E-Paper

চার্জশিটে বিদ্ধ মন্ত্রী চন্দ্রনাথও

সম্প্রতি প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় বিচার ভবনে সিবিআই বিশেষ আদালতে চন্দ্রনাথকে অভিযুক্ত দায়ের করে ষষ্ঠ সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি। ওই মামলায় চন্দ্রনাথ ৫৫তম অভিযুক্ত বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:৫২

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রায় ১২ কোটি ৭২ লক্ষ টাকার বেআইনি আর্থিক লেনদেনে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ জড়িত বলে আদালতে নথি-সহ চার্জশিট পেশ করে জানাল ইডি। সেই সঙ্গে মন্ত্রী এবং তাঁর স্ত্রী ও দুই পুত্রের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন কয়েক কোটি টাকা আমানতের হদিস মিলেছে বলেও দাবি তদন্তকারীদের। শনিবার সন্ধ্যায় এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি একটি কথাও বলব না।’’

সম্প্রতি প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় বিচার ভবনে সিবিআই বিশেষ আদালতে চন্দ্রনাথকে অভিযুক্ত দায়ের করে ষষ্ঠ সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি। ওই মামলায় চন্দ্রনাথ ৫৫তম অভিযুক্ত বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিনি এখন অন্তর্বর্তিকালীন জামিনে রয়েছেন। মঙ্গলবার মামলারশুনানি রয়েছে।

তদন্তকারী অফিসারের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতি চক্রের সঙ্গে জড়িত দুই অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ ও তাপস মণ্ডল লিখিত বয়ানে জানান, চন্দ্রনাথ অযোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা তাঁদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। ইডির দাবি, তাপস বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি ছিলেন। চন্দ্রনাথ রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী থাকাকালীন ওই সংগঠনের অনুষ্ঠানে যেতেন।

চার্জশিটে মামলার তদন্তকারী অফিসারের দাবি, ১৫৯ জন অযোগ্য প্রার্থীর নামের একটি তালিকা ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের নিউ টাউনের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল। চন্দ্রনাথ ওই ১৫৯ জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। মামলার তদন্তকারী অফিসারের দাবি, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে ৮-১০ লক্ষ টাকা নিয়ে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

তদন্তকারী অফিসারের দাবি, ২০১৬ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে চন্দ্রনাথ, তাঁর স্ত্রী কুন্তলা, দুই ছেলে শুভজিৎ ও সৌম্যজিতের নামে থাকা আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে বিপুল টাকার লেনদেন হয়েছে। চন্দ্রনাথের স্ত্রীর নামে থাকা একটি নির্মাণ সংস্থার মাধ্যমেও প্রায় দু’আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল বলে দাবি। তাদের তৈরি ফ্ল্যাট বিক্রি বাবদ অন্তত দু’কোটি টাকা মন্ত্রীজায়ারব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিলবলেও দাবি।

মামলার তদন্তকারী অফিসারের দাবি, ২০২৪-এ চন্দ্রনাথের বোলপুরের নায়েকপাড়ার বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে ৪১ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছিল। তখন চন্দ্রনাথ, তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মন্ত্রীর স্ত্রী, ছেলেরালিখিত বয়ানে জানান, নগদ টাকা বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ব্যবহারচন্দ্রনাথই দেখাশোনা করতেন। চার্জশিটের ২৯ থেকে ৪৫ নম্বর পাতায় চন্দ্রনাথ ও তাঁর পরিজনের গোলমেলে আয় ও সম্পত্তির পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন মামলার তদন্তকারী অফিসার।

আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ব্যাঙ্ক আমানত ও সম্পত্তির বিষয়ে চন্দ্রনাথ পারিবারিক কৃষিকাজ, বীরভূম জেলায় নানা সম্পত্তি কেনা-বেচার দালালির আয়ের কথা বলেন বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। তবে কোনও নথি তিনি পেশ করতে পারেননি বলেও দাবিতদন্তকারীদের। একাধিকবার তলব করা সত্ত্বেও তদন্তকারীদেরমুখোমুখিও হননি চন্দ্রনাথ। ২০১৬ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে চন্দ্রনাথ ও তাঁর পরিজনের নামেআয়করে কারচুপির তথ্যও উঠে আসে বলে দাবি। চন্দ্রনাথ তখন জরিমানা দিয়ে নিস্তার পান বলে তদন্তেউঠে এসেছে।

ইডির এক কর্তা বলেন, ‘‘চন্দ্রনাথ ও তাঁর পরিজনের নামে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক আমানত বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরুকরা হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chandranath Singha ED Primary Recruitment Case

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy