Advertisement
E-Paper

কাগজের নোটই ‘টোকেন’! নম্বর মিলিয়ে লেনদেন লিপ্‌স অ‍্যান্ড বাউন্ডসের, চার্জশিটে জানিয়েছে ইডি

চার্জশিটের ১০৮ নম্বর পৃষ্ঠায় ইডি দাবি করেছে, হর্ষবর্ধন কয়ান নামের এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ‘টোকেন’ হিসাবে নোটের ব্যবহারের কথা তারা জানতে পেরেছে। নম্বর মিলিয়ে টাকার লেনদেন করা হত।

‘টোকেনের’ মাধ্যমে টাকার লেনদেন হত, সেই টাকা যেত লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের অ্যাকাউন্টে, দাবি ইডির।

‘টোকেনের’ মাধ্যমে টাকার লেনদেন হত, সেই টাকা যেত লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের অ্যাকাউন্টে, দাবি ইডির। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

সারমিন বেগম

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৩৯
Share
Save

প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ই়ডি পঞ্চম অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দিয়েছে আদালতে। সেখানে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থা ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর নাম রয়েছে। ওই সংস্থার টাকা কোথায়, কী ভাবে লেনদেন হয়েছে, চার্জশিটে তা বিশদে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডির দাবি, নগদ টাকা বার বার হাতবদল হয়েছে। চার্জশিটে বলা হয়েছে, কাগজের নোটকে ‘টোকেন’ হিসাবে ব্যবহার করা হত। নোটের সিরিয়াল নম্বর মিলিয়ে টাকা দেওয়া-নেওয়া হত। সেই টাকা ঢুকত লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের অ্যাকাউন্টে। এই প্রক্রিয়ায় একাধিক ‘মিডলম্যানের’ সন্ধানও পেয়েছে ইডি। তাঁদের একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও চার্জশিটে জানিয়েছে তারা।

চার্জশিটের ১০৮ নম্বর পৃষ্ঠায় ইডি জানিয়েছে, হর্ষবর্ধন কয়ান নামের এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ‘টোকেন’ হিসাবে নোটের ব্যবহারের কথা তারা জানতে পেরেছে। ওই ব্যক্তি ‘কয়ান সিকিউরিটিস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর ডিরেক্টর। চার্জশিটে অভিযুক্তদের তালিকায় এই সংস্থার নাম রয়েছে ৩৭ নম্বরে। ইডির দাবি, তদন্তকারী আধিকারিকদের হর্ষবর্ধন জানিয়েছেন, লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের সঙ্গে তাঁর সংস্থার যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন মোহিত আগরওয়াল নামে এক ব্যক্তি। তাঁকে ‘মিডলম্যান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হর্ষবর্ধন তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন, টাকা দিতে অথবা নিতে মূলত দু’জনকে পাঠাতেন মোহিত। তাঁদের নাম গণেশ সাউ এবং মুকেশ আগরওয়াল। মধ্য কলকাতার ডালহৌসি (বিবাদী বাগ) এলাকার একাধিক জায়গা থেকে তাঁরা টাকা নিয়ে যেতেন। ইডি চার্জশিটে জানিয়েছে, কোথা থেকে টাকা নিতে হবে মোহিতই তা ফোন করে জানিয়ে দিতেন তাঁর কর্মচারীদের। ওই কর্মচারীদের হাতে থাকত একটি বিশেষ নোট। যাঁর কাছ থেকে টাকা নিতে হবে, ওই নোটের সিরিয়াল নম্বর তাঁকেও মোবাইলে পাঠিয়ে দিতেন মোহিত। দুই নম্বর মিলে গেলে টাকার লেনদেন সম্পূর্ণ হত। কখনও কখনও মোহিত নিজেও টাকা সংগ্রহ করতেন এই পদ্ধতিতে। ইডিকে এ সব তথ্য হর্ষবর্ধনই জানিয়েছেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।

চার্জশিটে জানানো হয়েছে, মোহিতকে একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। তিনি আবার তদন্তকারীদের কাছে পঙ্কজ আগরওয়াল নামে অন্য এক ব্যক্তির কথা বলেছেন। দাবি, পঙ্কজের মাধ্যমে হর্ষবর্ধনের সংস্থার সঙ্গে মোহিতের যোগাযোগ ঘটে। পঙ্কজ আবার তদন্তকারী আধিকারিকদের মুখোমুখি হয়ে সত্যেন্দ্রকুমার ঝুনঝুনওয়ালার নাম করেছেন। দাবি, লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ করিয়ে দেন ঝুনঝুনওয়ালা। চার্জশিটে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র নামও উল্লেখ করেছে ইডি। সুজয়কৃষ্ণ লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টর পদে ছিলেন। একাধিক ফর্মে তাঁর স্বাক্ষরও ছিল।

উল্লেখ্য, প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের নাম আগেই উঠে এসেছিল। ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিলেন অভিষেক। তাঁর বাবা এবং মা-ও ছিলেন সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর। এই সংস্থা যে তাঁরই, তা নিজেই জানিয়েছিলেন অভিষেক। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই সংস্থার কাজ ও ব্যবসা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন তিনি। সংস্থার কাজ বেশির ভাগটাই দেখাশোনা করতেন সুজয়কৃষ্ণ। ইডি জানিয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টর পদে ছিলেন ‘কাকু’। সংস্থায় তাঁর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ছিল। তিনি ছিলেন লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের ‘চিফ অপারেটিং অফিসার’ (সিওও)। সংস্থার আর্থিক দিকটি তিনিই দেখতেন। ২০২৩ সালের মে মাসে সুজয়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করে ইডি। তার আগে ওই সংস্থার দফতর, ‘কাকু’র বাড়ি ও অফিসেও হানা দিয়েছিলেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। সেই সময়ে মিলেছিল একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি। ইডি জানতে পেরেছে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের দফতরে প্রায়ই যেতেন ‘কাকু’। চাকরিপ্রার্থীদের বাছাই করা, তাঁদের নিয়োগ করার বিষয়ে মানিকের সঙ্গে তাঁর আলোচনাও হত বলে দাবি ইডির। লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের যাবতীয় লেনদেনের সঙ্গে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির টাকার যোগ থাকতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ওই তদন্তকারী সংস্থা।

Primary Recruitment Case ED West Bengal Recruitment Bengal Recruitment Case West Bengal Recruitment Case chargesheet

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}