Advertisement
E-Paper

দরজা খুলল ডানলপ, তবু সন্দিগ্ধ শ্রমিকরা

এত দিনের বন্ধ দরজা হাট করে খোলা। প্রবেশে নিষেধ নেই। সামনে ক্ষয়াটে, মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া মানুষগুলো। কাচের পিছনে কোঁচকানো চোখে কিন্তু আলোর ঝলকানি নেই। আগের ক’বারের মতো ফের খুলল ডানলপ কারখানা। কিন্তু তিক্ত অভিজ্ঞতায় শ্রমিকেরা জানেন, এতে আনন্দ করতে নেই। চোখের সামনে একটু-একটু করে শেষ হয়ে গিয়েছে যে বিশাল কারখানা, তাকে ফের বাঁচিয়ে তোলার সদিচ্ছা নিয়েই সংশয় রয়েছে তাঁদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৬
ডানলপ কারখানায় মালিক পবন রুইয়া।  —নিজস্ব চিত্র।

ডানলপ কারখানায় মালিক পবন রুইয়া। —নিজস্ব চিত্র।

এত দিনের বন্ধ দরজা হাট করে খোলা। প্রবেশে নিষেধ নেই।

সামনে ক্ষয়াটে, মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া মানুষগুলো। কাচের পিছনে কোঁচকানো চোখে কিন্তু আলোর ঝলকানি নেই।

আগের ক’বারের মতো ফের খুলল ডানলপ কারখানা। কিন্তু তিক্ত অভিজ্ঞতায় শ্রমিকেরা জানেন, এতে আনন্দ করতে নেই। চোখের সামনে একটু-একটু করে শেষ হয়ে গিয়েছে যে বিশাল কারখানা, তাকে ফের বাঁচিয়ে তোলার সদিচ্ছা নিয়েই সংশয় রয়েছে তাঁদের।

সত্যি বলতে, গত চোদ্দো বছরে অনেকটাই বিবর্ণ হয়েছে হুগলির সাহাগঞ্জে টায়ার তৈরির এই কারখানার শ্রমিকদের চেহারাগুলো। কিছু বকেয়া টাকা পাওয়া যাবে শুনে বৃহস্পতিবার সকালে নাকেমুখে দু’টো গুঁজে পড়ি-মরি করে কেউ সাইকেলে, কেউ অটোয় চড়ে তাঁরা হাজির হয়েছিলেন সাদা কাপড়ে বাঁধা মঞ্চের সামনে।

সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ডানলপ কারখানার মালিক পবন রুইয়া বললেন, “চোখে জল এসে যাচ্ছে আমার। ২০০৬ সালে যখন কারখানা নিয়েছিলাম, তখন যে অবস্থায় দেখেছিলাম এখন পরিস্থিতি অনেক খারাপ। জঙ্গল হয়ে গিয়েছে। কারখানার অনেক যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গিয়েছে।” কেন এমন হল? তরী যখন ক্রমশ ডুবছিল তখন কর্তারা বেহালা বাজাচ্ছিলেন কি না, রাজ্য সরকার ডুগি-তবলায় তাল ঠুকছিল কি না, সেই তিক্ত প্রশ্ন এ দিন ওঠেনি। কিন্তু চিঁড়েও ভেজেনি। শ্রমিকদের চোখ জল অনেক আগেই শুকিয়ে গিয়েছে।

শুধু তো পবন রুইয়া নন। মঞ্চ আলো করে ছিলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্তেরা। রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু দাবি করলেন, “যখন বিরোধী দলনেতা ছিলাম, তখন বারে বারেই কারখানা খোলার দাবিতে এখানে এসেছি। আমিই পবন রুইয়াকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। অনেকটা আশার আলো দেখেই চলে এলাম।” আক্ষেপ করলেন, “টাটা বা পবন রুইয়ার মতো ভারতীয় শিল্পপতিদের বিদেশে কারখানা কেনার কথা যখন শুনি, ভারতীয় হিসেবে ভাল লাগে। খারাপও লাগে, যখন দেখি ডানলপের মতো একটা বিশাল প্রতিষ্ঠান এই অবস্থায় পড়ে থাকে।”

শ্রমমন্ত্রী বললেন, “এই পর্বে আমার মনে হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ সত্যিই কারখানা খুলতে আগ্রহী। বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ করছেন। শ্রমিকেরা বকেয়াও আজ থেকে পেতে শুরু করলেন। ভাল কিছুরই আশা করছি।” কথার খেই ধরে পবনবাবু যোগ করলেন, “কোনও মালিকই লোকসান চায় না। আমি যে এতগুলো টাকা খরচ করছি, সেটা অনর্থক নয়।” জানিয়ে দিলেন, আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আইটি বিভাগ খোলা হবে। তার পরে পর্যায়ক্রমে অন্য লাভজনক বিভাগ চালু হবে।

নীচ থেকে চোখ পিটপিট করে তাঁদের দেখে যাচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। বছরের পর বছর যাঁরা খালি আশ্বাস শুনেছেন আর এখানে-ওখানে খুদকুঁড়ো খুঁজে বেড়িয়েছেন। ডানলপ কারখানা ঘিরে হুগলির সাহাগঞ্জ, চুঁচুড়া, হুগলি, বাঁশবেড়িয়া, চন্দননগরের বিস্তীর্ণ এলাকার অর্থনীতি আবর্তিত হত এক সময়ে। সেই সব দোকান-বাজারও এখন ম্রিয়মান।

প্রায় ৩৯ বছর ডানলপে কাজ করেছেন সমীর পাল। বক্তৃতা শুনতে-শুনতে নিজের মনেই মাথা নাড়লেন তিনি “বুঝতে পারছি না, কী ভাবে কাজ চালু হবে। বিদ্যুতের কেব্ল পর্যন্ত কেটে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। যন্ত্রাংশ তো অর্ধেকই নেই!” তাঁর সহকর্মী হেমন্ত দাসও একমত, “কারখানার চিত্রটা দিনের পর দিন দেখেছি। এখন যা অবস্থা, তাতে উৎপাদন চালু হবে বলে বিশ্বাস হচ্ছে না।” আপনাদের চলছে কী ভাবে? হেমন্তবাবুর গলা প্রায় নিভে এল, “জনে-জনে বলতে খারাপ লাগে। বিশ্বাস করুন, খুব খারাপ অবস্থায় আছি আমরা।”

পার্থবাবু অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, “ফের যদি এখানে কোনও সমস্যা বা গণ্ডগোল হয়, তা হলে কিন্তু আমরা কারখানার গেটের বাইরে থাকব না। সরাসরি ভিতরে ঢুকে আসব। আর তখন কারখানা আমরাই চালাব।”

কত আশ্বাসই না আজ পর্যন্ত সাহাগঞ্জ শুনেছে। তাতে কি আর সোজা পথে চাকা গড়ায়?

dunlop sahagaunje Pawan K Ruia latest news online news latest news online
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy