Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja 2022

অসুরে ছাড়, গ্রেফতার কমলেশ্বরেরা, বিতর্ক পুজোর জোড়া কাণ্ডে

কসবার রুবি পার্ক এলাকায় অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার উদ্যোগে একটি দুর্গা পুজোয় মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর আদলে অসুর রাখা নিয়ে বিতর্ক বেধেছিল।

পুলিশ-প্রশাসনের দু’রকম ভূমিকা নিয়ে বহাল থাকল প্রশ্ন।

পুলিশ-প্রশাসনের দু’রকম ভূমিকা নিয়ে বহাল থাকল প্রশ্ন। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২২ ০৫:২২
Share: Save:

পুজোর মধ্যে শহরে ঘটে যাওয়া দুই ঘটনা ঘিরে বিতর্কের রেশ বজায় থাকল এখনও। দুই ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের দু’রকম ভূমিকা নিয়ে বহাল থাকল প্রশ্নও।

কসবার রুবি পার্ক এলাকায় অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার উদ্যোগে একটি দুর্গা পুজোয় মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর আদলে অসুর রাখা নিয়ে বিতর্ক বেধেছিল। ঘটনার নিন্দায় সরব হয় কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম ও অন্যান্য বামপন্থী দল-সহ বিভিন্ন সংগঠন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ গিয়ে অসুরের মাথায় চুল ও মুখে কালো গোঁফ লাগিয়ে দিয়ে বিতর্ক ধামাচাপা দিলেও উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্লেখযোগ্য ভাবে, উদ্যোক্তাদের গ্রেফতারের দাবি করেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সপ্তমীর রাতে রুবি পার্কে ওই বিতর্ক মাথাচাড়া দেওয়ার পাশাপাশিই রাসবিহারী অ্যাভিনিউ ও প্রতাপাদিত্য রোডে এলাকায় সিপিএমের একটি বই বিপণিতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। বিপণিতে ‘চোর ধরো, জেল ভরো’ পোস্টার রাখা নিয়ে গোলমালের সূত্রপাত। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের বাহিনীই হামলা চালায়। অষ্টমীর সন্ধ্যায় ওই একই জায়গায় ফের স্টল খুলে প্রতিবাদ-সভায় আইনজীবী ও সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য বক্তৃতা করার সময়ে ফের হামলা হয়। সভায় জমায়েত হওয়া মানুষজন হামলাকারীদের তাড়াও করেন। কিন্তু পুলিশ গিয়ে পরিচালক ও অভিনেতা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এবং সিপিএমের কয়েক জন নেতাকে ‘সতর্কতামূলক গ্রেফতার’ করে। বই নিয়ে প্রতিবাদীদের ক্ষেত্রে পুলিশ ‘সক্রিয়’ হল কিন্তু অসুর-কাণ্ডে কেন হল না, সেই প্রশ্নই উঠেছে নানা মহল থেকে।

বেলেঘাটার যে গান্ধী ভবনে (তখন নাম ছিল ‘হায়দরি মঞ্জিল’) স্বাধীনতার সময়ে গান্ধীজি অনশনে বসেছিলেন, সেই ভবনের পরিচালক ‘পূর্ব কলকাতা গান্ধী স্মারক সমিতি’র সভাপতি শঙ্কর সান্যাল বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘‘মা দুর্গার আরাধনায় এই পদ্ধতি অবলম্বন করা জঘন্য, কুৎসিত, হিন্দু-বিরোধী ও দেশ-বিরোধী। বোঝাই যাচ্ছে, দুর্গা পুজোর নামে উদ্যোক্তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে এই কাজ করেছেন। যে শহরে ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার জন্য গান্ধীজি মহাব্রত নিয়েছিলেন, সেখানে এই ঘটনা ঘটিয়ে বাংলার সংস্কৃতিকেও অপমান করা হয়েছে।’’ উদ্যোক্তাদের তরফে মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার দাবির পাশাপাশি রাজ্য প্রশাসন যাতে উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করে, সেই দাবিও করেছেন শঙ্করবাবু।

হিন্দু মহাসভার নেতা চন্দ্রচূড় গোস্বামী অবশ্য বিতর্ক সামনে আসতেই দাবি করেন, অসুরের সঙ্গে গান্ধীর মিল ‘কাকতালীয়’! তবে কেন গান্ধীকে তাঁরা ‘জাতির জনক’ মনে করেন না, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। আর তৃণমূলের নেতা তাপস রায় বলেছেন, ‘‘গান্ধীজির অহিংস আন্দোলনের পথের পাশাপাশি অন্য ধারাও ছিল। ভিন্ন পথ, ভিন্ন মত থাকতেই পারে। কিন্তু দুর্গা পুজোর মধ্যে গান্ধীজি’র মতো অসুর সাজিয়ে যারা মতের ফারাককে এই স্তরে নামিয়ে আনতে পারে, তাদের জন্য করুণা হয়!’’ তবে সার্বিক সমালোচনা, এফআইআর, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন হওয়া সত্ত্বেও উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয়নি, ব্যাখ্যা মেলেনি পুলিশ-প্রশাসনের তরফে। তৃণমূল নেতৃত্বও ‘প্রশাসনের বিষয়’ বলে মন্তব্য করতে চাননি।

অন্য দিকে, বইয়ের বিপণি ভাঙার প্রতিবাদ ও গ্রেফতারের ঘটনার প্রেক্ষিতে কমলেশ্বর মন্তব্য করেছেন, ‘ব্যক্তিতান্ত্রিক নয় লড়াইটা সমষ্টিগত’। শাসক দলের হাতে এবং ‘মিথ্যা মামলা’য় আরও অনেক বেশি মানুষ ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, ঋত্বিক চক্রবর্তী-সহ শিল্প ও সংস্কৃতি জগতের অনেকেই কমলেশ্বরের পাশে দাঁড়িয়ে সরব হয়েছেন। রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘মতবিরোধ বই নিয়ে নয়। পুজোয় স্টল তৃণমূলেরও ছিল। কিন্তু এর মধ্যে দৈনন্দিন রাজনীতি বাদ। পুজোর ভিড়ে রাজনৈতিক প্ররোচনার প্রচার নিয়েই সমস্যা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022 Gandhi Kamaleshwar Mukherjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE