে তাঁরা।

এত দিন ড্রোন দেখলেই যাঁরা বিস্ময় বালকের মতো আকাশের দিকে চেয়ে থাকতেন, সেই স্থানীয়েরাই এখন চিৎকার-চেঁচামেচি জুড়ে দিচ্ছেন! খবর পেয়ে রে রে করে তেড়ে আসছে পুলিশ, বিএসএফ-ও। শেষমেশ থানায় বসে ভ্লগার, ফোটোগ্রাফারদের ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে, ‘‘স্যর, বিশ্বাস করুন, এটা ইন্দ্রের বজ্র বা বরুণাস্ত্র নয়। শুধু ভিডিয়ো তোলে। এটা নতুন মডেল। ৪কে ভিডিয়ো হয় এতে।’’ কিন্তু কে শোনে কার কথা! সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে নিচ্ছে ওই যন্ত্র।

গত সপ্তাহেই ড্রোনের মতো কিছু একটা উড়তে দেখা গিয়েছিল কলকাতার আকাশে। জোর রহস্য দানা বেঁধেছিল তা নিয়ে। যদিও তা সত্যিই ড্রোন ছিল কি না, শেষ পর্যন্ত স্পষ্ট করেনি লালবাজার। সেনার তরফেও কিছু জানানো হয়নি আর। কিন্তু এটা সত্যিই যে, আতঙ্ক ছড়িয়েছিল কলকাতাবাসীর মনে।

দিন দুয়েক আগে একই ঘটনা ঘটেছে নদিয়ার ভীমপুরেও। বিয়েবাড়িতে বরযাত্রী ঢোকার আগে ড্রোন উড়িয়েছিলেন এক ফোটোগ্রাফার। কিন্তু স্থানীয়েরাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পুলিশে খবর দিয়ে দেন। মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলে এসে হাজির হয় দুই থানার পুলিশ এবং দু’জন বিএসএফ জওয়ান। ক্যামেরাম্যান তাঁদের অনেক ক্ষণ ধরে বোঝালেন, ‘‘স্যর, এটা দেশি এফপিভি ড্রোন। এর জন্য আলাদা করে অনুমতি নিতে লাগে জানতাম না...।’’

জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার পর পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। ভারতীয় সেনার সেই ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানের পরে ভারতের উপর একাধিক বার ড্রোন হামলার চালানোর চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। সেই আবহে ড্রোন ব্যবহারে, বিশেষত সীমান্ত এলাকাগুলিতে কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ড্রোন ওড়ালে সন্দেহের নজরে দেখছেন স্থানীয়েরাও।

নদিয়ার ভ্লগার দেবব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ড্রোন দেখলেই লোকে পুলিশ, বিএসএফ-কে ডাকছে! কী করব বুঝতে পারছি না। আমার ছেলের জন্মদিনে ড্রোন দিয়ে ভিডিয়ো করছিলাম। তিন মিনিটেই পাঁচটা ফোন এসেছে। জিজ্ঞেস করছে, ড্রোনটা আমার কি না। আমি কী করি? কেন ড্রোন উড়িয়েছি?’’ আর এক ফোটোগ্রাফার আশিস ঘোষের কথায়, ‘‘আগে বিয়ে থাকলেই লোকে ড্রোন ভিডিয়ো চাইত। এখন শুরুতেই বলে দিচ্ছে, ড্রোন ব্যবহার করা যাবে না।’’

বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ থানার দুর্গাপুর-বরোজডিহি গ্রামে শনিবার রাতে একটি ড্রোন উদ্ধার হয়েছিল। খবর ছড়াতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। যদিও বিএসএফ পরে জানায়, এই ধরনের ড্রোন মূলত অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি নীলোৎপল পাণ্ডে বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ থেকে যে ড্রোন উদ্ধার হয়েছে, তা ফোটোগ্রাফারেরা ব্যবহার করেন। মূলত অনুষ্ঠানে কাজে ব্যবহৃত হয়। ৪০০ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে ১৫-২০ মিনিট মতো উড়তে পারে। ৪কে ক্যামেরা থাকে শুধু। আর অন্য কোনও ভারী বস্তু বহনের ক্ষমতা নেই। উদ্ধার হওয়া ড্রোনটি শমসেরগঞ্জ থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’’

মুর্শিদাবাদের কিরীটেশ্বরী মন্দিরের ভ্লগ তৈরি করতে গিয়ে পুলিশি বাধার মুখে পড়েছেন স্থানীয় ভ্লগার বীরেশ দাস। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ এখন ড্রোন ওড়ানোর অনুমতিই দিচ্ছে না।’’ জঙ্গিপুর পুলিশ জেলা এলাকায় ভুট্টা জমিতে সম্প্রতি একটি ড্রোন পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তা নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সেটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার অমিতকুমার সাউ বলেন, ‘‘উদ্ধার হওয়া ড্রোনটি স্থানীয় এক বাসিন্দার বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। কিন্তু কী কারণে উনি ড্রোনটি ওড়াচ্ছিলেন, তা জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা চলছে।’’

drones India Pakistan Tension
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy