Advertisement
E-Paper

মাইকের গেরোয় জোড়া কাঠগড়ায় কমিশন

হাজারো সমালোচনার মুখেও অ-মাইক হওয়ার ধার দিয়ে যাননি! উল্টে পুর নির্বাচনের প্রচারে মাইক বাজানোর অনুমতি দেওয়ার পরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘কেউ মামলা করতেই পারেন।’’ সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা চলাকালীন মাইকে পুরসভার ভোটের প্রচার নিয়ে বিতর্ক শেষ পর্যন্ত সেই আদালতেই গড়াল। এবং একই সঙ্গে মামলা দায়ের করা হল দু’-দু‌’টি ন্যায়ালয়— জাতীয় পরিবেশ আদালত ও কলকাতা হাইকোর্টে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৪

হাজারো সমালোচনার মুখেও অ-মাইক হওয়ার ধার দিয়ে যাননি! উল্টে পুর নির্বাচনের প্রচারে মাইক বাজানোর অনুমতি দেওয়ার পরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘কেউ মামলা করতেই পারেন।’’

সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা চলাকালীন মাইকে পুরসভার ভোটের প্রচার নিয়ে বিতর্ক শেষ পর্যন্ত সেই আদালতেই গড়াল। এবং একই সঙ্গে মামলা দায়ের করা হল দু’-দু‌’টি ন্যায়ালয়— জাতীয় পরিবেশ আদালত ও কলকাতা হাইকোর্টে।

মঙ্গলবার মূলত তিনটি প্রশ্নবাণে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বিঁধেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। তারা জানতে চেয়েছে:

• কমিশন ওই পরীক্ষার মধ্যে ভোট-প্রচারে মাইক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে কোন অধিকারবলে?

• কেনই বা এমন একটি নির্দেশিকা জারি করে তারা সাধারণ মানুষকে নির্বাচনী প্রচারের শ্রোতা হতে জোর করছে?

• সর্বোপরি আদালতের প্রশ্ন, ভোটের প্রচারে মাইক ব্যবহারের অনুমতি সংক্রান্ত ওই নির্দেশিকার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করা হবে না কেন?

অর্থাৎ নির্বাচনী প্রচারে মাইক বাজানোর অনুমতি দেওয়ার অধিকার কমিশনের আদৌ আছে কি না, পরিবেশ আদালত সেই মূলগত প্রশ্নটাই তুলে দিল। কলকাতায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি প্রতাপ রায়ের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চ এ দিন ওই সব প্রশ্নের জবাব চেয়েছে। সোমবার ওই আদালতে আবেদনপত্র দাখিল করে কমিশনের নির্দেশিকা প্রত্যাহারের নির্দেশ প্রার্থনা করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত।

কমিশনের ওই নির্দেশিকা বাতিল করার আবেদন নিয়ে মঙ্গলবারেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে পরিবেশ নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ সংস্থা সবুজ মঞ্চ। তাদের অভিযোগও ত্রিমুখী।

• সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা অল্প কয়েক জন দিচ্ছেন এবং সেই জন্য মাইক ব্যবহারে অসুবিধে নেই— এই মনোভাব দেখিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ওই পরীক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সবুজ মঞ্চের নব দত্ত ও বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়।

• কমিশন ওই নির্দেশিকা দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের জারি করা প্রাসঙ্গিক একটি নির্দেশের অন্য রকম ব্যাখ্যা দিয়েছে। যা করার এক্তিয়ার কমিশনের আদৌ নেই বলে আবেদনকারীদের অভিমত।

• সেই সঙ্গে আবেদনকারীদের বক্তব্য, নির্দেশিকায় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় আইন অদলবদল করে দেখিয়েছে কমিশন এবং সেটাও এক্তিয়ার-বহির্ভূত কাজ।

