Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Recruitment Scam

কর্তা-দক্ষিণা ১০.৫ কোটি, কুন্তলের নামে পেশ করা চার্জশিটে দাবি ইডির

ইডি সম্প্রতি কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট আদালতে পেশ করেছে, তার ২৬ এবং ৩৮ নম্বর পাতায় রয়েছে এই দুর্নীতিতে প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্তাব্যক্তির ঘনিষ্ঠ যোগসাজশের খতিয়ান।

Kuntal Ghosh

কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট আদালতে পেশ করেছে ইডি। ফাইল চিত্র।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৫২
Share: Save:

কাদের ‘স্নেহের হাত’ নিয়োগ দুর্নীতির কুশীলবদের মাথায় ছিল, চক্রের ‘মাথা’ কারা, বাঁকা পথের কালো টাকা কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির ভাঁড়ারে ঢুকেছে— নিম্ন থেকে উচ্চ আদালত বার বার এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা প্রকাশ্যে বিশেষ কোনও নাম এখনও পর্যন্ত বলেনি। কখনও তারা বিচারককে বলেছে, “কেস ডায়েরি পর্যবেক্ষণ করুন, হুজুর। প্রকাশ্য এজলাসে নাম বলা সম্ভব নয়।” কখনও বা তারা উল্লেখ করছে বিভিন্ন চার্জশিটের কথা। যেমন, ইডি সম্প্রতি তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুব নেতা কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট আদালতে পেশ করেছে, তার ২৬ এবং ৩৮ নম্বর পাতায় রয়েছে এই দুর্নীতিতে প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্তাব্যক্তির ঘনিষ্ঠ যোগসাজশের খতিয়ান। সেই সব কর্তাকে কোটির অঙ্কে ‘দক্ষিণা’ দেওয়া হত বলে ইডি-র অভিযোগ।

চার্জশিটে ইডি-র দাবি অনুযায়ী, বিভিন্ন মাপের কিছু সরকারি অফিসার টাকার বিনিময়ে চাকরি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের প্রশ্রয় দিয়েছেন ‘উদার’ ভাবে। এবং সেই মদতের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের ‘দক্ষিণা’-ও নিয়েছেন তাঁরা। যেমন, ১০৪ পাতার ওই চার্জশিটে ইডি জানিয়েছে, কুন্তল বিভিন্ন সময়ে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অফিসার ও কাউন্সিলরদের প্রায় সাড়ে দশ কোটি টাকা দিয়েছিলেন।

ইডি লিখিত ভাবে আদালতে জানিয়েছে, কুন্তলের বয়ান অনুযায়ী কলকাতার বিকাশ ভবনের ছ’তলার আট নম্বর ঘরেই চলত ঘুরপথে নিয়োগের খেলা। ওই ঘরটি পার্থের এক ব্যক্তিগত সচিবের বলেও চার্জশিটে দাবি করেছে ইডি। চার্জশিটে তারা জানিয়েছে, কুন্তলের সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৭ সালে জুনের ১১ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত মোট চার দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টে পর্যন্ত ওই ঘরেই তালিকাভুক্ত অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল এবং সেই সঙ্গে চলেছিল নথিপত্র যাচাইয়ের কাজ।

তদন্তকারীদের দাবি, কুন্তল এবং হুগলি তৃণমূলের অন্যতম বহিষ্কৃত যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা দফতরের কর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে নিয়োগ দুর্নীতি চালিয়ে যান ঢালাও ভাবে। যদিও কুন্তলের গ্রেফতারির পরে শান্তনুর দাবি ছিল, দলীয় নেতা এবং এক এলাকায় থাকার সূত্রেই শুধু তিনি চিনতেন কুন্তলকে। এর বাইরে কুন্তলের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ ছিল না। যদিও চার্জশিটে ইডি-র তরফে দাবি করা হয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতিতে শান্তনুর সঙ্গে বেসরকারি বিএলএড ও ডিএলএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডলের যোগাযোগ করিয়ে দেন কুন্তলই। তদন্তকারীদের জেরার জবাবে কুন্তল দাবি করেছেন, চিনার পার্কের বহুতল আবাসনের তাঁর ৯০৩ নম্বর ফ্ল্যাটে তাপসের সঙ্গে শান্তনুর বৈঠক হয়েছিল। তার পর থেকে অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের বিষয়ে কসবায় কুন্তলের অফিসে শান্তনুর সঙ্গে বৈঠক করতেন তাপস। তদন্তকারীদের দাবি, কুন্তলের কসবার অফিস বছরখানেক আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

তদন্তকারীদের কাছে দেওয়া বয়ানে কুন্তল জানান, তাপসের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ৩২৫ জন অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ করার জন্য বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছিলেন শান্তনু। তদন্তকারীদের কাছে কুন্তলের বক্তব্য, শান্তনুর সঙ্গে তাপসের আলাপ ছিল আগে থেকেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে শান্তনুর সঙ্গে তাপসের কথাবার্তা হত। কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে তাপস ও শান্তনু তাঁর ফ্ল্যাটে প্রথম বৈঠক করেন। তার পর থেকে সমস্ত বৈঠক হত কসবার অফিসেই।

শান্তনু পুরো লেনদেনের বিষয়ে যুক্ত ছিলেন বলে তদন্তকারীদের কাছে অভিযোগ করলেও বিভিন্ন দিনে আদালতে যাতায়াতের পথে কুন্তল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নিয়োগ দুর্নীতিতে শান্তনুর যোগসাজশের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE