Advertisement
E-Paper

গরিব মানুষ বাবু, লোকেদের অ্যাকাউন্ট সাফ করে বেড়াই

হাত ধরা আছে পুলিশের হাতে। পা টলোমলো! এমন অবস্থায় থানায় ঢুকতেই জুটল জাঁদরেল দারোগার ধমক। ‘‘কী করেছিস?’’— প্রশ্ন শুনেই টলোমলো পায়ের অভিযুক্ত বলে উঠল, ‘‘গরিব আদমি স্যার। কুছ তো করনা থা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৪

হাত ধরা আছে পুলিশের হাতে। পা টলোমলো! এমন অবস্থায় থানায় ঢুকতেই জুটল জাঁদরেল দারোগার ধমক। ‘‘কী করেছিস?’’— প্রশ্ন শুনেই টলোমলো পায়ের অভিযুক্ত বলে উঠল, ‘‘গরিব আদমি স্যার। কুছ তো করনা থা। উসলিয়ে লোগো কা অ্যাকাউন্ট সাফ কর দিয়া!’’ (গরিব মানুষ, বাবু। কিছু তো করতে হবে। তাই লোকের অ্যাকাউন্ট সাফ করে দিয়েছি!)

পুলিশি সূত্রের খবর, মাঝরাতে বৌবাজার থানায় ঢুকে এমনই অকপট স্বীকারোক্তি করেছিল দমদম জ’পুর রো়ডের বাসিন্দা অনিল সিংহ। তা শুনে চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল তার দুই শাগরেদ পাপাই সরকার আর সুরজ সিংহের। অনিলের মুখ জুড়ে তখন সরল হাসি। অভিযুক্তের মেজাজ দেখে জেরায় আর সময় খরচ করেননি তদন্তকারীরা। তিন জনকেই পুরে দিয়েছিলেন লক-আপে।

ঘটনাটা কী?

পুলিশ জানায়, বিজ্ঞাপন দেখে ঋণের জন্য একটি নম্বরে যোগাযোগ করেন উত্তর কলকাতার মসজিদবাড়ি লেনের বাসিন্দা শুভ্র দাস। সেখানেই প্রহ্লাদ গোয়েন্কা নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। তদন্তকারীদের দাবি, অনিলই প্রহ্লাদ নামে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। ঋণের জন্য মাস তিনেক আগে আবেদনপত্রের সঙ্গে ছ’টি ব্ল্যাঙ্ক চেক জমা দিয়েছিলেন শুভ্রবাবু। কিন্তু ঋণ মেলেনি। শেষে তিনি ওই ছ’টি চেকের নম্বর দিয়ে বৌবাজার থানা এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে (সেখানেই তাঁর অ্যাকাউন্ট রয়েছে) টাকা দেওয়া বন্ধ রাখতে বলেন। পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার পাপাই সরকার নামে এক জন সেই ছ’টি চেকের মধ্যে একটি নিয়ে ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে যান। চেকটি দেখেই ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ পাপাইকে আটক করেন। শুভ্রবাবু ও পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে পাপাইকে গ্রেফতার করে।

পাপাইকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, সে সূর্য ফিনান্স নামে একটি সংস্থার কর্মী। তার কাজ ছিল, বিভিন্ন চেক নিয়ে গিয়ে টাকা তোলা। সেই টাকা সুরজ সিংহ নামে এক জনকে দিত সে। এর পরে পাপাইকে দিয়ে ফোন করিয়ে রাত ৮টা নাগাদ সুরজকে বড়বাজারে ডেকে এনে গ্রেফতার করা হয় তাকে। জেরায় সুরজ তার জামাইবাবু অনিলের নাম জানায়। রাতেই বৌবাজার থানার দুই অফিসার সুদীপ্ত ঘোষ ও অংশুমান চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি দল জ’পুর রোডে হানা দিয়ে অনিলকে গ্রেফতার করে আনে।

লালবাজারের এক কর্তা জানান, পাপাইয়ের বাড়ি বর্ধমানে। অনিল ও সুরজ আদতে বিহারের জামুইয়ের বাসিন্দা হলেও জ’পুর রোডে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। কম সুদে, দ্রুত ঋণ দেওয়ার নামে জালিয়াতি করার জন্য ‘সূর্য ফিনান্স’ নামে সংস্থাও খুলেছিল। প্রথমে আবেদনপত্রের সঙ্গে সইবিহীন ‘ব্যাঙ্ক চেক’ হাতিয়ে নিত তারা। আবেদনপত্রে থাকা প্রার্থীর সই নকল করে তা দিয়ে টাকা তুলে নিত।
তারা এই ধরনের বেশ কয়েকটি জালিয়াতির ঘটনায় যুক্ত বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ। বুধবার তিন জনকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। আদালত তাদের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। এই চক্রে আরও কয়েক জন জড়িত বলে পুলিশের সন্দেহ।

পুলিশ জানাচ্ছে, বুধবার সকালে গারদে ঘুম ভাঙতেই মেজাজ বিলকুল বদলে গিয়েছে অনিলের। তাকে ভুয়ো অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে চিৎকারও জুড়ে দেয় সে। শেষে পুলিশি ধমক আর শাগরেদদের সান্ত্বনায় চুপ মেরে যায় অনিল।

bank account forgery anil singh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy