Advertisement
২২ মে ২০২৪
Abhishek Banerjee

সন্ধ্যা পর্যন্ত ইডির কাছে জমা পড়ল না অভিষেকের নথি, নির্দেশ না মানলে কী ব্যবস্থা নেবে ইডি? বলে দিল আদালত

নিয়োগ মামলায় হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার ইডির কাছে যাবতীয় নথি পেশ করতে বলেছিল তাঁকে।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:১৯
Share: Save:

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদি আদালতের নির্দেশ না মানেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারবে ইডি। মঙ্গলবার এ কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিল কলকাতা হাই কোর্ট।

নিয়োগ মামলায় অভিষেকের কাছে ইডি যে নথি চেয়েছিল, সেই সব নথি মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর জমা দেওয়ার কথা ছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের। কিন্তু মঙ্গলবার দিন গড়িয়ে সন্ধে নামলেও অভিষেকের তরফ থেকে কোনও নথি জমা পড়েনি ইডির দফতরে। এর পরেই হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের একক বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতের নির্দেশ না মানলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারবে ইডি।’’

অভিষেককে ইডির কাছে নথি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। গত ৫ অক্টোবর বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয়কুমারের বেঞ্চ ওই নির্দেশ দেয়। বিচারপতি সেন বলেছিলেন, ‘‘অভিষেককে ওই দিনই সব নথি জমা দিতে হবে। তার পর তাঁকে একটি ঘণ্টাও অতিরিক্ত সময় দেবে না আদালত। একই সঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চ তাদের নির্দেশে বলেছিল, ‘‘অভিষেকের জমা দেওয়া নথিতে ইডি যদি সন্তুষ্ট না হয়, তবে তাঁকে হাজিরা দিতে বলতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা।’’

এর পরই মঙ্গলবার হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে অভিষেকের সংস্থা লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস সংক্রান্ত মামলাটি ওঠে। বিচারপতি সিংহের কাছে তদন্তের রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই এবং ইডি। অভিষেকের রিপোর্ট নিয়ে কিছু ক্ষণ কথোপকথন হয় দু’পক্ষের মধ্যে।

ইডির আইনজীবী: এই মামলায় নতুন তদন্তকারী অফিসার ইতিমধ্যেই দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অভিষেক কোনও নথি জমা দেননি ইডির কাছে।

বিচারপতি সিংহ : হার্ড কপি (অর্থাৎ কাগজপত্র লিখিত নথি) না কি সফ্‌ট কপি (কম্পিউটারে ফাইল ) কী দিতে বলেছিল ডিভিশন বেঞ্চ?

ইডির আইনজীবী: ডিভিশন বেঞ্চে হার্ড কপি দেওয়ার কথাই বলা হয়েছিল। সফ্‌ট কপি দেওয়া হয়েছে কি না জানা নেই।

এর পরেই বিচারপতি সিংহ জানিয়ে দেন, আদালতের নির্দেশ না মানলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারবে ইডি। সে ক্ষেত্রে ইডির কাছে নথি জমা দেওয়ার জন্য ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী রাত ১২টা পর্যন্ত সময় রয়েছে অভিষেকের হাতে। তার মধ্যে নথি জমা দিতে না পারলে একক বেঞ্চের নির্দেশ অনুসারে অভিষেকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারবে ইডি।

মঙ্গলবার প্রাথমিকে শিক্ষক পদে ৯৪ জন বেআইনি ভাবে নিয়োগ পেয়েছে বলে হাই কোর্টে রিপোর্ট দিয়ে জানায় পর্ষদ। তারা স্বীকার করে নেয় নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে। পর্ষদের বক্তব্য, নথি খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে এই ৯৪ জন শিক্ষক টেট উত্তীর্ণ না হয়েই চাকরি পেয়েছেন। হাই কোর্টের নির্দেশ, তাঁদের নিয়োগ বাতিল নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে পর্ষদকে। আদালত জানায়, যোগ্য বঞ্চিতদের নিয়োগের ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে পর্ষদকে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, যাঁরা দুর্নীতির কারণে বঞ্চিত হয়েছেন তাঁদের নিয়োগ নিয়ে আদালত চিন্তিত। দীর্ঘ দিন ধরে তাঁরা চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন। কবে তদন্ত শেষ হবে কেউ জানে না। কারা দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছেন তার তদন্ত চলছে। এই সব আইনি জটিলতা কাটতে সময় লাগবে। তাই যোগ্যদের চাকরি দিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পর্ষদকে আদালত বলে, প্রাথমিকে কোন জেলায় কত শূন্যপদ তা জানাতে হবে। এ ছাড়া পর্ষদকে আগামী ৩ নভেম্বরের মধ্যে ২০১৬ এবং ২০২০ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্যানেল প্রকাশ করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। বিচারপতি সিংহের এজলাসে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই এবং ইডি। আগামী ৩০ নভেম্বর এই মামলার পরর্বতী শুনানি।

আগে যা হয়েছিল

নিয়োগ মামলায় হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক। ইডির হাজিরা এড়াতে চেয়ে এবং সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের ব্যাখ্যা চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। অভিষেকের যুক্তি ছিল, বেঞ্চ তাঁকে মামলায় না জুড়েই এমন সব নির্দেশ দিচ্ছে, যা সরাসরি তাঁর স্বার্থকে প্রভাবিত করবে।তাঁর সেই আবেদনের ভিত্তিতে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছিল হাই কোর্ট। গত বুধবার এবং বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি হয় হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানেই বিচারপতি সেন অভিষেকের আইনজীবী বলেন, ‘‘মাথায় রাখবেন, এটা কোনও সরাসরি তদন্ত নয়। কোর্টের নজিরদারিতে তদন্ত চলছে। তাই সিঙ্গল বেঞ্চ এটা করতে পারে। তদন্তের প্রয়োজনে তদন্তকারী সংস্থার কাছে জবাব চাইতেই পারে সিঙ্গল বেঞ্চ। এমনকি, কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত চললে আদালত যদি তদন্তকারী সংস্থার রিপোর্টে সন্তুষ্ট না হয়, তবে নতুন নির্দেশও দিতে পারেন বিচারপতি।’’ এই যুক্তিতেই সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি ডিভিশন বেঞ্চ। তার পরেই অভিষেককে ১০ অক্টোবর নথি পেশ করার নির্দেশ দেয় আদালত। বলে। নথিতে সন্তুষ্ট না হলে তারা আবার অভিষেককে ডেকে পাঠাতে পারবে। কিন্তু তলব করার আগে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা সময় দিতে হবে অভিষেককে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE