আরও জল ছাড়ল দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে এখনও পর্যন্ত পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার থেকে প্রায় ৪৮ হাজার কিউসেক জল ছাড়া চলছে। এর মধ্যে পাঞ্চেত থেকে প্রায় ৩৫ হাজার কিউসেক এবং মাইথন থেকে প্রায় ১৩ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ফলে দামোদর নদ তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা।
জানানো হয়েছে, ঝাড়খণ্ডে টানা বৃষ্টির কারণে জলাধারে জলের চাপ বেড়েছে। সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত। এই বিপুল পরিমাণ জল দামোদর নদ বেয়ে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর ব্যারেজ হয়ে হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব বর্ধমানের দিকে প্রবাহিত হবে। ডিভিসি-র জল ছাড়ার ফলে ইতিমধ্যেই হুগলির খানাকুল, আরামবাগ এবং হাওড়ার আমতা, উদয়নারায়ণপুরের মতো এলাকাগুলি প্রায় প্লাবিত হওয়ার মুখে। রাজ্যের সেচ দফতরের তরফে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ, ধানবাদ, বোকারো-সহ উচ্চ দামোদর উপত্যকায় টানা বৃষ্টির জেরে পাঞ্চেত ও মাইথনে জলস্তর বেড়ে গিয়েছে। তা কমানোর জন্যই জল ছাড়া হচ্ছে। সেচ দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, দুর্গাপুর ব্যারেজে জলের চাপ বাড়লে সেখান থেকেও জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়তে পারে। ফলে আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে পরিস্থিতি। তবে, ডিভিসির এই পদক্ষেপ নিয়ে আবারও রাজ্য সরকারের সঙ্গে পূর্ব আলোচনা না করার অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, অতীতেও একাধিক বার ডিভিসির এ ভাবে জল ছাড়ার সমালোচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বন্যাকে ‘ম্যানমেড’ বলেও অভিহিত করেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক-শেষে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি ডিভিসি-র একতরফা ভাবে জল ছাড়ার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন। যদিও ডিভিসির তরফে এক কর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা যে পরিমাণ জল ছাড়ার জন্য নির্দেশ পান, সেটুকু জলই ছাড়া হয়। যে কমিটি এই নির্দেশ দেয়, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ঝাড়খণ্ড সরকার এবং ডিভিসি কর্তৃপক্ষ-সহ কেন্দ্রীয় জল কমিশনের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এই কমিটি জলাধারে জলের পরিমাণ এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বিচার করে সিদ্ধান্ত নেয় কোন জলাধার থেকে কতটা জল ছাড়া হবে। সেই সিদ্ধান্তের কথা ডিভিসিকে জানালে ডিভিসি শুধুমাত্র জল ছাড়ার কাজ করে। ফলে এই ভাবে দোষারোপের কোনও যুক্তি নেই!
তবে নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ইতিমধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নদীর জল বাড়তে শুরু করেছে। জল ঢুকছে চাষের জমি ও জনবসতিতে। ফলে পরিস্থিতির মোকাবিলায় তৎপর হয়েছে রাজ্য প্রশাসন। পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জেলাভিত্তিক প্রশাসনিক দায়িত্বও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। দশ জেলার প্রশাসনকে পরিস্থিতির উপর নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুরু হয়ে গিয়েছে হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব বর্ধমানের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াও।