রাজনৈতিক দলগুলির ক্রমাগত চাপের মুখে গত ১ এপ্রিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন একটি নির্দেশিকা জারি করে দিল্লি বোর্ডের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার মধ্যেই পুরভোটের প্রচারে মাইক বাজানোর অনুমতি দেয়। কমিশনের এমন অনুমতি কতটা আইনসঙ্গত, সেই প্রশ্ন উঠেছে আগেই। রাজ্যের পরিবেশ দফতর এবং পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ২০১১ সালের এপ্রিলে জারি করা এক নির্দেশিকা বলছে, সব বোর্ড ও কাউন্সিলের পরীক্ষা শুরুর তিন দিন আগে থেকে পরীক্ষা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত মাইকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে যায় তখনকার বিরোধী দল তৃণমূল। হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, বিভিন্ন রাজ্যে ভোট পরিচালনার সময় কমিশনের উচিত, শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা মাথায় রাখা। বিশেষ করে খোলা জায়গায় যথেচ্ছ মাইক ব্যবহারের বিষয়টি। কারণ, তাতে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এই অবস্থায় ভোট-প্রচারে মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ায় আদালতের এবং সরকারি নির্দেশের অবমাননা করা হচ্ছে না কি?

অনুমতি দেওয়ার দিন থেকেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় বলে আসছেন, ‘‘সব দিক খতিয়ে দেখেই নির্দেশিকা জারি করেছি। কেউ মামলা করতেই পারেন।’’ আর এ দিন জোড়া মামলার পরে সুশান্তবাবু ‘নিয়ন্ত্রিত মাইক ব্যবহারের অনুমতি’ কথাটি ব্যবহার করেছেন। এবং সরাসরি রাজনৈতিক চাপের বিষয়টি স্বীকার না-করে তুলেছেন সব রাজনৈতিক দলের ‘অনুরোধ’-এর কথা। তিনি বলেন, ‘‘১০ এপ্রিল জাতীয় পরিবেশ আদালতে শুনানি হবে। ওই দিনই আমরা আমাদের বক্তব্য জানাব। সব ক’টি রাজনৈতিক দলের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষার্থী-সহ সকলের কথা বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রিত মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’’

কিন্তু জাতীয় পরিবেশ আদালতে আবেদনকারী সুভাষবাবু প্রশ্ন তুলেছেন, মাইক ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত ভাবে করা হচ্ছে, নাকি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে, সেটা দেখার উপযুক্ত সরকারি ব্যবস্থা এখানে আছে কি?

কমিশনের ওই অনুমতির জেরে ভুগতে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদেরই। সোম ও মঙ্গলবারের পরে আজ, বুধবার এবং কাল, বৃহস্পতিবারেও সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা রয়েছে। এর পরে পরীক্ষা আছে ১৩, ১৬, ১৭, ১৮ এবং ২০ এপ্রিল। এর মধ্যে ১৮ এপ্রিল কলকাতা পুরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। কমিশন ছাড়পত্র দেওয়ার পর থেকেই তারস্বরে মাইক বাজিয়ে ভোটের ধুন্ধুমার প্রচার চলছে রাজ্য জুড়ে। বিস্তর সমস্যায় পড়েছেন সিবিএসই-র পরীক্ষার্থীরা।

পরিবেশ আদালতে নিজের আবেদনে পরিবেশকর্মী সুভাষবাবু জানান, ভোটের প্রচারে কমিশন এ ভাবে মাইক ব্যবহারের ছাড়পত্র দেওয়ায় এক ধরনের ‘ভ্রাম্যমাণ শব্দদূষণ’ও ঘটছে। সেটা কী রকম?

সুভাষবাবু জানান, শুধু যে কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় আয়োজিত সভাতেই মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে, তা তো নয়। তার সঙ্গে সঙ্গে অটোরিকশায়, রিকশায় এবং অন্যান্য গাড়িতে মাইক বেঁধে পুরোদমে চলছে পুরভোটের প্রচার। মিছিল থেকেও স্লোগান দেওয়া হচ্ছে মাইকে। এতে ছড়াচ্ছে শব্দদূষণ।

পুরভোটের প্রচারে মাইক ব্যবহারের বিষয়টিকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন ওই পরিবেশকর্মী। তিনি পরিবেশ আদালতে জানান, পুর নির্বাচন হয় ওয়ার্ড-ভিত্তিক। সেখানে ভোটাদাতার সংখ্যা বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় অনেক কম। সেই জন্য এ ক্ষেত্রে ভোটারদের কাছে পৌঁছনোর বেশ কিছু সনাতন ও চিরাচরিত প্রথা আছে। ভোটারদের কাছে পৌঁছনোর জন্য ভোটের প্রচারে মাইক বা লাউডস্পিকার ব্যবহার করাটা মোটেই অপরিহার্য নয়।

election commission municipal election 2015 national green tribunal cbse board exam loudspeaker kolkata highcourt
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy