Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Ration Distribution Case

বালুর মদতে ভুয়ো চাষিদের নামের তালিকা তৈরি করে ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ আনিসুরদের! দাবি ইডির

ইডি সূত্রের খবর, আনিসুর দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। ফলে সে যে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েছিল, তার প্রমাণ আছে। এই মামলায় আর এক অভিযুক্ত বাকিবুর রহমানের আত্মীয় এই দুই ভাই।

(বাঁ দিকে) আনিসুর রহমান, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (মাঝে), আলিফ নুর(ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

(বাঁ দিকে) আনিসুর রহমান, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (মাঝে), আলিফ নুর(ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৪৬
Share: Save:

ভুয়ো চাষিদের নামের তালিকা তৈরি করে আনিসুর রহমান ওরফে বিদেশ এবং আলিফ নুর ওরফে মুকুল সরকারি ধান কেনার প্রায় ৪৫ কোটি টাকা সহায়ক মূল্য আত্মসাৎ করেছিল বলে আদালতে দাবি করল ইডি। রেশন দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আনিসুর ও আলিফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত দু’জনে সম্পর্কে ভাই। তাদের শুক্রবার বিচার ভবনের সিবিআই আদালতে পেশ করা হয়। সেখানেই এই টাকা আত্মসাতের দাবি করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী।

এই মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ইডি-র দাবি, তাঁর মদতেই টাকা হাতিয়েছিল আনিসুর এবং আলিফ। গত বছর এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন জ্যোতিপ্রিয়র যে গোপন চিঠি তদন্তকারীদের হাতে এসেছিল, সেখানেই এই দুই ভাইয়ের নাম ছিল বলে তদন্তকারীদের দাবি। ওই চিঠির সূত্রেই প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর আর এক ঘনিষ্ঠ তথা বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যকে ইডি
গ্রেফতার করেছিল।

ইডি সূত্রের খবর, আনিসুর দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। ফলে সে যে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েছিল, তার প্রমাণ আছে। এই মামলায় আর এক অভিযুক্ত বাকিবুর রহমানের আত্মীয় এই দুই ভাই। বাকিবুরের সংস্থার সঙ্গেও এই দুই ভাইয়ের বেআইনি আর্থিক লেনদেনের হদিস পাওয়া গিয়েছে।

রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তকারী অফিসার লিখিত ভাবে আদালতে জানিয়েছেন, শতাধিক ভুয়ো চাষির নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। সেই তালিকায় এই দুই ভাইয়ের পরিবারের সদস্যেরাও আছেন। আরও কিছু ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির নামও ঢোকানো হয়েছিল। সেই তালিকা দিয়েই সহায়ক মূল্যের সরকারি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। তাঁদের এ-ও দাবি, সহায়ক মূল্যের প্রায় ৪৫ কোটি টাকা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নিয়ন্ত্রণাধীন তিনটি সংস্থায় জমা করা হয়েছিল। তা থেকেই বোঝা যায় যে, লুটের টাকা প্রাক্তন মন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছিল।

ইডি সূত্রের দাবি, দুর্নীতির টাকা নানা ব্যবসা ও সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই দু’জনের চারটি চালকল ও আটাকলের হদিস পাওয়া গিয়েছে। তা ছাড়া, নিউ দিঘায় একটি বিলাসবহুল হোটেলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। অভিযুক্তদের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নথির ভিত্তিতে ওই সব সম্পত্তির হদিস পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি তদন্তকারী অফিসারদের। তাঁদের আরও দাবি, গত মঙ্গলবার তল্লাশি অভিযানে আনিসুর এবং আলিফের বাড়ি, অফিস এবং চাল-আটাকল থেকে নগদ ২৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল।

ইডি সূত্রের দাবি, রেশনের চাল পাচার করে, নিম্নমানের চাল এনে সেই চাল সরবরাহ করতেন আনিসুর এবং আলিফ। নিম্নমানের চাল পালিশ করে চকচকে করার যন্ত্র চালকলে বসানো হয়েছিল বলেও দাবি।

এ দিন এই দু’জনকে গ্রেফতার করা নিয়ে প্রশ্ন করেন বিচারক। তার জবাবে ইডি-র কৌঁসুলি ধীরাজ ত্রিবেদী জানান, জ্যোতিপ্রিয়ের চিঠি ছাড়াও সম্প্রতি প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসাবরক্ষকের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া কিছু নথিতেও এই দু’জনের নাম পাওয়া গিয়েছে। তাতে আর্থিক লেনদেনের উল্লেখও আছে। রেশন দুর্নীতিতে রাজ্য পুলিশের এফআইআর-এর সূত্রেই গ্রেফতার বলেও ইডি-র কৌঁসুলি জানান। তাঁর আরও অভিযোগ, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ন্যায্য মূল্যের আটাও বাজারে চড়া দামে বিক্রি করত অভিযুক্তেরা।

এ দিন ইডি ধৃতদের ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চায়। ধৃতদের তরফে জামিনের আর্জি হয়নি। ধৃত দুই ভাইকে ১০ দিনের জন্য কোর্ট ইডি হেফাজতে পাঠায়। ১২ অগস্ট পরবর্তী হাজিরা।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Ration Distribution Case TMC arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE